ট্রাম্প, ফেইসবুক, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা; আসলে কী ঘটেছে?

ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডেটা অপব্যবহার নিয়ে ইতোমধ্যে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে এই সোশাল জায়ান্ট আর ডেটা বিশ্লেষণা প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। সমালোচনার মুখে উভয় প্রতিষ্ঠানই কোনো অন্যায় করার কথা অস্বীকার করেছে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2018, 11:10 AM
Updated : 20 March 2018, 11:10 AM

ব্যবহারকারীদের ডেটা অপব্যবহার করে ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে নানা অভিযোগ আর ব্যাখ্যা থাকলেও বিষয়টি এখনও প্রমাণিত নয়।

পুরো বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’র বিরুদ্ধে কীভাবে এলো অভিযোগ?

চ্যানেল ৪ নিউজ তাদের এক প্রতিবেদককে ডেটা বিশ্লেষণা প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে পাঠায়। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর জয়ী হওয়ার জন্য সহায়তার কৃতিত্ব পাওয়া কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা-এর কাছে ছদ্মবেশে যান ব্রিটিশ টিভি চ্যানেলটির ওই প্রতিবেদক। তিনি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বলেন তিনি শ্রীলংকার একজন ব্যবসায়ী, তার চাওয়া হচ্ছে স্থানীয় একটি নির্বাচন প্রভাবিত করা। 

এমন গ্রাহক পেয়ে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’র প্রধান অ্যালেকজান্ডার নিক্স কীভাবে তার প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের প্রচারণার মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্মানহানি করতে পেরেছে তার উদাহরণ দেখানো শুরু করেন। এসব উদাহরণের মধ্যে যৌনকর্মীদের দিয়ে মুখোমুখি করানো থেকে শুরু করে ক্যামেরায় ঘুষ নেওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে এমন নাটক সাজানোর কথাও বলা হয়। 

তবে, চ্যানেল ৪ নিউজ-এর ডকুমেন্টারিতে করা দাবিগুলো অস্বীকার করেছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। তাদের দাবি, এই ডকুমেন্টারি “এডিট করা” ও “একেবারেই শুধু ওই আলাপচারিতার প্রকৃতি তুলে ধরতে এটি আগে থেকে ঠিক করা ছিল।” এই আলাপচারিতা প্রতিবেদক নিজে চালিয়ে নিয়ে গিয়েছেন বলেও দাবি করা হয়।    

নিক্স বলেন, “আমি অবশ্যই জোর দিয়ে বলতে চাই যে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ফাঁদে ফেলা, ঘুষ বা তথাকথিত ‘মধুর ফাঁদ’ ফেলায় সম্পৃক্ত নয়, আর এটি কোনো উদ্দেশ্যেই কোনো অসত্য কনটেন্ট ব্যবহার করে না।”

ফেইসবুকের ভূমিকা কী?

২০১৪ সালে ফেইসবুক এক কুইজে ব্যবহারকারীদেরকে তাদের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পাবে এমন নানা প্রশ্ন করে। এই কুইজটি বানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ-এর শিক্ষক অ্যালেকজান্ডার কোগান। যদিও, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কোনো সম্পর্ক নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।

এই কুইজটি সে সময় প্রচলিত অ্যাপ আর গেইমগুলোর মতোই ছিল। এই কুইজে যিনি অংশ নিতেন শুধু তারই নয়, তার বন্ধুদের ডেটাও সংগ্রহ হতো এতে। অবশ্য পরে ফেইসবুক ডেটা ডেভেলপারদের এই উপায়ে ডেটা সংগ্রহ করতে পারার পরিমাণ বদলে দিয়েছে।  

কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কোনো অন্যায় কার্যক্রম নিয়ে সর্বপ্রথম যিনি মুখ খোলেন তাকে ‘হুইসেলব্লোয়ার’ বলা হয়। ফেইসবুকের ডেটা যে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে সেক্ষেত্রে হুইসেলব্লোয়ার ছিলেন ক্রিস্টোফার উইলি। এক সময় কেমব্রিজ অ্যানালিটকায় কাজ করা উইলি জানান, এই কুইজে অংশ নিয়েছিলেন ২.৭ লাখ মানুষ। আর প্রায় পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই বন্ধুদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তাদের ডেটা সংগ্রহ করা হয়। এই পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর অধিকাংশই ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। 

উইলি’র দাবি, এই ডেটা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’র কাছে বিক্রি করা হয়। এরপর তা ব্যবহার করা হয় ট্রাম্প সমর্থনের প্রচারণায়। 

ট্রাম্পের প্রচারণায় দেওয়া যে কোনো সেবায় এই ডেটার কোনো অংশ ব্যবহার করার কথা অস্বীকার করেছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা।  

ফেইসবুকের শর্ত কী বলে?

ওই সময় ফেইসবুকের অবকাঠামো ব্যবহার করেই এই ডেটা সংগ্রহ করা হয় আর অন্যান্য অনেক ডেভেলপার এই সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু ডেটা অন্য কারও সঙ্গে শেয়ার করার অনুমতি ছিল না।

এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এই ডেটা যে ট্রাম্প-এর নির্বচানী প্রচারণায় ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে ওই কুইজে সরাসরি অংশ নেওয়া কারও কোনো ধারণাই ছিল না। 

ফেইসবুক-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা যখন তাদের নীতিমালা লঙ্ঘনের বিষয়ে জেনেছে তখন তারা অ্যাপটি সরিয়ে নেয়। সেই সঙ্গে এই ডেটা মুছে ফেলা হয়েছে নিশ্চিত করতেও দাবি জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’র দাবি, তারা ফেইসবুক বলার পরই ওই ডেটা মুছে ফেলেছিলেন আর এই ডেটা কখনও তারা ব্যবহার করেনি।

ডেটা সত্যিই পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছিল কিনা সে তথ্য বের করতে চায় ফেইসবুক আর ইউএস ইনফরমেশন কমিশনার। কিন্তু উইলি’র দাবি তা করা হয়নি। 

সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া কী?

বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই ঘটনার খবর প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটররা ফেইসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গক-কে ফেইসবুক কীভাবে ব্যবহারকারীদের ডেটা সুরক্ষা দেয় তা কংগ্রেসের সামনে ব্যাখ্যা করতে আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট বলেছে, এই ডেটা অপব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে তদন্ত চালাবে তারা।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বলেন, এই ঘটনায় তিনি ‘খুবই উদ্বিগ্ন’।

আরও খবর-