শুক্রবার ফেইসবুকের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বিভিন্ন পত্রিকার খবরে দেখা যায়, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা-কে ফেইসবুকের ডেটা অ্যাকসেস করতে দেওয়া হয়েছিল আর তারা হয়তো পরবর্তীতে এই ডেটা মুছেনি।
এই খবর প্রকাশের পর শনিবার মার্কিং কংগ্রেস থেকে ডাক পায় ফেইসবুক। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যমটিকে, খবর রয়টার্স-এর।
২০১৬ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ও পরে ফেইসবুকের বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে মার্কিন ভোটারদের রাশিয়া প্রভাবিত করেছিল বলে ইতোমধ্যে অভিযোগ রয়েছে। আবার নতুন এই খবরের পর শুরু হওয়া নজরদারি প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদার জন্য বাড়তি হুমকি যোগ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক ডেমোক্রেটিক সিনেটর এমি ক্লোবুচার বলেন, “এটি স্পষ্ট যে এই প্লাটফর্মগুলো নিজেরা নিজেদের শৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।”
“তারা বলেন ‘আমাদের বিশ্বাস করুন’। সিনেট জুডিশিয়ারির সামনে মার্ক জাকারবার্গ-এর সাক্ষ্য দেওয়া উচিৎ”- নিজের কমিটি আর ফেইসবুক প্রধান নির্বাহীর কথা উল্লেখ করে এ মন্তব্য করেন তিনি।
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা আর গবেষকরা ফেইসবুকের সঙ্গে মিথ্যা বলেছেন আর এর নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন, আত্মপক্ষ সমর্থনে এটিই সমস্যার মূল কারণ বলে দাবি করেছে সোশাল জায়ান্টটি। কিন্তু এ নিয়ে শনিবার ফেইসবুককেই সরাসরি দোষ দিয়েছেন সমালোচকরা। এই প্রসঙ্গে ব্যবহারকারীদের পক্ষ থেকে জবাব আর নতুন নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা চাচ্ছেন তারা।
ব্যবহারকারীদের ডেটা অপব্যবহার করা হলেও তা ‘বেহাত’ বলে মানতে নারাজ ফেইসবুক। এর কারণ হচ্ছে ব্যবহারকারীরা অনুমতি দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে কোনো হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটলে তা অবশ্যই গ্রাহকদের কাছে প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
সিলিকন ভ্যালিতে ডেটা ব্যবহার বিষয়ে লিখেছেন ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড-এর আইন বিভাগের অধ্যাপক ফ্র্যাংক পাসকাল। তিনি বলেন, “ফেইসবুকের ডেটা অনুশীলনে ব্ল্যাক বক্স-এর ঢাকনা খুলে দেওয়া হয়েছে, আর এর ছবিটা ভালো নয়।”
পাসকাল-এর মতে, কারিগরিভাবে ডেটা বেহাত হয়নি বলে ফেইসবুকের দেওয়া জবাব মূল বিষয়টিকে বিভ্রান্ত করে। এক্ষেত্রে ডেটা ব্যবহারকারী প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন একটি কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
“এটিকে ভিন্ন নামকরণে তাদের চেষ্টা আমাকে অবাক করেছে। আমার মনে হয় তাদের কাছে থাকা এটিই শেষ উপায়।”
আরেক ডেমোক্রেটিক সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার বলেন, ইন্টারনেট বিজ্ঞাপনে নতুন নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা আনার প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে এই ঘটনা।
সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রিপাবলিকান দলীয় সিনেটরের সংখ্যা বেশি হলেও এক্ষেত্রে ক্লোবুচার আর ওয়ার্নার জয়ী হবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
শনিবার মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস আর ব্রিটিশ দৈনিক অবজারভার-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচ কোটিরও বেশি ফেইসবুক ব্যবহারকারীর ডেটা অন্যায়ভাবে কেমব্রিজ অ্যানালাইটকা’র হাতে গিয়েছে। ২০১৫ সালের শুরুতে এই ডেটা মুছে দিতে ফেইসবুকের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও তা মুছে দেওয়া হয়নি।
২.৭ লাখের মতো ব্যবহারকারী তাদের ডেটা একজন গবেষকের ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ফেইসবুক ওই গবেষককে অনুমতি দেওয়া ব্যবহারকারীদের সঙ্গে তাদের বন্ধুদের ডেটা নেওয়ারও সুযোগ দেয়। ওই গবেষক ফেইসবুকের নীতিমালার বাইরে গিয়ে এই ডেটা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে বিক্রি করে দেন।
এদিকে ট্রাম্পের এক প্রচারণা কর্মকর্তা বলেন, ভোটার তথ্যের জন্য তারা রিপাবলিকা ডেটা উৎসগুলো ব্যবহার করেছেন, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’র ডেটা নয়।
শুক্রবার এ নিয়ে একাধিক লিখিত বিবৃতি দিয়েছে ফেইসবুক। প্রতিষ্ঠানটি বলে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা আর গবেষকরা তাদের তাদের নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। এ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলে সামাজিক মাধ্যমটি।
জবাবে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’র পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা সব ডেটা মুছে দিয়েছে আর যে প্রতিষ্ঠান এটি সরবরাহ করছে তারাই এটি রাখার দায় নেবে।
ব্যবহারকারীদের প্রাইভেসিকে ফেইসবুক কতোটা গুরুত্ব দেয় তা বোঝাতে প্রতিষ্ঠানটি তাদের নীতিমালায় আরও পরিবর্তন আনতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন ফেইসবুকের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু বসওয়ার্থ। ২০১৫ সালে এই ডেটা মুছে ফেলার দাবি করার পর তা মেনে নেওয়ার লিখিত স্বীকৃতিতে নির্ভর করার কথা জানায় ফেইসবুক।