Published : 26 Apr 2024, 03:07 PM
স্মার্টফোনের ডেটা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি উন্নত এক ধরনের সুরক্ষা চিপ বানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)’র প্রকৌশলীরা।
এ নতুন ধরনের চিপ তৈরিতে তাদেরকে সাহায্য করেছে ‘এমআইটি-আইবিএম ওয়াটসন এআই ল্যাব’, যা স্মার্টফোন ডেটার নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টি মাথায় রেখে নকশা করা।
বিভিন্ন হেলথ-মনিটরিং অ্যাপ ও স্পর্শকাতর তথ্য নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের জন্য এই যুগান্তকারী উদ্ভাবনটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক বলে উঠে এসেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজের প্রতিবেদনে।
নতুন এ চিপ বিভিন্ন সাইবার নিরাপত্তা হুমকি ঠেকানোর পাশাপাশি শীর্ষ এআই মডেলগুলোর বিভিন্ন ডিভাইসে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করাও নিশ্চিত করে।
বর্তমানে হেলথ মনিটরিং বা অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন জটিল মেশিন-লার্নিং মডেলের ওপর নির্ভর করে থাকে আধুনিক স্মার্টফোন অ্যাপগুলো।
সাধারণত এ ধরনের মডেল সরাসরি স্মার্টফোনে চালানো কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। এর কারণ, এদের আকার ও কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে ক্রমাগত ডেটা আদানের বিষয়টি, যা এদেরকে ধীরগতির করে তোলে ও বিদ্যুত চাহিদাও বাড়িয়ে দেয়।
এ ছাড়া, ক্রমাগত ডেটা স্থানান্তরে সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
এমন ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য এক ধরনের ‘মেশিন-লার্নিং অ্যাক্সিলারেটর’ চিপ বানিয়েছে এমআইটি’র ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের স্নাতক শিক্ষার্থী মৈত্রেয়ী অশোকের নেতৃত্বাধীন গবেষণা দল, যা ব্যবহারকারীর ডেটার প্রাইভেসি বজায় রেখে সাধারণ সাইবার আক্রমণের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
ভার্চুয়াল রিয়ালিটি বা অটোনোমাস-ড্রাইভিংয়ের মতো এআই অ্যাপ্লিকেশনে এ চিপ বিশেষভাবে উপযোগী, যেখানে কম্পিউটেশনাল শক্তি ও নিরাপত্তার চাহিদা বেশি।
অশোকের তথ্য অনুসারে, এই প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তিতে ডিভাইসের খরচ কিছুটা বেড়ে গেলেও বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। আর, নিরাপত্তার প্রশ্নে এ খরচকে যুক্তিসঙ্গত বলা যায়।
“আমাদের লক্ষ্য ছিল, শুরু থেকেই সিস্টেমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করা, যা পরে যোগ করলে খরচ বেড়ে যেত,” ব্যাখ্যা করেন অশোক।
পাশাপাশি, বিভিন্ন কাজ কার্যকর উপায়ে পরিচালনার জন্য নতুন চিপ নকশার সময় থেকেই এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন তিনি।
কলরাডো অঙ্গরাজ্যের ডেনভার শহরে অনুষ্ঠিতব্য ‘আইট্রিপলই কাস্টম ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট কনফারেন্সে’ উপস্থাপন করা হবে এই গবেষণার পেপার। চিপটি কীভাবে ‘ডিজিটাল ইন-মেমরি কম্পিউট (আইএমসি)’ ব্যবহার করে সে বিষয়টিও তুলে ধরা হবে সেখানে।
এ প্রক্রিয়ায় ডিভাইসের মেমরিতে বিভিন্ন গাণিতিক হিসাব করার সুবিধা মিলবে, যা সংরক্ষিত হবে মেশিন-লার্নিং মডেলের বিভিন্ন অংশে। এতে করে স্থানান্তরিত ডেটার আকার ও সম্ভাব্য নিরাপত্তা লঙ্ঘনের প্রবণতা কমে আসবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
‘আইএমসি’ চিপ সাধারণত সাইবার হুমকির ঝুঁকিতে থাকে। তাই চিপে নিরাপত্তা বাড়াতে ত্রিমুখী কৌশল অবলম্বন করেছেন অশোক ও তার গবেষণা দলটি।
প্রথমে তারা এমন এক অভিনব নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করেছেন, যা ডেটাকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে। এতে করে আক্রমণকারীরা সহজেই তা সমন্বয় করতে পারে না, যার ফলে ‘সাইড-চ্যানেল’ নামে পরিচিত আক্রমণের ঝুঁকি কমে আসে।
দ্বিতীয়ত ‘বাস-প্রোবিং’ ধাঁচের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে, যেখানে হ্যাকাররা যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে সরাসরি ডেটা চুরি করার চেষ্টা করে, সেখানে গবেষকরা হালকা ধাঁচের এনক্রিপশন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, যা মূল চিপের বাইরে সংরক্ষিত ডেটাকে সুরক্ষিত রাখে। শুধু প্রয়োজনের ভিত্তিতে এই এনক্রিপশন ব্যবস্থা ডিক্রিপ্ট করা যায়।
তৃতীয়ত গবেষণা দলটি বিভিন্ন এমন এনক্রিপশন কি বানিয়েছেন, যা সরাসরি চিপের মধ্যে থাকে। এজন্য তারা ‘ফিজিকালি আনক্লোনএবল ফাংশন’ নামের একটি পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন।
এ পদ্ধতিতে প্রতি মিনিটে চিপের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বৈচিত্র্য ব্যবহার করে বিশেষ এক ধরনের কি তৈরি করা হয়, যা জটিল গাণিতিক হিসাব ছাড়াই চিপের নিরাপত্তা জোরদার করে।
এমন সাফল্যের পরও এইসব নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিদ্যুতের চাহিদা ও চিপের আকার বেড়ে যেতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে উৎপাদন খরচেও।
“ভবিষ্যতে আমরা চিপ তৈরি ও বিদ্যুৎ খরচের সঙ্গে নিরাপত্তার ভারসাম্য আনার দিকে নজর দেব। এক্ষেত্রে সামান্য আপোষ করলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও বাস্তবসম্মত সমাধান পাওয়া সম্ভব,” বলছেন অশোক।