Published : 14 Oct 2024, 06:35 PM
মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপের পানির নীচে গুহায় পাওয়া সেন্টিপিড বা বিছার মতো প্রাণীর বিষ মৃগী ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার মতো স্নায়বিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে পারে বলে উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।
এর আগেও চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহার হয়েছে সাপ, মাকড়সা, বিচ্ছু বা বিছা ও পোকামাকড় থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ।
তবে সামুদ্রিক প্রাণী থেকে পাওয়া বিষ নিয়ে এখনও সেভাবে গবেষণা হয়নি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
নতুন গবেষণায় এক রহস্যময় সামুদ্রিক রেমিপিড বা জলজ বিছার তৈরি বিষাক্ত পদার্থ নিয়ে গবেষণা করেছেন জার্মানির ‘গোয়েথে ইউনিভার্সিটি ফ্রাঙ্কফুর্ট’-এর গবেষকরা। রেমিপিড দেখতে সেন্টিপিড বা স্থলজ বিছার মতো। আর এরা বাস করে পানির নীচে গুহায়।
গবেষকরা বলছেন, ক্রাস্টেসিয়ান প্রজাতির একমাত্র প্রাণী হচ্ছে ‘রেমিপেড সিবালবানাস টিউলুমেনসিস’, এদের রয়েছে নিজস্ব এক বিষ সিস্টেম।
বিষ গ্রন্থির মাধ্যমে তৈরি এক শক্তিশালী নিউরোটক্সিন’কে সরাসরি শিকারের শরীরে প্রবেশের মাধ্যমে শিকারকে ধরাশায়ী করতে পারে বিছার মতো এমন প্রাণীরা। এদের বিষে থাকে প্রোটিনের ছোট অণু, যার সঙ্গে মিল আছে মাকড়সার বিষের প্রোটিনের।
গবেষকরা বলছেন, প্রাণীর দেহের এনজাইম, তাপ ও চরম মাত্রার বিভিন্ন পিএইচ মানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে এসব ছোট প্রোটিন অণু। একইসঙ্গে স্তন্যপায়ী প্রাণীদেহে পটাসিয়াম লবণ চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন চ্যানেলকেও বাধা দিতে পারে এটি।
“মৃগীরোগসহ মানুষের বিভিন্ন স্নায়বিক রোগের জন্য ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে এই বাধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,” বলেছেন এ গবেষণার সহ-লেখক বিয়র্ন ভন রিউমন্ট।
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সঙ্গে জড়িত মানবদেহের এমন স্নায়ু সংকেত সংক্রমণকেও বাধা দিতে পারে বিছার বিষে থাকা বিভিন্ন প্রোটিন অণু। এ আবিষ্কার ব্যথার চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতির দ্বার খুলে দিতে পারে বলে দাবি গবেষকদের।
গবেষকরা বলছেন, ওষুধ তৈরির জন্য সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ‘প্রয়োগঅযোগ্য সম্ভাবনা’র বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে গবেষণার এসব ফলাফলে।
“এসব রহস্যময় প্রোটিন অণুর উৎস ও কার্যকারিতা জানার ক্ষেত্রে আমাদের এ গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি দেবে। যার ওপর নির্ভর করে এগুতে পারে ভবিষ্যতের গবেষণা।”
‘অত্যন্ত সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রে’ বাস করে এসব বিছা, বলেন ড. ভন রিউমন্ট।
“আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে জীববৈচিত্র্য রক্ষার গুরুত্বও। কেবল এর পরিবেশগত তাৎপর্যের জন্যই নয়, বরং সম্ভাব্য প্রোটিন অণুর জন্যও, যা মানুুষের জন্য হতে পারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”