কোম্পানিটি চীনা গোয়েন্দা সংস্থার অংশীদার বা তাদের কাছে নিজের ক্লায়েন্টের তথ্য সরবরাহ করে কি না, ওই বিষয়ে মুখ খোলেননি হিকভিশনের মুখপাত্র।
Published : 18 Apr 2023, 06:49 PM
চীনের গুপ্তচরবৃত্তি পরিচালনার উদ্দেশ্যে মার্কিন সরকারের কাছে বিক্রি করা নিজস্ব পণ্য বেআইনিভাবে ব্যবহারের অভিযোগ নাকচ করেছে দেশটির সিসি ক্যামেরাসহ নানা ধরনের নিরাপত্তাসামগ্রীর নির্মাতা ‘হিকভিশন’।
সম্প্রতি পেন্টাগনের ফাঁস হওয়া নথিতে প্রকাশিত অভিযোগ সম্পর্কে বিবিসি’র কাছে নিজস্ব প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কোম্পানিটি। তবে, কোনো চীনা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্নগুলোর জবাব ছিল না এতে।
হিকভিশন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘সারভেইলেন্স ক্যামেরা’ নির্মাতা। আর চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
কোম্পানিটি এমন বিক্রেতাদের কাছে পণ্য সরবরাহ করে, যারা বিভিন্ন সরকার ও কোম্পানির কাছে সেই পণ্য বিক্রি করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এতে বিক্রেতার ‘ব্র্যান্ডিং’ থাকে। এই প্রক্রিয়া ‘হোয়াইট লেবেলিং’ নামে পরিচিত।
এটি একটি সাধারণ ব্যবসায়িক মডেল হলেও চীনা সরকারের সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক ও উইঘুর সম্প্রদায়ের নজরদারিতে নিজেদের পণ্য ব্যবহার নিয়ে তীব্র তদন্তের মুখে পড়েছে হিকভিশন।
এর আগে নিজেদের সরকারী সরবরাহ চেইন থেকে হিকভিশনের বিভিন্ন পণ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, নভেম্বরে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার জন্য শঙ্কার কারণ দেখিয়ে এই পদক্ষেপ আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে জাতীয়ভাবে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করেন দেশটির নিয়ন্ত্রকরা।
বিবিসির দেখা মার্কিন সরকারের ফাঁস হওয়া এক নথিতে হিকভিশনের বিরুদ্ধে ‘চীনা গোয়েন্দা সংস্থার অংশীদারিত্ব’ ও বিক্রেতাদের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক ব্যবহার করে ছদ্মবেশে সরকারী সরবরাহকদের কাছে পণ্য বিক্রির’ অভিযোগ ছিল।
ওই নথির তথ্য অনুসারে, কোম্পানিটি বিভিন্ন ‘ডিওডি (ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স)’ নেটওয়ার্ক দূর্বল করতে বেইজিংয়ের জন্য ভেক্টর তৈরি করছে’। আর মার্কিন সরকারের সরবরাহ চেইনে হিকভিশনের বিভিন্ন পণ্যের উপস্থিতি সম্ভবত অব্যাহত থাকবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদেশগুলোর বাজারে রপ্তানির প্রবেশাধিকার ধরে রাখার উদ্দেশ্যে কোম্পানির প্রচেষ্টাকে এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
ওই নথিতে আরও দাবি করা হয়, জানুয়ারি থেকে ‘হোয়াইট-লেবেল’ করা বিভিন্ন হিকভিশন পণ্য এখনও মার্কিন গ্রাহকদের জন্য পাওয়া যাবে।
অভিযোগগুলো নিয়ে বিবিসির বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে হিকভিশনের এক মুখপাত্র বলেন, নিজেদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য তারা কোনো আইন লঙ্ঘন করেনি, করেও না ও করবেও না’। আর অনুপযুক্ত লেবেলিং ঠেকানোর লক্ষ্যে নিজেদের ‘খুবই স্পষ্ট ও দীর্ঘস্থায়ী নীতিমালার’ বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।
কোম্পানি বলেছে, নিজেদের পণ্য সরবরাহ চেইন থেকে আলাদা রাখতে ও ‘তাদের ক্যামেরা কখনওই বেআইনি উপায়ে বিক্রি হয়নি’, সেটি নিশ্চিত করতে তারা অনেক বছর ধরেই মার্কিন সরকারের সঙ্গে কাজ করছে।
তবে কোম্পানিটি চীনা গোয়েন্দা সংস্থার অংশীদার বা তাদের কাছে নিজের ক্লায়েন্টের তথ্য সরবরাহ করে কি না, ওই বিষয়ে মুখ খোলেননি হিকভিশনের মুখপাত্র।
অতীতে কোম্পানিটি ক্রমাগত এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে যে তারা বিভিন্ন সরকারের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এর আগেও কোম্পানি বলেছে, তারা ব্যবহারকারীর ডেটায় প্রবেশ বা কোনো তৃতীয় পক্ষের কাছে সেটি স্থানান্তর করতে পারে না।
হিকভিশনের সবচেয়ে বড় অংশীদার চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ‘চায়না ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি গ্রুপ কর্পোরেশন’।
আর চীন গোটা দেশে বিশাল নজরদারি নেটওয়ার্ক তৈরি করায় দেশটির সরকারের বহু কোটি ডলারের চুক্তিও পেয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে আছে জিনজিয়ান অঞ্চল, যেখানে উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ রয়েছে দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে।
সমালোচকরা বলেন, সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে চীনের নিপীড়ন চালানোর ‘মদদ দিয়েছে’ হিকভিশন।
কোম্পানিটির বিরুদ্ধে সন্দেহ দিন দিন বেড়েই চলেছে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে যারা সাম্প্রতিক মাসগুলোয় হিকভিশনের উপস্থিতি বন্ধের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
নভেম্বরে নিরাপত্তা শঙ্কার কারণ দেখিয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সরকারী বিভাগে জানানো হয়, তারা যেন বিভিন্ন ‘সংবেদনশীল জায়গায়’ চীনা কোম্পানিগুলোর তৈরি সারভিলিয়েন্স ক্যামেরা স্থাপন বন্ধ করে। আর কর্মকর্তাদেরও বিদ্যমান যন্ত্রপাতি সরিয়ে ফেলার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে বলা হয়।
ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার সরকার বলেছে, নিজেদের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি থেকে চীনের তৈরি সারভেলিয়েন্স ক্যামেরা সরিয়ে ফেলবে তারা।