অবতরণ করার সময় ও উল্টে যাওয়ার আগে প্লেনটি ডানদিকে কাত হয়ে ঘন ধোঁয়ার মেঘের মধ্যে থেমে যায়। এ দুর্ঘটনায় প্লেনটির ডানপাশের ডানা ও লেজ কেটে গেছে।
Published : 24 Feb 2025, 03:43 PM
তুষারঝড়ের পর ঝড়ো আবহাওয়ার মধ্যে সোমবার কানাডার টরন্টো পিয়ারসন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়েতে থাকা অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডের মধ্যেই পিছলে ও উল্টে যায় ডেল্টা এয়ার লাইনসের এক যাত্রীবাহী প্লেন, যা ছিল এক নাটকীয় ও অভাবনীয় দৃশ্য।
ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৮ জন। ‘নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বিমানবন্দরে অবতরণের সময় কী ভুল হয়েছিল তা শনাক্তে কাজ করছেন তদন্তকারীরা। তবে এ ঘটনার ব্যাখ্যা পেতে যে পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞান কাজে লাগাতে হবে, সে বিষয়টি পরিষ্কার।
‘অ্যারোডায়নামিক ফোর্স’ বা বায়ুগতিবিষয়ক বলের ফলে ভারসাম্যহীনতার কারণে ‘ফ্লাইট ৪৮১৯’ উল্টে যায় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
‘অ্যারোডায়নামিক ফোর্স’ এমন ধরনের বল, যা কোনও বস্তু যখন বায়বীয় পদার্থের মধ্য দিয়ে চলাচল করে তখন তার উপর এই বলের প্রভাব পড়ে। এ ধরনের বল যে যে কারণে তৈরি হয়, তার মধ্যে তরল পদার্থ ও বস্তুর পৃষ্ঠের মধ্যে চাপ এবং ঘর্ষণের বিষয়টি রয়েছে।
“এখানে পদার্থবিদ্যার মূল বিষয়টি বেশ সহজ। কোনও প্লেনকে উড়তে, মসৃণভাবে অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য এর ওপর কাজ করা সব ধরনের বলকে অবশ্যই সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে,” বলেছেন ‘নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অরুণ বানসিল।
“তবে প্লেনের ক্ষেত্রে যে কোনো অক্ষের আশপাশে বল ভারসাম্যহীন হয়ে গেলে প্লেনটি তখন সেই অক্ষের আশপাশে ঘুরতে শুরু করবে।”
প্লেনটি অবতরণের ভিডিওতে দেখা গেছে, অবতরণ করার সময় ও উল্টে যাওয়ার আগে প্লেনটি ডানদিকে কাত হয়ে ঘন ধোঁয়ার মেঘের মধ্যে থেমে যায়। এ দুর্ঘটনায় প্লেনটির ডানপাশের ডানা ও লেজ কেটে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপলিস থেকে আসা ডেল্টা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটিতে ৮০ জন আরোহী ছিলেন। তবে সফলভাবে ৭৬ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু সদস্যকে প্লেনটি বের করে আনেন উদ্ধারকর্মীরা।
ঘটনাটি তদন্ত করছে ‘কানাডিয়ান ট্রান্সপোর্টেশন সেইফটি বোর্ড’, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেইফটি বোর্ড’ ও ‘ইউএস ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’। কর্তৃপক্ষ বলছে, প্লেনটির ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করেছেন তারা, যা দুর্ঘটনারকারণ জানতে সাহায্য করতে পারে।
এদিকে, দুর্ঘটনার সময় টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জটিল অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করেছে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ‘ফ্লাইটরেডার২৪’। ওয়েবসাইটটির তথ্য বলছে, ওই সময়ে বিমানবন্দরে ‘ঝড়ো হাওয়া ও তুষারপাতের’ মতো পরিবেশ ছিল।
শুরুতে টরন্টোর দমকল বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, “রানওয়ে শুকনো ছিল ও ক্রসউইন্ড-এর মতো পরিস্থিতি ছিল না রানওয়েতে।”
ক্রসউইন্ড হচ্ছে এক ধরনের আড়াআড়ি বাতাস, যা বিমানের ফ্লাইট পাথের পাশ থেকে আসে। এসব বাতাস মাঝেমধ্যে প্লেন অবতরণের কাজটিকে পাইলটের জন্য জটিল করে তুলতে পারে।
বানসিল বলেছেন, অবতরণের সময় বিমানটির ডান দিকে হেলে পড়ার সঙ্গে ওই সময়ে বাতাসের তীব্রতার সম্পর্ক থাকতে পারে।
“হঠাৎ দমকা হাওয়ার কারণে প্লেনের এক ডানার উপরের দিকে ওঠার শক্তি অন্য ডানার চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। ফলে প্লেনটি উল্টে যেতে পারে। প্লেনের একটি ডানা ভেঙে গেলে বা পড়ে গেলেও একই রকম প্রভাব পড়বে,” বলেছেন বানসিল।
“তুষার বা বরফের টুকরায় আঘাত লাগলেও প্লেনটি কাত হয়ে যেতে ও এটিকে উল্টে যেতে সাহায্য করতে পারে। তবে রানওয়ে পরিষ্কার ছিল বলে উল্লেখ রয়েছে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে।”