নাসা দুই বছরের মধ্যেই আবারও মানুষকে চাঁদে ফেরত পাঠাতে পারে। তবে, এবারে প্রকল্পের খরচ হতে হবে অনেক কম।
Published : 24 Feb 2024, 01:49 PM
মার্কিন শহর হিউস্টনভিত্তিক ‘ইনটিউটিভ মেশিনস’ নামের ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানিটি প্রথম বাণিজ্যিক মহাকাশযান ‘ওডিসিয়াস’ সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস গড়েছে, জন্ম দিয়েছে তিনটি ‘প্রথম’-এর।
অর্ধ শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম চাঁদের পৃষ্ঠে নামা, ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানের এবারই প্রথম আর চাঁদের দুর্গম দক্ষিণ প্রান্তের এত কাছে এই প্রথম।
যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে অন্য কয়েকটি দেশ এরইমধ্যে চাঁদে অবতরণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও সম্প্রতি জাপান। চাঁদে যাওয়া নিয়ে এই নতুন শরগোলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রই বরং একটু দেরি করে ফেলেছে বলে এক প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ।
এবারের আগে, আমেরিকা যখন অ্যাপোলো প্রোগ্রামের মাধ্যমে সর্বশেষ চাঁদে গিয়েছিল, ৫ লাখ কর্মী নিয়োগ করেছিল তারা। পাশাপাশি, অন্তত এক দশক ধরে দেশটির বার্ষিক জিডিপি’র আড়াই শতাংশ ব্যবহার হয়েছিল সে প্রকল্পে।
নাসা দুই বছরের মধ্যেই আবারও মানুষকে চাঁদে ফেরত পাঠাতে পারে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। তবে, এবারে প্রকল্পের খরচ হতে হবে অনেক কম।
ঠিক এখানেই প্রাইভেট বা ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর ভূমিকা রয়েছে। সর্বশেষ চাঁদের অভিযানে ইনটিউটিভ মেশিনস নামের প্রতিষ্ঠানটিকে বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন যন্ত্রের একটি পেলোড নেওয়ার জন্য ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছিল।
এটি নাসার জন্য ভালো দাম হলেও কোম্পানিটির জন্য ছিল চিন্তার বিষয়। খরচ কমাতে থ্রিডি প্রিন্টের রকেট ইঞ্জিন ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন উদ্ভাবন করতে হয়েছে তাদের।
পাশাপাশি, স্পেসএক্স ও ব্লু অরিজিনের মতো কোম্পানিগুলোর নতুন উদ্ভাবনে, পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি স্যাটেলাইট স্থাপন করা অনেক সস্তা হয়ে গিয়েছে। আর বেসরকারি কোম্পানিগুলো একটি বাস্তবসম্মত দামে মানুষ ও যন্ত্রপাতি চাঁদে পাঠিয়ে এ ক্ষেত্রটিও সস্তা করে তুলতে পারে বলে আশার প্রকাশ রয়েছে প্রতিবেদনে।
চাঁদের প্রতি আবারও আগ্রহ জাগার অন্যতম কারণ পানি। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে স্থায়ী ছায়ায় ঢাকা গর্তগুলোতে তাপমাত্রা মাইনাস ২৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মতো। আর ভাল ইঙ্গিত রয়েছে বরফ আকারে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকতে পারে সেখানে। এ কারণেই, ‘ওডিসিয়াস’ যানটি সে অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে।
পানি পাওয়া গেলে মানুষ চাঁদে দীর্ঘদিনের অভিযানে যেতে পারবে। এটি মহাকাশচারীদের পানির চাহিদা মেটাতে পারবে। এ ছাড়া, পানির অণুকে বিভক্ত করলেই পাওয়া যাবে শ্বাস নেওয়ার অক্সিজেন ও রকেট জ্বালানী তৈরির হাইড্রোজেন।
তবে, যতক্ষণ না রোবোটিক মহাকাশযান ও রোভারগুলো আসলেই গর্তে প্রবেশ না করছে ততক্ষণ এটি স্পষ্টভাবে বোঝা যাবেনা যে সেখানে কতটা পানি রয়েছে ও সেটা কতটা সহজে সংগ্রহ করা যাবে।
ওডিসিয়াস এ কাজ না করলেও পাথর, পাহাড় ও ঢালে আবৃত বিপজ্জনক দক্ষিণ মেরুর ন্যাভিগেশনাল এইড বা চলাচলের উপায় পরীক্ষা করছে যা নিরাপদে অবতরণ করার জন্য প্রয়োজন হবে। এর আগের সব মিশনের অর্ধেকই ব্যর্থতায় শেষ হয়েছে। তবে, এ কাজের ফলে ভবিষ্যতের অবতরণগুলো আর বাজি ধরার মতো হবে না বলে প্রতিবেদনে লিখেছে স্কাই নিউজ।
এই অবতরণের সাফল্য আরও মহাকাশযান নিয়ে আসবে। এ বছর এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি মিশন পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
গ্রিক পৌরাণিক কাহিনিতে ওডিসিয়াস ছিলেন একজন জ্ঞানী, সাহসী নায়ক যিনি একটি দুর্গম যাত্রা করেছিলেন। ওডিসিয়াস মহাকাশযান সম্পর্কেও একই কথা বলা যেতে পারে কারণ এটির হাত ধরেই চাঁদের অভিযানের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হল।