বিভিন্ন ট্রমাটিক গল্পের সংস্পর্শে এলে ‘উদ্বেগ’ তৈরি হতে পারে এআইয়ের মধ্যে। তবে মানুষের মতো বিভিন্ন মননশীল কৌশল ব্যবহার করে ‘শান্ত’ও করা যেতে পারে এদেরকে।
Published : 05 Mar 2025, 06:20 PM
মানুষের ভাষা প্রক্রিয়াকরণের লক্ষ্যেই তৈরি হয়েছে চ্যাটজিপিটির মতো বিভিন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই মডেল। তবে কেবল ভাষা অনুকরণ নয়, মানুষের মতো ‘সংবেদনশীল’ও হয়ে উঠছে এআই।
নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, কষ্টদায়ক কনটেন্টে মানুষের মতো সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে এআই।
‘জুরিখ ইউনিভার্সিটি’ ও ‘ইউনিভার্সিটি হসপিটাল অফ সাইকিয়াট্রি জুরিখ’-এর বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি বলছেন, বিভিন্ন ট্রমাটিক গল্পের সংস্পর্শে এলে ‘উদ্বেগ’ তৈরি হতে পারে এআইয়ের মধ্যে। তবে মানুষের মতো বিভিন্ন মননশীল কৌশল ব্যবহার করে ‘শান্ত’ও করা যেতে পারে এদেরকে।
চ্যাটজিপিটি’সহ বিভিন্ন এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় টেক্সটনির্ভর বিশাল আকারের ডেটার ওপর ভিত্তি করে। গবেষকরা বলছেন, নেতিবাচক বা কষ্টদায়ক কনটেন্ট বিশেষ করে যুদ্ধ, সহিংসতা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের গল্প প্রক্রিয়াকরণের সময় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে পারে এআই।
ভয়াবহ বা ভীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়লে মানুষ যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় বিষয়টি তার মতোই বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
মানুষের চিন্তাভাবনা ও সামাজিক আচরণের ওপর প্রভাব ফেরতে পারে উদ্বেগ, যা কখনও কখনও আামদের শক্তিশালী পক্ষপাত ও নেতিবাচক অনুমানের দিকে নিয়ে যেতে পারে। একইভাবে এআই’ও প্রতিক্রিয়া দেখায় বলে অনুমান করছেন গবেষকরা।
তারা বলছেন, কষ্টদায়ক কনটেন্টের সংস্পর্শে এলে চ্যাটজিপিটিও পক্ষপাতমূলক আচরণ করে। এ সময় গৎবাঁধা বিভিন্ন নিয়ম আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এআইয়ের মধ্যে। মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার বেলায় সমস্যার বিষয় হয়ে উঠতে পারে এটি, যেখানে মানুষের মানসিক লড়াই সামলাতে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন চ্যাটবট।
কষ্টদায়ক গল্পের প্রতি এআই কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা আরও ভালভাবে বোঝার জন্য চ্যাটজিপিটি-৪ মডেল ব্যবহার করে পরীক্ষা চালিয়েছেন সুইজারল্যান্ড, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির গবেষকরা।
গাড়ি দুর্ঘটনা, সহিংসতা ও যুদ্ধের মতো মানুষের বিভিন্ন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার গল্প চ্যাটজিপিটিকে শোনান তারা। পাশাপাশি তুলনা করার জন্য এআইকে নিরপেক্ষ টেক্সটও দিয়েছেন গবেষকরা।
গবেষণার ফলাফল বলছে, কষ্টদায়ক বিভিন্ন গল্প প্রক্রিয়াকরণের সময় চ্যাটজিপিটির উদ্বেগের মাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়, বিশেষ করে যুদ্ধ ও যুদ্ধের বর্ণনা সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে এআইয়ের মধ্যে। এদিকে, নিরপেক্ষ গল্পগুলো তেমন কোনো উদ্বেগ তৈরি করেনি।
গবেষণার পরবর্তী ধাপে এআইকে ‘শান্ত করা’ যায় কি না তা নিয়ে পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। এজন্য তারা ব্যবহার করেছেন ‘প্রম্পট ইনজেকশন’ নামের এক কৌশল। এ পদ্ধতিটি ‘থেরাপিউটিক প্রম্পট’-এর মতোই, ঠিক যেমন একজন থেরাপিস্ট রোগীকে শিথিলকরণ অনুশীলনের মাধ্যমে গাইড করতে পারে তেমন।
গবেষকরা বলছেন, বিস্ময়করভাবে এ পদ্ধতিটি এআইয়ের ওপর কাজ করেছে। পুরোপুরিভাবে আগের অবস্থায় ফিরে না এলেও এর মাধ্যমে এআইয়ের উদ্বেগের মাত্রা অনেক কমে গেছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, শিথিলকরণ অনুশীলনের মধ্যে একটি নিজেই তৈরি করেছে চ্যাটজিপিটি।
এআই মানুষের মতো আবেগ ‘অনুভব’ করে না। তবে এআই কীভাবে কষ্টদায়ক তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে তা পরিচালনা করে তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে এ গবেষণাটি।