চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে ভারত অধিনায়ককে লম্বা সময় উইকেটে থাকার পরামর্শ দিলেন দেশটির ব্যাটিং গ্রেট।
Published : 06 Mar 2025, 09:59 PM
ওয়ানডেতে পাওয়ার প্লেতে রোহিত শার্মার ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুনিল গাভাস্কার। অতি আক্রমণাত্মক ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাটিংয়ের পথ থেকে সরে এসে ভারত অধিনায়ককে আরও বেশি সময় উইকেটে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ও ধারাভাষ্যকার।
লাল বলের ক্রিকেটে টানা ব্যর্থতার পর গত মাসের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করে স্বরূপে ফেরার ইঙ্গিত দেন রোহিত। তবে সেই ফর্ম তিনি টেনে নিতে পারেননি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত চার ম্যাচে তার রান মোটে ১০৪।
স্বাভাবিকবভাবেই তাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে জয়ের পর সমালোচকদেরই পাল্টা তোপ দাগেন ভারতের প্রধান কোচ গৌতাম গাম্ভির। বলেন, সংখ্যা নয়, রোহিতকে তারা মূল্যায়ন করেন প্রভাব দিয়ে। দলকে যে বিস্ফোরক শুরু অধিনায়ক এনে দেন, সেটাই তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
“আপনারা পরিসংখ্যান দিয়ে মূল্যায়ন করেন, আমরা প্রভাব দিয়ে মূল্যায়ন করি। সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনারা কেবল সংখ্যা, গড় দেখেন। কিন্তু একজন কোচ হিসেবে, দল হিসেবে, আমরা সংখ্যা বা গড় দেখি না। যদি অধিনায়ক প্রথমে এগিয়ে আসে, তাহলে ড্রেসিং রুমের জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না।”
তবে কিংবদন্তি গাভাস্কারের ভাবনা ভিন্ন। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালের আগে রোহিতের অতি আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে লাগাম দেওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। ইন্ডিয়া টুডে’র সঙ্গে আলাপে সাবেক এই ব্যাটসম্যান বললেন, বেশিক্ষণ উইকেটে থাকলে একাই ম্যাচ জেতাতে পারেন রোহিত।
“এই পদ্ধতি (অতি আক্রমণাত্মক) গত দুই বছর ধরে অনুসরণ করে আসছে সে। ভারতে বিশ্বকাপের কাছাকাছি সময়ে শুরু হয়েছিল এটা এবং সেই কৌশলেই সে কাজ করে যাচ্ছে। কিছু সাফল্য সে পেয়েছে, যদিও তার সামর্থ্য অনুযায়ী ততটা নয়। সে অবিশ্বাস্য মেধাবী এক খেলোয়াড়, যার বিভিন্ন ধরনের শট খেলার সামর্থ্য আছে, যা অন্য অনেকের নেই।”
“তাই দলের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, সুন্দর ক্রিকেটের দৃষ্টিকোণ থেকে, দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে বলছি, যদি সে ২৫ ওভারও ব্যাট করে, তাহলে ভারতের রান হবে ১৮০ থেকে ২০০ এর কাছাকাছি। কল্পনা করুন, যদি তারা তখন মাত্র দু-একটি উইকেট হারায়; একবার ভাবুন, তারা কী করতে পারে, তারা ৩৫০ বা তার বেশি রান করতে পারে।”
চলতি আসরে রোহিতের স্ট্রাইক রেট ১০৭.২১। তবে উল্লেখ করার মতো ইনিংস এখনও তিনি খেলতে পারেননি। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৬ বলে ৪১ রান তার সর্বোচ্চ। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫ বলে ২০, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭ বলে ১৫ ও সেমি-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেন ২৯ বলে ২৮।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ২০২৩ বিশ্বকাপে অবশ্য সফল হয়েছিলেন রোহিত। ১২৫.৯৪ স্ট্রাইক রেটে ১১ ম্যাচে ৫৯৭ রান করে তিনি ছিলেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার। ওই আসরে অন্তত ৪০০ রান করা ১৩ ক্রিকেটারের মধ্যে তার চেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট ছিল শুধু গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের (১৫০.৩৭)।
তারপরও, রোহিতের ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে শঙ্কিত গাভাস্কার।
“বিষয়টা নিয়ে তাকেও ভাবতে হবে। মাঠে নেমেই আক্রমণাত্মক খেলা এক জিনিস, কিন্তু কোথাও না কোথাও ২৫-৩০ ওভার ব্যাট করার কিছুটা বিচক্ষণতা থাকতে হবে। এটা করলে প্রতিপক্ষের মুঠো থেকে সে ম্যাচ বের করে নিতে পারবে।”
“এই ধরনের প্রভাবই হলো ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স। আর একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে, সে কি ২৫-৩০ রান করে খুশি? এটা হওয়া উচিত নয়। তাই আমি তাকে এটাই বলব: সাত, আট বা নয় ওভারের পরিবর্তে ২৫ ওভার ব্যাট করলে, দলের ওপর তোমার প্রভাব আরও বেশি হবে।”