Published : 06 Mar 2025, 10:10 PM
দুদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েনের মধ্যে অভিন্ন নদীর পানিবন্টন সংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনায় বৈঠকে বসেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় শুরু হওয়া দুদিনের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেআরসি, বাংলাদেশের সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন।
উভয়পক্ষের ১১ সদস্যের দলে ভারত প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে আছেন দেশটির যৌথ নদী কমিশনের সদস্য শারদ চন্দ্র।
বৈঠকের বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটা জেআরসির নিয়মিত বৈঠক। যেটা একবার বাংলাদেশে হলে পরেরবার ভারতে হয়ে থাকে। সে হিসেবে এবার বৈঠকটা কলকাতায় হচ্ছে।
যৌথ কমিশনের চলমান কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনার পাশাপাশি সেগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে দায়িত্বে আসে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই আছেন। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনো আত্মগোপনে।
এর মধ্যেই ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ভারত এখনও কোনো জবাব দেয়নি।
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে। দিল্লিতে বসে তিনি বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা’ করছেন বলে অভিযোগ এনেছে ইউনূস সরকার।
পাশাপাশি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ প্রচারের অভিযোগ করে আসছে বাংলাদেশ সরকার।
অপরদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ভারত সরকার।
বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত সমস্যা এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে কূটনীতিক তলবের পাল্টাপাল্টি ঘটনাও ঘটেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে কলকাতায় দুদেশের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠককে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাবা হচ্ছে।
এর মধ্যে গঙ্গা চুক্তির অধীনে প্রতিশ্রুত পানি ভারত ঠিকমত দিচ্ছে কি না, তা পরিমাপের নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ৪ মার্চ বাংলাদেশের একটি দল ফারাক্কা ব্যারাজ এলাকা পরিদর্শন করে।
নিয়মিত যোগাযোগের অংশ হিসেবে কলকাতার বৈঠকটি হওয়ার কথা তুলে ধরে পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান বলেন, “যেমন ধরুন যে, আমাদের কিছু কিছু সীমান্ত আছে, সেখানে যে কাজ আছে, সেগুলো করতে গেলে বিজিবি-বিএসএফের কিছু ভূমিকার প্রয়োজন হয়, দেড়শ মিটারের মধ্যে কাজ করতে গেলে তাদের সম্মতির বিষয় আছে, তাদেরও কাজ করতে গেলে আমাদের সম্মতির বিষয় আছে। এই রকম কিছু কিছু বিষয় যেগুলো আমরা আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এগিয়ে নিয়ে যায়।”
ফেনী নদীতে দুদেশের বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করতে গিয়ে অতীতে এভাবে সমাধান করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এবারও কিছু ইস্যু আছে, সেগুলো নিয়ে গেছে জেআরসি ‘নিম্ন পর্যায়ের’ এই দলটি।
“এর উপরের স্টেজ আছে, আমাদের টেকনিক্যাল কমিটি। তার উপরে আছে সচিব পর্যায়ের কমিটি, তার উপরে আছে উপদেষ্টা বা মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটি। ফলে এটা একেবারে প্রাথমিক পর্যায় বলা যায়। রেগুলার ছোটোখাটো বিষয়গুলো নিয়ে গেছে। ওদেরও টিমের এসেছে। এগুলো জেআরসির নিয়মিত কাজের অংশ। বিশেষ কিছু না।”
গঙ্গা চুক্তির নবায়ন কোন পর্যায়ে?
১৯৯৬ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সই হওয়া ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হতে যাচ্ছে। ওই চুক্তির নবায়নের বিষয়টি কলকাতার বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হওয়ার কথা বলছে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো।
তবে বাংলাদেশের পানি সম্পদ সচিব বলছেন, গঙ্গা চুক্তির নবায়ন নিয়ে এখনও অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে আলোচনা করছে বাংলাদেশ। কর্মকর্তা পর্যায়ে নয়, নবায়নের আলোচনা আরও উচ্চ পর্যায়ে হবে।
এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে নাজমুল আহসান বলেন, “গঙ্গা চুক্তির নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিচের লেভেলে আলোচনার বড় কিছু নেই। আমাদের সঙ্গে ভারতের যে ছোটোখাটো বিষয় আছে, সেগুলো নিয়ে মূলত আলোচনা হবে।
“আর যেটা বললেন আপনি, সেটাতো অনেক বড় একটা ইস্যু। সেখানে আমাদের প্রস্তুতি, উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার বিষয় আছে। নিজস্ব প্রস্তুতিগুলো আমরা নিব, এর সাথে কিন্তু ওটার সম্পর্ক নাই।”
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ”এটা আমরা উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার পর বলতে পারব। আমরা অভ্যন্তরীণভাবে কাজ করতেছি। সেটা কোন প্রক্রিয়া হবে বা কি, সেটা আমাদের আরও উপরের পর্যায়ে আলোচনা হবে।”
মঙ্গলবার ফারাক্কা ব্যারেজ এলাকা পরিদর্শনে গেছে দুদেশের নদী কমিশনের প্রতিনিধিদল। শুষ্ক মৌসুমে পানির আসা-যাওয়া পরিমাপের জন্য এই পরিদর্শন হওয়ার কথা বলছেন পানি সম্পদ সচিব।
তিনি বলেন, “শুষ্ক মৌসুমেও মাপার জন্য আমাদের টিম ওখানে গিয়ে থাকে। যে মাপটা, যে পানি ওদের দেওয়ার কথা প্রতি ১০ দিন পরপর, সেই মাপ অনুযায়ী পানিটা আসছে কি-না, সেটা দেখার জন্য পরিমাপ করতে যায়। নির্দিষ্ট পানি আসছে কি-না, সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্যই মাপা হয়।”