স্মার্টফোন ব্যবহারের সঙ্গে পড়াশোনায় ফলাফল খারাপ হওয়ার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ায় গত বছর স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল ইউনেস্কো।
Published : 26 Jun 2024, 03:56 PM
স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ও মানসিক সুস্থতায়, এমনই দাবি যুক্তরাজ্যের শিক্ষাবিদদের।
গত কয়েক বছর ধরে ইংলিশ চ্যানেলের দ্বীপ গের্নসি ও জার্সির বেশিরভাগ মাধ্যমিক স্কুল এ ধরনের নীতিমালা গ্রহণ করেছে যাতে কম বয়সী শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলাকালীন বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করা হয়েছে।
তবে, স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারের ওপর এখনও কোনো আইন পাশ হয়নি। এর পরিবর্তে, জনপ্রতিনিধিরা মনযোগ দিয়েছেন এর ব্যবহার সীমিত করতে নির্দেশনা দেওয়ার দিকে।
জার্সি’র শিশুবিষয়ক কমিশনারের মতে, স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে, তা মনিটর করা উচিৎ।
অনলাইনে ক্ষতিকারক কনটেন্ট
স্মার্টফোন ব্যবহারের সঙ্গে পড়াশোনায় ফলাফল খারাপ হওয়ার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ায় গত বছর স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল ইউনেস্কো।
ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকম জানিয়েছিল, দেশটির ১০ জনের মধ্যে নয়জন কিশোর ১১ বছর বয়স থেকে নিজস্ব স্মার্টফোন ব্যবহার করেন।
সংস্থাটি বলেছে, অনলাইনে থাকা ক্ষতিকারক কনটেন্ট থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিগুলোর আরও কাজ করা উচিৎ।
‘গের্নসি’স লেডিস কলেজ’-এর অধ্যক্ষ ড্যানিয়েলে হারফোর্ড-ফক্স বলেছেন, “আমি নিশ্চিতভাবেই মনে করি, স্কুলে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা উচিৎ, বিশেষ করে ১৬ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে।”
“সোশাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো এমন অ্যালগরিদম তৈরি করছে, যা আমাদের ফোনের প্রতি আসক্ত করে রাখছে। এতে করে কম বয়সীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতাজনিত সমস্যাও নাটকীভাবে বাড়তে দেখছি আমরা।”
“তাই আমি নির্দিধায় বলতে পারি, দিনে অন্তত আট ঘণ্টা শিশুদের এ ধরনের ক্ষতিকারক কনটেন্ট থেকে সুরক্ষিত রাখা উচিৎ। আর আমি সেটাই করছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, এমন প্রবণতায় নিয়ন্ত্রণ আনার পর থেকে কলেজের পরিবেশ অনেক শান্ত হয়ে গেছে। আর এতে করে শিক্ষার্থীরা ‘আরও খেলাধূলা করার সময় পাচ্ছে’ ও তাদের মধ্যে মানবিক বন্ধনও তৈরি হচ্ছে।
‘ভারসাম্য বজায় রাখা’
জার্সি’র ডেপুটি ‘মিনিস্টার ফর এডুকেশন অ্যান্ড লাইফলং লার্নিং’ রব ওয়ার্ড বলেছেন, মা-বাবা ও অভিভাবকরা যেন স্কুল থেকে নির্দেশনা পান, সে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
“আপনি আপনার সন্তানকে স্কুল থেকে দূরে থাকার সময় কী ধরনের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন, সে সম্পর্কে খুব সাবধানে চিন্তা করুন,” বলেন তিনি।
“বেশিরভাগ স্কুলেই স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ নেই। এমনকি অভিভাবক, শিশু ও স্কুলের মধ্যেও একটা সম্পর্ক থাকা দরকার যাতে আমরা তাদেরকে নিরাপদ উপায়ে ফোন ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারি।”
জার্সির শিশুবিষয়ক কমিশনার ড. কারমেল করিগান অবশ্য বলছেন, স্কুলে স্মার্টফোন প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করার সময় আসলে ফুরিয়ে গেছে।
তার মতে, স্মার্ট প্রযুক্তির ‘বিশাল ইতিবাচক দিক’ রয়েছে, যা শিশুদের ‘নিরাপত্তা, পড়াশোনা ও সামাজিক যোগাযোগ তৈরির’ মতো বিষয়গুলো উন্নত করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
“শিশুদের একটা গোটা প্রজন্ম এর বাইরের কিছুই জানে না,” বলেন তিনি।
“অনলাইন নিরাপত্তা ও ক্ষতিকারক কনটেন্ট দেখা থেকে শিশুদেরকে সুরক্ষা দেওয়ার মধ্যে আমাদের একটি ভারসাম্য রাখা দরকার, যেখানে তাদের সাহায্য করার ও তথ্য প্রদানের মতো সুযোগও থাকবে।”