মানুষের বেঁচে থাকার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল পানি। বিশেষ করে, ভবিষ্যতে চাঁদে দীর্ঘমেয়াদি কোনো মিশনের বেলায়।
Published : 27 Aug 2024, 03:51 PM
সম্প্রতি চাঁদে পানযোগ্য পানি তৈরির নতুন এক উপায় খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
মানুষের বেঁচে থাকার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল পানি। বিশেষ করে, ভবিষ্যতে চাঁদে দীর্ঘমেয়াদি কোনো মিশনের বেলায় এ বিষয়টি অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। তাই চাঁদের পৃষ্ঠে পানি প্রাপ্তির বিভিন্ন উপায় খুঁজে পেতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি এক্ষেত্রে যুগান্তকারী সাফল্য দেখিয়েছে চীনের ‘নিংবো ইনস্টিটিউট অফ ম্যাটিরিয়ালস টেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (নিমটে)’র অধ্যাপক ওয়াং জুনকিয়াংয়ের নেতৃত্বাধীন এক গবেষণা দল।
চাঁদের মাটি, যা ‘রেগোলিথ’ নামেও পরিচিত, এর মধ্যে বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিশাল পরিমাণ পানি উৎপাদনের নতুন এক পদ্ধতি তৈরি করেছেন গবেষকরা, যেখানে চাঁদে হাইড্রোজেন উপস্থিতির বিষয়টি এরইমধ্যে সবার জানা।
এর আগে নাসা’র অ্যাপোলো ও চীনের চ্যাং’ই-৫ এর মতো মিশনে চাঁদে পানি থাকার প্রমাণ মিলেছে।
চাঁদের বিভিন্ন খনিজ উপাদানে পানির পরিমাণ বিস্ময়করভাবে কম, ০.০০০০১ শতাংশ থেকে ০.০২ শতাংশের মধ্যে, যার ফলে চাঁদে ব্যবহারের মতো পর্যাপ্ত পানি উত্তোলন করা বেশ কঠিন।
এ গবেষণায় ‘চ্যাংই-৫’ মিশনে চাঁদ থেকে আনা মাটির নমুনা ব্যবহার করেছেন অধ্যাপক ওয়াংয়ের গবেষণা দলটি।
গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, বিশেষ আয়না দিয়ে খুব উচ্চ তাপমাত্রায় (১২০০ কেলভিনের বেশি) চাঁদের রেগোলিথ’কে গরম করে তা থেকে পানি বের করা যেতে পারে, যেখানে এক গ্রাম গরম চাঁদের মাটি থেকে পানি তৈরির সক্ষমতা ৫১ থেকে ৭৬ মিলিগ্রাম পর্যন্ত।
এর মানে দাঁড়ায়, এক টন রেগোলিথ থেকে ৫০ কিলোগ্রামের বেশি বা প্রায় ১০০ বোতল পানি তৈরি করা সম্ভব, যা দৈনিক ৫০ জন মানুষের পানি সরবরাহ করার মতো যথেষ্ট বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষকরা আরও খুঁজে পেয়েছেন, চাঁদের মাটিতে ‘ইলোমেনাইট (FeTiO3)’ নামে বিশেষ ধরনের হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ খনিজ উপাদান আছে, যা পাওয়া যায় সৌর বায়ু থেকে।
এ পদ্ধতি থেকে তৈরি পানি শুধু পানযোগ্যই নয়, বরং চাঁদে গাছ জন্মানোর ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি এর মাধ্যমে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনকেও আলাদা করা যেতে পারে, যেখানে হাইড্রোজেন কাজ করবে শক্তির উৎস হিসাবে। আর অক্সিজেন গুরুত্বপূর্ণ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য।
এইসব অনুসন্ধান চাঁদে পানি খোঁজা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি তৈরির সম্ভাবনা দেখাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে চাঁদে বিভিন্ন গবেষণা স্টেশন তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এমনকি চাঁদে মানুষের উপস্থিতিকে আরও দীর্ঘমেয়াদি করার সম্ভাবনাও দেখাচ্ছে এটি।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘দ্য ইনোভেশন’-এ।