এ যুগান্তকারী অনুসন্ধান শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানের ২৫ বছর পুরানো রহস্যই সমাধান করেনি, বরং মহাবিশ্ব গবেষণার ক্ষেত্রে আরও উন্নত টুল ও মডেল ব্যবহারের গুরুত্বকেও তুলে ধরেছে।
Published : 28 Aug 2024, 05:49 PM
নক্ষত্র ও ডার্ক ম্যাটার একসঙ্গে কাজ করে— বিজ্ঞান জগতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত এ অনুমান সম্প্রতি বাতিল করেছেন বিজ্ঞানীরা।
দীর্ঘদিন ধরেই জ্যোতির্বিদরা বিভিন্ন ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করে অদ্ভুত এক ধরন দেখেছেন। কোনো ছায়াপথের বয়স, গড়ন বা আকার যেমনই হোক না কেন, এতে তারা ও ডার্ক ম্যাটার উভয়েই ভীড় ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে বাইরের প্রান্তে একই হারে কমে আসে বলে ধারণা ছিল বিজ্ঞানীদের।
এ মিল থাকার বিষয়টি খুবই বিস্ময়কর, কারণ ছায়াপথ সাধারণত বৈচিত্র্যে ভরপুর থাকে। ফলে, বিজ্ঞানীদের সন্দেহ তৈরি হয় যে, তারা ও ডার্ক ম্যাটার কোনও না কোনোভাবে বিভিন্ন রহস্যময় কারণে একসঙ্গে কাজ করছে।
এ ব্যাখ্যা অনুমান আকারেই ছিল। আর এই অনুমান থেকে অনুসিদ্ধান্ত মেলে, বিভিন্ন ছায়াপথ জুড়ে এ ধরনের ধারাবাহিক ভর কাঠামো তৈরির পেছনে কারণ হচ্ছে, ডার্ক ম্যাটার ও তারাগুলো একে অপরকে প্রভাবিত করে এমন গঠন তৈরি করেছে।
তবে সম্প্রতি দীর্ঘদিনের এ তত্ত্বকে নাকচ করেছেন আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদদের একটি দল, যার মধ্যে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রিয়া এবং জার্মানির গবেষকরাও।
বিজ্ঞানভিত্তিক মাসিক জার্নাল ‘নোটিসেস অব দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’তে প্রকাশিত এই গবেষণায় উঠে এসেছে, তারা ও ডার্ক ম্যাটারের ঘনত্বে মিল থাকার কারণ এদের মধ্যকার কোনো ‘মহাজাগতিক সূত্র’ নয়। বরং, জোতির্বিদরা বিভিন্ন ছায়াপথের পরিমাপ ও মডেলিংয়ের জন্য যে ধরনের উপায় ব্যবহার করে আসছিলেন, সম্ভবত সেটাই।
এ অনুসন্ধানের জন্য গবেষণা দলটি প্রায় চারশ কোটি আলোকবর্ষ দূরের ২২টি মধ্যবয়সী ছায়াপথ নিয়ে গবেষণা করেছেন। চিলির ‘ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ’-এর সহায়তায় তারা এইসব ছায়াপথ আরও বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছেন।
গবেষণায় সংগৃহিত ডেটা থেকে ছায়াপথের আরও জটিল মডেল তৈরির সুযোগও পেয়েছিলেন গবেষকরা, যেখানে এইসব মহাজাগতিক কাঠামোর সত্যিকারের বৈচিত্র্য ফুটে উঠেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ গবেষণার প্রধান লেখক ও অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত ‘ম্যাককিউরি ইউনিভার্সিটি’র গবেষক ড. ক্যারো ডারকেন ব্যাখ্যা করেছেন, এর আগের মডেলগুলো একটু বেশিই সহজ হওয়ায় সেগুলো এত বেশি সংখ্যক অনুমান তৈরি করেছিল।
“ছায়াপথ অনেক জটিল বিষয়,” বলেন তিনি।
“আর আমরা এদের জটিলতাকে বিবেচনায় না নিলে ফল হিসাবে এমন ভুল জিনিসই উঠে আসবে।”
‘সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি’র শক্তিশালী ‘অজস্টার’ সুপার কম্পিউটারে চালানো নতুন মডেলগুলো বিভিন্ন ছায়াপথের মধ্যে থাকা অনেক অমিলই বিবেচনায় নিয়েছে। ফলে, এর আগের পর্যবেক্ষণে মিল থাকার কারণ যে অতি সাধারণ মডেল, সে বিষয়টিও প্রকাশ পেয়েছে।
এ যুগান্তকারী অনুসন্ধান শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানের ২৫ বছর পুরানো রহস্যই সমাধান করেনি, বরং মহাবিশ্ব গবেষণার ক্ষেত্রে আরও উন্নত টুল ও মডেল ব্যবহারের গুরুত্বকেও তুলে ধরেছে।
ড. ডারকেনের দাবি, গবেষণায় ব্যবহৃত এ পদ্ধতি বাস্তব বিশ্বের নানা সমস্যা ঠেকানোর ক্ষেত্রেও সহায়ক হতে পারে।
‘মাগপি (মিডল এজেস গ্যালাক্সি প্রোপার্টিজ উইথ ইন্টিগ্রাল ফিল্ড স্পেকট্রোস্কোপি’ নামে পরিচিত এ প্রকল্পটিতে ‘ভেরি লার্জ’ টেলিস্কোপের মধ্যে ‘মিউস’ নামের এক বিশেষ ধরনের যন্ত্রও ব্যবহার করেছেন গবেষকরা, যা বিভিন্ন ছায়াপথ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।
ফলে, গবেষকরা সেইসব তথ্য ‘পিক্সেল বাই পিক্সেল’ বিশ্লেষণ করার সুযোগ পেয়েছেন ও বিভিন্ন ছায়াপথের সত্যিকারের গঠনপ্রক্রিয়া কেমন, সে সম্পর্কেও নতুন ধারণা মিলেছে।