মঙ্গলের আকাশে ভেসে বেড়ানো সূক্ষ্ম ও জ্বলজ্বলে মেঘ। এর মধ্যে কিছু মেঘে রংধনুর মতো ইরিডিসেন্সও দেখা গিয়েছে, যা পৃথিবীতে দেখা ‘মাদার অফ পার্ল’ মেঘের মতোই।
Published : 18 Feb 2025, 06:53 PM
মঙ্গলের আকাশে ভেসে বেড়ানো লাল ও সবুজ রঙের মেঘের মনোমুগ্ধকর ছবি তুলেছে নাসার কিউরিওসিটি রোভার।
এসব মেঘকে সাধারণত ‘নকটিলুসেন্ট ক্লাউড’ বা নিশাচর মেঘ বলে, ল্যাটিন ভাষায় যার অর্থ ‘রাতের আলো’ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। এগুলোর দেখা মেলে গোধূলির সময়। কারণ অস্তগামী সূর্য এসব মেঘের মধ্য দিয়ে আলো ছড়িয়ে দেয় বলে এগুলো দৃশ্যমান হয়।
২০২৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ১৬ মিনিটের পর্যবেক্ষণে এসব মেঘের ছবি তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র কিউরিওসিটি রোভার।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলের আকাশে ভেসে বেড়ানো সূক্ষ্ম ও জ্বলজ্বলে মেঘ। এর মধ্যে কিছু মেঘে রংধনুর মতো ইরিডিসেন্সও দেখা গিয়েছে, যা পৃথিবীতে দেখা ‘মাদার অফ পার্ল’ মেঘের মতোই। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মেঘের কণা যখন সূর্যের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায় তখন মেঘে এমন ঝলমলে রং তৈরি হয়।
মঙ্গলের মেঘ কী দিয়ে তৈরি?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলীয় বরফ বা কার্বন ডাই অক্সাইড বরফ, যা সাধারণত শুষ্ক বরফ হিসাবে পরিচিত তা দিয়ে তৈরি হতে পারে মঙ্গল গ্রহের মেঘ। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের ৯৫ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড দিয়ে তৈরি, তাই এসব ছবিতে এতো উঁচুতে থাকা মেঘ কার্বন ডাই অক্সাইড বরফ দিয়ে তৈরি হতে পারে। গ্রহটির পৃষ্ঠ থেকে ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার উপরে তৈরি হয় এসব মেঘ।
কিউরিওসিটি রোভারের ছবিতে সাদা বরফের টুকরা বাতাসে কুণ্ডলী পাকিয়ে পড়তেও দেখা যাচ্ছে ছবিতে। এসব শুষ্ক বরফের মেঘ ক্রমাগত তাপমাত্রার কারণে বাষ্পীভূত হওয়ার আগে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত নীচে নেমে আসে। পাশাপাশি একই উচ্চতায় পানি বরফের এসব মেঘকে উল্টো দিকে সরে যেতেও দেখা যাচ্ছে।
মঙ্গলে প্রথম গোধূলি মেঘ কবে দেখা গিয়েছিল?
প্রথমবারের মতো ১৯৯৭ সালে মঙ্গলে গোধূলি মেঘ দেখতে পান বিজ্ঞানী। ওই সময় নাসার ‘পাথফাইন্ডার’ মিশন এসব মেঘের ছবি তুলেছিল। এদিকে ২০১৯ সালে মঙ্গলের এমন রঙিন মেঘের ছবি প্রথম তোলে কিউরিওসিটি। এর আগে এসব মেঘ শনাক্ত করতে পারেনি রোভারটি।
বহু বছর ধরে এই মেঘ নিয়ে গবেষণা করছেন কলোরাডোর ‘স্পেস সায়েন্স ইনস্টিটিউট’-এর বায়ুমণ্ডল বিজ্ঞানী মার্ক লেমন। তিনি বলেছেন, “প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এসব রং বোধহয় ক্যামেরার কোনো ত্রুটি। তবে এখন আমরা অনুমান করতে পারি, এসব মেঘ কখন দেখতে পাওয়া যাবে। তাই ক্যামেরার জন্য বিভিন্ন শট আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে পারি আমরা।”
মেঘ গঠন, কণার আকার ও মঙ্গলের পাতলা বায়ুমণ্ডলে মেঘ কীভাবে তৈরি হয় সে সম্পর্কে আরও জানতে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করতে পারে রোভারের প্রতিটি পর্যবেক্ষণ।
মঙ্গলের কেবল কিছু জায়গায় কেন এই মেঘ দেখা যায়?
কেন কার্বন ডাই অক্সাইডওয়ালা বরফের মেঘ কেবল মঙ্গলের নির্দিষ্ট অঞ্চলেই দেখা যায়? কিউরিওসিটি রোভারটি কেবল মঙ্গলের বিষুবরেখার কাছে থাকা ‘গেল ক্রেটার’ নিয়ে অনুসন্ধান করছে।
অন্যদিকে, ২০২১ সালে মঙ্গলের ‘জেজেরো ক্রেটার’-এ অবতরণ করা নাসার ‘পারসিভ্যারেন্স’ রোভার এই বিশেষ মেঘগুলোর কোনওটিই দেখেনি।
লেমন ও তার গবেষণা দলটি বলছে, মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ এমন এক বায়ুমণ্ডলীয় তরঙ্গ, যা তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে, সেটি এর জন্য দায়ী হতে পারে। এসব তরঙ্গ বায়ুমণ্ডলের কিছু অংশকে এতটাই ঠাণ্ডা করে তুলতে পারে, যা কার্বন ডাই অক্সাইডকে বরফে পরিণত করতে যথেষ্ট কার্যকর।
তবে মঙ্গলে এই তরঙ্গ কীভাবে কাজ করে তা এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।