বিভিন্ন ধরনের কোয়াসার পর্যবেক্ষণের কাজ সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। কারণ এগুলো এত উজ্জ্বল হয় যে, এ তাদের আশপাশের বিভিন্ন কাঠামো দেখতে পাওয়া বেশ কঠিন।
Published : 08 Dec 2024, 04:06 PM
সম্প্রতি নাসা’র হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে কোয়াসারের কোরকে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এর কোরটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের মাধ্যমে চালিত ঝলমলে এক গ্যালাকটিক কেন্দ্র বলে দাবি তাদের।
মহাবিশ্বের উজ্জ্বলতম বস্তুগুলোর অন্যতম কোয়াসার। কারণ, এর কেন্দ্রে রয়েছে ব্ল্যাক হোল, যা এদের আশপাশের বিভিন্ন উপাদানকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করে চলেছে।
এ নতুন গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ফ্রান্সের ‘কোত দ্য’জুর’ মানমন্দিরের জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিন রেন, যেখানে উন্মোচিত হয়েছে কোয়াসারের আশপাশের এক অদ্ভুত কাঠামো। যার মধ্যে রয়েছে রহস্যময় এক এল-আকৃতির ফিলামেন্ট ও বিভিন্ন আকারের বেশ কয়েকটি ব্লবের মতো বস্তু।
কোয়াসারের কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাক হোলের ১৬ হাজার আলোকবর্ষের মধ্যে রয়েছে এসব বৈশিষ্ট্য। আর এই পরিবেশ কোয়াসার সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে বিজ্ঞানীদের, যা এর অপরিসীম শক্তির খোরাক জুগিয়ে চলেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
ব্ল্যাক হোলকে প্রদক্ষিণ করে এমন ছোট স্যাটেলাইট ছায়াপথ হতে পারে কোয়াসারের মধ্যে থাকা ব্লবের মতো এসব বস্তু। এমনকি ব্ল্যাক হোলে পড়ে যাওয়া উপাদানের উৎসও হতে পারে এসব ব্লব, যা কোয়াসারের আলোর উজ্জ্বলতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
“হাবলের বিস্ময়কর সক্ষমতার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কারণ এই টেলিস্কোপের কারণে আমরা কোয়াসারের আশপাশের এমন বিশদ তথ্য দেখতে পাচ্ছি, যা আগে কখনও দেখিনি,” বলেছেন রেন।
পৃথিবী থেকে ২৫০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ‘৩সি ২৭৩’ নামের এ কোয়াসারটি। আর এটিই প্রথম আবিষ্কৃত কোয়াসার। ১৯৬৩ সালে এটি আবিষ্কার করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী মার্টেন শ্মিট।
বিভিন্ন ধরনের কোয়াসার পর্যবেক্ষণের কাজ সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। কারণ এগুলো এত উজ্জ্বল হয় যে, এ তাদের আশপাশের বিভিন্ন কাঠামো দেখতে পাওয়া বেশ কঠিন।
এখানে কোয়াসারের কেন্দ্র থেকে আসা এই আলোকে আটকাতে এক ধরনের করোনাগ্রাফ ব্যবহার করেছে ‘হাবলস স্পেস টেলিস্কোপ ইমেজিং স্পেকট্রোগ্রাফ বা এসটিআইএস’। সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ যেভাবে সূর্যকে ডেকে রাখে বিষয়টি ঠিক তেমন। ফলে কোয়াসারের আশপাশ আগের চেয়ে আরও বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করতে পেরেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
২২ বছরের ব্যবধানে তোলা হাবল টেলিস্কোপের বিভিন্ন ছবির সঙ্গে তুলনা করে গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন, ব্ল্যাক হোল থেকে যত দূরে সরে যাচ্ছে ততই দ্রুত গতিতে চলছে কোয়াসারের জেটটি।
আর ছোট আকারের রেডিও টেলিস্কোপ ও বড় আকারের অপটিক্যাল পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকা ব্যবধান পূরণ করতে সহায়তা করেছে এই বিস্ময়কর ধারণাটি।
মহাবিশ্বকে বোঝার জন্য ‘৩সি ২৭৩’ এর মতো কোয়াসার সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিগ ব্যাংয়ের প্রায় তিনশ কোটি বছর পরে সবচেয়ে সাধারণ বিষয় ছিল কোয়াসার। এটি এমন এক সময়, যখন বিভিন্ন ছায়াপথের মধ্যে ঘন ঘন সংঘর্ষের ফলে একসঙ্গে হয়েছে কোয়াসার, যা বিভিন্ন সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল তৈরিতে প্রভাব ফেলেছে।
কমপক্ষে ১০ লাখ কোয়াসার মহাকাশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, যা আমাদের দূরবর্তী ছায়াপথ ও বিভিন্ন মহাজাগতিক কাঠামো গবেষণার জন্য ‘মহাজাগতিক টর্চলাইট’ হিসাবে কাজ করে চলেছে।
রেন ও তার গবেষণা দলটির অনুমান, কোয়াসার সম্পর্কে জানার এটি কেবল শুরু।
“কোয়াসারের আশপাশের জটিল পরিবেশ ও হোস্ট ছায়াপথের সঙ্গে এদের মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের নতুন ধারণা দিয়েছে হাবল টেলিস্কোপ।”
বিজ্ঞানীদের ধারণা, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপও নিজের শক্তিশালী ইনফ্রারেড সক্ষমতার মাধ্যমে ভবিষ্যতে ‘৩সি ২৭৩’-এর মতো কোয়াসার সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশ করবে।