২০১৯ সালে ৯৭ বছর বয়সে রসায়ণে নোবেল পুরস্কার তাকে প্রবীণতম নোবেল জয়ী করে তুললেও বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের কাছেই তিনি ছিলেন প্রায় অপিরিচিত।
Published : 27 Jun 2023, 04:36 PM
বিশ্বের কয়েকশ কোটি মানুষের হাতে তার তৈরি প্রযুক্তি। যাতায়াত, জীবনধারণ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগের গোড়ায় রয়েছে তার উদ্ভাবন। রোববার শতবর্ষে বিদায় নিলেন এমনই এক শীর্ষ বিজ্ঞানী জন গুডএনাফ।
গুডএনাফের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস’। ১৯৮৬ সাল থেকে এখানেই শিক্ষকতা করেছেন তিনি।
২০১৯ সালে ৯৭ বছর বয়সে রসায়ণে নোবেল পুরস্কার তাকে প্রবীণতম নোবেল জয়ী করে তুললেও বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের কাছেই তিনি ছিলেন প্রায় অপিরিচিত; যদিও মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও বিদ্যুচ্চালিত যানের মতো প্রযুক্তির প্রচলিত ব্যবহার তার উদ্ভাবন ছাড়া সম্ভব হতো না।
তার আগেও লিথিয়াম ব্যাটারি উদ্ভাবনের বিভিন্ন উপায় খুঁজেছেন গবেষকরা। উদাহরণ হিসেবে, লিথিয়ামের সঙ্গে ‘টাইটেনিয়াম ডাইসালফাইড’-এর সমন্বয় ঘটিয়ে এর একটি নকশা করেছেন নোবেল জয়ী আরেক রসায়নবিদ এম স্ট্যানলি হুইটিংহাম।
তবে মার্কিন সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ১৯৮০ সালে ‘ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড’-এ থাকাকালীন এই বিষয়ে বড় এক অগ্রগতি অর্জন করেন গুডএনাফ।
লিথিয়ামের কয়েকটি স্তরযুক্ত ‘ক্যাথোড’ ও ‘সুরক্ষা ব্যবস্থা অটুট রেখে শক্তিশালী ভোল্টেজ উৎপন্ন করা’ কোবাল্ট অক্সাইডের সমন্বয় ঘটিয়ে নতুন এক ব্যাটারি উদ্ভাবন করেন তিনি। এর আগের প্রচলিত ব্যাটারি, যেমন, গাড়িতে ব্যবহৃত ‘লিড অ্যাসিড’ ও বিভিন্ন পোর্টেবল ডিভাইসে থাকা ‘নিকেল ক্যাডমিয়াম’ ব্যাটারির চেয়ে এর সক্ষমতা অনেক বেশি ছিল।
তবে, জাপানের রসায়নবিদ ড. আকিরা ইয়োশিনো কাঁচা লিথিয়াম ব্যবহার বাতিল করে তুলনামূলক সুরক্ষিত লিথিয়াম আয়ন ব্যবহারের আহ্বান জানানোর আগ পর্যন্ত গুডএনাফের এই প্রযুক্তি তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। পরবর্তীতে জাপানের কেমিক্যাল কোম্পানি ‘আসাহি কাসেই কর্পোরেশন’-এর জন্য একটি ব্যবহারিক নকশা তৈরি করেন তিনি। এর ফলে, ১৯৯১ সালে প্রথম গ্রাহক বান্ধব রিচার্জেবল লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি বাজারে আনে সনি।
পরবর্তীতে, এই কার্যকারিতা সেইসব মোবাইল ডিভাইসেও যুক্ত হয়, যেগুলো হয় এতোটা পোর্টেবল ছিল না বা যাদের কাছে এর আগে কোনো বিকল্প ছিল না। তার উদ্ভাবনের ফলেই বিভিন্ন সেলফোন ও ল্যাপটপ দীর্ঘক্ষণ চলানো সম্ভব হয়। এমনকি বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির মতো সর্বাধুনিক উদ্ভাবনেও তার প্রভাব রয়েছে।
কেবল ব্যাটারি নয়, আরও অনেক উদ্ভাবনের সঙ্গেই গুডএনাফের নাম জড়িয়ে আছে। ৫০-৬০’র দশকে তিনি এমন যুগান্তকারী প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সাহায্য করেন, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন কম্পিউটিং পণ্যে ব্যবহৃত ‘র্যানডম অ্যাক্সেস মেমরি (র্যাম)’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
তিনি নিয়মিতই বিভিন্ন পেটেন্ট সহকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করতেন। নিজের বয়স ৯০ ছাড়ানোর পরও সক্রিয় গবেষক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। কয়েক বছর আগেও তিনি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এমন ব্যাটারি প্রযুক্তি বানাচ্ছিলেন, যা নবায়নযোগ্য শক্তি ও ইভি খাতে যুগান্তকারী কার্যদক্ষতা দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।
সাধারণ মানুষের কাছে কম পরিচিতি পেলেও নিজ কাজের স্বীকৃতি পেয়েছেন গুডএনাফ। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল মেডাল অফ সায়েন্স’ খেতাব ও ২০১৯ সালে রসায়নে নোবেল জেতার পাশাপাশি অন্যান্য জায়গাতেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
বিভিন্ন শিল্প এখন ধীরে ধীরে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির দিকে ঝুঁকছে। পাশাপাশি, উচ্চ কার্যদক্ষতা, দ্রুতগতির চার্জিং ও খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে অটোমেকাররা বিদ্যুচ্চালিত গাড়িতে ‘সলিড-স্টেট’ ব্যাটারি স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন।
এটা নিরাপদেই বলা যায় যে গুডএনাফকে ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির চিত্রায়ন করা সম্ভব হতো না। আর এই খাতে তার ভূমিকা সম্ভবত আরও অনেক বছর অনুভূত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এনগ্যাজেট।