১৯ বছর বয়সে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ডান পা হারানো জন আবার দৌড়াতে শেখেন এবং ২০০৫ সালে একজন পেশাদার ‘ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড’ অ্যাথলিট হয়ে ওঠেন তিনি।
Published : 19 Feb 2025, 02:37 PM
প্রথমবারের মতো শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাওয়ার এক মিশনের অংশ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্রিটিশ এক নভোচারী।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা বা ইএসএ বলেছে, দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ অভিযানে অংশগ্রহণের জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট পেয়েছেন ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফের সাবেক দৌড়বিদ ও প্যারালিম্পিয়ান জন ম্যাকফলকে।
সাবেক এই দৌড়বিদ বলেছেন, “মহাকাশে যাওয়ার জন্য যাচাই বাছাইয়ের কাজ শেষ করতে পেরে ও আইএসএসে যাওয়ার প্রযুক্তিগত কোনও সমস্যা আমার নেই তা প্রমাণ করতে পেরে দারুণ লাগছে।”
জন বলেন, “আজকের এ ঘোষণা কেবল মহাকাশে দীর্ঘমেয়াদি মিশনে যাওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমার মেডিকেল সার্টিফিকেট পাওয়ার বিষয়ে নয়, বরং আমার জন্য এটি তার চেয়েও অনেক বড় বিষয়।”
“আমার ধারণা, একজন প্রতিবন্ধী হিসেবে আমার মহাকাশে যাওয়ার বিষয়টি মানুষের বিশ্বাস করা উচিত। কারণ, এমন উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। আর এ ধরনের সঠিক সমর্থন ও কাজের মাধ্যমে মানুষের মানসিকতাতেও পরিবর্তনও আনা যেতে পারে।”
প্রায় এক মাস ধরে চলা এই বাছাই প্রক্রিয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরাসরি কিছু করতে হয়নি জনকে। এ পরীক্ষায় মেডিকেল পরীক্ষার মতো বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি বলেন, “আমাকে কেবল প্রমাণ করতে হয়েছে যে, নানা ধরনের প্রয়োজনীয় কাজ আমি করতে পারি”।
২০২২ সালে ‘ফ্লাই’ মিশন চালু করে ইএসএ, যার লক্ষ্য আইএসএসে প্রতিবন্ধী নভোচারীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কী কী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে তা নিয়ে গবেষণা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ। আর এ প্রোগ্রামের জন্য ইএসএ নভোচারী রিজার্ভের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন তিন সন্তানের বাবা জন।
ইএসএ-এর ‘হিউম্যান অ্যান্ড রোবোটিক এক্সপ্লোরেশন’ বিভাগের পরিচালক ড্যানিয়েল নিউয়েনসওয়ান্ডার বলেছেন, “ম্যাকফল এমন নভোচারীদের অংশ, যারা আমাদের আন্তর্জাতিক সঙ্গীদের রাজনৈতিক বিবেচনার পরও আইএসএসেদ যাওয়ার যোগ্যতা রাখেন।”
“আমি খুব গর্বিত। কারণ, ইউরোপ তার মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আর অন্তর্ভুক্তিই ইউরোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার কাছেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা দায়িত্বশীল ও টেকসই মহাকাশ গবেষণার পক্ষে কথা বলি।
“জন দারুণ একটি উদাহরণ হতে চলেছে।”
ইএসএ-এর কখন ও কোন মিশনে যোগ দিতে পারেন জন সে বিষয়ে কিছু না জানালেও তিনি বলেছেন, “এটি কেবল শুরু।”
জনের এ বাছাই পরীক্ষায় সহায়তা করেছে ইএসএ, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স-এর বিশেষজ্ঞরা, যেখানে তার চিকিৎসা’সহ ৮০টিরও বেশি পরীক্ষার দিকে নজর দিয়েছে ইএসএ।
১৯ বছর বয়সে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ডান পা হারানো জন আবার দৌড়াতে শেখেন এবং ২০০৫ সালে একজন পেশাদার ‘ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড’ অ্যাথলিট হয়ে ওঠেন তিনি।
প্যারালিম্পিক ১০০ মিটার দৌড়বিদ হিসাবে গ্রেট ব্রিটেন ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি। অর্থোপেডিক সার্জন হওয়ার জন্য খেলা ছাড়ার আগে ২০০৮ প্যারালিম্পিকে ব্রোঞ্জ’সহ এক ডজনেরও বেশি পদক জিতেছেন জন।
ইএসএ-এর মহাকাশ গবেষণার অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান লিজ জনস বলেছেন, “ম্যাকফল ও ইএসএ-এর দল প্রমাণ করেছে, তার মতো শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পক্ষে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকা ও কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব।”