ভিডিওতে দেখা যায়, শিশুটির একটি ছবি অ্যানিমেট করে তার ঠোঁট নাড়ানো হচ্ছে, যেখানে একটি কৃত্রিম কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দিচ্ছে শিশুটি।
Published : 30 Jul 2023, 07:42 PM
৩০ বছর আগে ইংল্যান্ডে খুন হয়েছিল দুই বছর বয়সী এক শিশু। এআইয়ের তৈরি সেই ‘হত্যার ভিডিও’ ছড়িয়েছে ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটকে।
এআই’র তৈরি ওই ভিডিও ক্লিপগুলোয় দেখা যায়, খুন হওয়া ওই দুই বছর বয়সী শিশুর অ্যানিমেটেড সংস্করণ নিজ মৃত্যু মুহূর্তের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করছে।
‘বীভৎস’ ওই ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ নিয়ে সামাজিক মাধ্যম টিকটকের ক্ষমা প্রার্থনার দাবি উঠেছে যুক্তরাজ্যে।
১৯৯৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জেমস বালজার নামে ওই শিশুকে লিভারপুলের মার্সেইসাইড শপিং সেন্টার থেকে অপহরণ করে জন ভেনাবেলস ও রবার্ট থম্পসন। সে সময় দুইজনেরই বয়স ছিল ১০ বছর। পরবর্তীতে, ওই শিশুর ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোর একটি দেখার কথা বলেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ। এতে দেখা গেছে, জেমসের একটি ছবি অ্যানিমেট করে তার ঠোঁট নাড়ানো হচ্ছে, যেখানে একটি কৃত্রিম কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দিচ্ছে শিশুটি।
টিকটক বলেছে, কোম্পানির নীতিমালা ভঙ্গ করে এমন ভিডিও তারা সরিয়ে ফেলে। তবে, এর পরও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটিতে ওই ক্লিপ অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য মিররকে জেমসের মা ডেনিস ফারগাস বলেন, ‘বিকারগ্রস্ততার মাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে’ এইসব ভিডিও। ভিডিওগুলো সরিয়ে ফেলার দাবি করেছেন তিনি। এর পরপরই চীনা মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যমটিকে সতর্ক করা হয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে স্কাই।
‘পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে টিকটককে’
‘জেমস বালজার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এর প্রধান কাইম ডারবি স্কাই নিউজকে বলেন, এর আগে প্ল্যাটফর্মটিতে এমন একশটির বেশি ক্লিপ থাকলেও এখনও অনেক ক্লিপ রয়ে গেছে।
“এটা একেবারেই জঘন্য।” --বলেন তিনি।
“নতুন প্রজন্মের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ওই ঘটনা নিয়ে লোকজনের মধ্যে যদি আলোচনা হয় তবে শিশুটির মা ডেনিসের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু, সবকিছুর তো একটা সীমা থাকবে!”
“টিকটকের উচিৎ, তার কাছে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাওয়া ও ভিডিওগুলো সরিয়ে ফেলার নিশ্চয়তা দেওয়া।”
টিকটক বলেছে, তাদের প্ল্যাটফর্মে “এমন বিরক্তিকর কনটেন্টের কোনো জায়গা নেই”। পাশাপাশি, ভিডিওর প্রচারণা চালানো চ্যানেল ‘সিন্থেটিক’ মিডিয়াকে নিষিদ্ধ করা ও এর কনটেন্ট সরিয়ে ফেলার কথাও বলেছে প্ল্যাটফর্মটি।
নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকারও
যুক্তরাজ্যের এক সরকারি মুখপাত্র স্কাই নিউজকে বলেন, তাদের বহুল প্রতীক্ষিত অনলাইন সুরক্ষা আইন বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।
“এই ধরনের বীভৎস ক্লিপ দিয়ে কিছুই হয় না ঘটনার শিকারের আপনজনকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া।” --বলেন তিনি।
“কয়েক মাসের মধ্যেই আইনে পরিণত হতে যাওয়া অনলাইন নিরাপত্তা বিল নিশ্চিত করবে, বিভিন্ন শীর্ষ সামাজিক মাধ্যম যেন ব্যবহারকারীর অনুমতি সাপেক্ষে নীতিমালা কার্যকর করে ও কোনো অভিযোগ নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়।”
“আর ব্যবহারকারীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হলে ওই আইন মিডিয়া নিয়ন্ত্রক ‘অফকম’কে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেবে। এর মধ্যে রয়েছে এক কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড (দুই কোটি ৩০ লাখ ডলার) পর্যন্ত এমনকি অভিযুক্ত কোম্পানির বৈশ্বিক বার্ষিক আয়ের ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানার বিষয়টিও।”
এর পেছনের মানসিকতা কী?
কাইম ডারবি বলেন, এই ক্লিপগুলোর এক নির্মাতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন ডেনিসের স্বামী স্টুয়ার্ট।
ফিলিপিন্সভিত্তিক ওই নির্মাতাকে স্টুয়ার্ট ক্লিপগুলো সরিয়ে নিতে বলেন।
তারা এর জবাবে বীভৎস ওই ঘটনা নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর কথা বলেছে।
বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, এমন আরও কয়েকটি খুন বা নিখোঁজ হওয়া শিশুকে নিয়ে এআই’র মাধ্যমে তৈরি ভিডিও টিকটকে শেয়ার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০০৭ সালে পর্তুগাল থেকে হারিয়ে যাওয়া ব্রিটিশ শিশু মেডেলিন ম্যাকান ও একই বছর খুন হওয়া লিভারপুলের স্কুলছাত্র রিস জোনস।
৩০ বছর আগে জেমসের হত্যা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা সম্প্রচারক পিট প্রাইস স্কাই নিউজকে বলেন, এমন ঘটনা শুনে ‘ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন তিনি।
“এমনটি করার পেছনের মানসিকতা কী? ছেলে দুটি ওই শিশুকে কেবল জবাই করেনি, বরং তার ওপর নিপীড়নও চালিয়েছে।” --বলেন তিনি।
জেমসের হত্যাকারী ভেনাবলস ও থম্পসনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলেও ২০০১ সালে নতুন পরিচয়ের লাইসেন্স’সহ ছাড়া পায় তারা।
এর মধ্যে ৪০ বছর বয়সী ভেনাবেলসকে দুইবার ২০১০ ও ২০১৭ সালে কারাগারে পাঠানো হয়। এর মধ্যে দ্বিতীয় কারাদণ্ডের কারণ ছিল শিশুদের আপত্তিকর ছবি ধারণ।
২০২০ সালে তার প্যারোলের আবেদন নাকচ করা হয়।