নতুন এ তত্ত্বটি সেই প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানায়, যেখানে ভূপৃষ্ঠে থাকা বিভিন্ন ‘ফল্ট লাইনের ঘর্ষণ’ ভূমিকম্পের প্রাথমিক কারণ হিসেবে বিবেচিত।
Published : 17 Jun 2024, 04:35 PM
ভূমিকম্পের সম্ভাব্য কারণ নিয়ে মানুষের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণা।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ব্রাউন’-এর বিজ্ঞানীরা একটি নতুন তত্ত্ব দিয়েছেন, যা ভূমিকম্প কোথায় ও কীভাবে ঘটে তাতে অনেকখানি প্রভাব ফেলে।
এতোদিন ভূমিকম্পের প্রাথমিক কারণ হিসেবে বলা হচ্ছিল ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন ‘ফল্ট লাইনের ঘর্ষণ’কে। নতুন তত্ত্বটি সেই কারণকেই চ্যালেঞ্জ করছে।
‘ফল্ট লাইন’ এমন একটি সীমানা, যেখানে পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলো একে অপরের সঙ্গে মিলে যায় বা একে অপরের থেকে দূরে সরে যায়।
এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ। এতে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন ফল্ট লাইন সারিবদ্ধ হয়ে থাকার বিষয়টি সম্ভবত ভূমিকম্পের কার্যকলাপে প্রভাব ফেলে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ব্রাউন’-এর ভূ-পদার্থবিদ ও এ গবেষণার অন্যতম প্রধান লেখক ভিক্টর সাই বলেছেন, এ আবিষ্কারটি ভূমিকম্পের আচরণ বোঝার প্রচলিত ধারণাকে আরও উন্নত করতে পারে।
“দীর্ঘদিন ধরে ভূ-পদার্থবিদদের দাবি ছিল, ভূমিকম্প তখনই ঘটে যখন ভূত্বকের ফল্টের চাপ এমন পর্যায়ে চলে যায় যেখানে বিভিন্ন ফল্ট দ্রুত পিছলে যায়। এটি ‘স্টিক-স্লিপ’ নামের এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাপ ছেড়ে দেয়।”
“তবে, আমাদের নতুন গবেষণায় একটি ভিন্ন ইঙ্গিত মিলেছে। এ তত্ত্ব অনুসারে, আগে যেমনটা ভাবা হয়েছিল, ফল্টের ক্ষেত্র সম্ভবত তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।”
বিজ্ঞানীদের প্রচলিত বিশ্বাস ছিল, ফল্টে থাকা ঘর্ষণের ধরন নির্ধারণ করে থাকে যে, মাটি মসৃণভাবে পিছলে যাবে বা হঠাৎ করেই ভেঙে পড়ে ভূমিকম্প ঘটাবে কি না। এতদিন ধারণা করা হত, মাটির দ্রুত পিছলে যাওয়া বা এর তীব্র গতির কারণ মূলত ফল্ট লাইনের অস্থিতিশীল ঘর্ষণ। এর বিপরীতে, স্থিতিশীল ঘর্ষণের বেলায় মাটির নড়াচড়া খুবই ধীর ও সামান্য হয়ে থাকে।
সাই ও তার গবেষণা দলটি খুঁজে পেয়েছেন, ভূমিকম্প সংশ্লিষ্ট ফল্টের জ্যামিতিক জটিলতা, যেমন বাঁক, ফাঁক ও শিলার গতিবিধি সম্ভবত এক্ষেত্রে বেশি প্রাসঙ্গিক।
এ গবেষণায় ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ফল্ট জোনের গাণিতিক মডেল ও ডেটা ব্যবহার করেছেন গবেষকরা। এর মধ্যে রয়েছে জিটিএ গেইম থেকে পরিচিতি পাওয়া ‘সান আন্দ্রেয়াস’ ফল্টও। আর এজন্য তারা মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও ক্যালিফোর্নিয়া ভূতাত্ত্বিক জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।
এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল ব্যাখ্যা করতে, গবেষকরা ফল্ট লাইনকে তুলনা করেছেন দাঁতে দাঁত চেপে ধরে রাখার সঙ্গে। যখন দাঁত কম ধারালো হয়, তখন পাথরগুলো একে অপরের ওপর দিয়ে মসৃণভাবে পিছলে যায়, যার ফলে এরা ধীরে চলে। তবে, দাঁত যতো বেশি ধারালোভাবে আঁকড়ে থাকে, তখন এইসব ফল্ট একে অপরকে আরও চাপ দিয়ে ধরে রাখে। আর চাপ মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সে চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে, যার ফলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
গবেষণাটির মূল উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছে এর আগের এক গবেষণা, যেখানে কিছু ভূমিকম্পে কেন অন্যান্য একই মাত্রার ভূমিকম্পের তুলনায় মাটিতে বেশি গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়, সে বিষয়টি ঘেঁটে দেখা হয়েছিল।
এতে গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, ভূমিকম্পের সময় ফল্ট জোনের ভেতর থাকা ব্লকগুলোর মধ্যকার সংঘর্ষ এ ধরনের উচ্চমাত্রার কম্পনে ভুমিকা রাখে। এর ফলে গবেষকরা ধারণা করছেন, ভূমিকম্প কোথায় ও কেন ঘটে, তাতে প্রভাব আছে সম্ভবত মাটির জ্যামিতিক জটিলতার।
তাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তুলনামূলক জটিল জ্যামিতিক কাঠামো থাকা ও এলোমেলোভাবে থাকা ফল্ট জোনগুলোর মাটিতে বেশি কম্পন অনুভূত হয় ও সেখানে ভূমিকম্পের প্রবণতাও বেশি। এর বিপরীতে, সারিবদ্ধ ফল্টের ক্ষেত্রে মাটির গতিবিধি খুবই মসৃণ হয়, যেখানে ভূমিকম্প হওয়ার তেমন ঝুঁকি নেই।