“চক্রটির হাতে 'আধুনিক' যৌন দাসীতে পরিণত হয়ে পড়ে শত শত তরুণী”, সংবাদ সম্মেলনে বলেন সিআইডি প্রধান।
Published : 26 Jun 2024, 05:18 PM
সামাজিক মাধ্যমে চাকরি দেওয়া, ট্যালেন্ট হান্ট বা মডেল বানানোর কথা বলে তরুণীদের দিয়ে যৌন ব্যবসায় বাধ্য করানোর অভিযোগে মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রসহ আট জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
চক্রটি তরুণীদের ভিডিও বিক্রি ধারণ করত, সেগুলো দেশে ও দেশের বাইরে বিক্রি করে শত কোটি টাকা আয় করেছে বলেও দাবি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থাটি।
গত মঙ্গলবার যশোর, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর ও ঢাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে।
বুধবার সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, এদের মধ্যে মেহেদী হাসান নামে ২৫ বছর বয়সী তরুণকে এই চক্রের হোতা। তিনি চিকিৎসা বিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করছেন।
গ্রেপ্তার হয়েছেন তার খালাত ভাই শেখ জাহিদ বিন সুজনও, সিআইডি বলছে, তারা দুজনে মিলেই এই চক্রটি গড়ে তুলেছেন।
অন্যরা হলেন জাহিদ হাসান ওরফে কাঁকন, তানভীর আহমেদ ওরফে দীপ্ত, সৈয়দ হাসিবুর রহমান, শাদাত আল মুইজ, সুস্মিতা আক্তার ওরফে পপি এবং নায়না ইসলাম।
সিআইডি প্রধান বলেন, “ফেইসবুক ও টেলিগ্রামে ‘লোভনীয় চাকরি’, মডেল বানানো এবং মেধা-অন্বেষণের নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে আকৃষ্ট করত তারা।
“কখনও তারা ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ নামে প্রতিযোগিতার আয়োজনও করত। এতে যারা সাড়া দিতেন তাদের নিয়ে টেলিগ্রামে গ্রুপ খোলা হত। তারপর তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বিদেশিদের কাছে পাঠানোর কথা বলে মেয়েদের অন্তর্বাস পরা ছবি হাতিয়ে নিত। পরে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে জোরপূর্বক তাদেরকে দিয়ে ‘দেহ ব্যবসা’ করানো হত।
“এভাবে চক্রটির হাতে ‘আধুনিক’ যৌন দাসীতে পরিণত হয়ে পড়ে শত শত তরুণী।”
দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করে চক্রের মূল হোতা ও তার প্রধান সহযোগীদের শনাক্ত করার কথা জানিয়ে সিআইডি প্রধান বলেন, “দেশবিদেশে চক্রটির রয়েছে শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক। নানা নামে তাদের শতাধিক চ্যানেলে গ্রাহক সংখ্যা কয়েক লাখ।
“সাবস্ক্রাইবাররা একটি নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে গ্রুপগুলোতে যুক্ত থাকত। চক্রটি ভিডিও কলের সব কিছু গোপনে ধারণ করে রাখত।”
তদন্তে ‘অবিশ্বাস্য’ তথ্য পাওয়া কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি অল্প বয়সী ভয়ানক চতুর এই মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং তার খালাত ভাইয়ের জিম্মায় কয়েক হাজার নারী রয়েছে। টিকটক, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম সেলিব্রেটিও রয়েছে তার মধ্যে।
“অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপে গোপনে ধারণ করা প্রায় ১০ লক্ষ ন্যুড ছবি ও ২০ হাজার অ্যাডাল্ট ভিডিও এর সন্ধান পেয়েছি।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি পর্ন ভিডিও তৈরি করে টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে গত সাত বছরে প্রায় শত কোটি টাকা আয় করেছে তারা।
এই টাকায় চক্রটি যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং ঢাকায় বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছে, নির্মাণ করেছে ‘আলিশান’ বাড়ি।
তাদের আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক হিসাবে বিপুল অর্থ জমিয়ে রাখার তথ্য মিলেছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
অর্থ লেনদেনের জন্য তারা ব্যবহার করত এমএফএস বা মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস। ক্রিপ্টো কারেন্সিতেও তাদের লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
চক্রটি এসব কাজ করতে গিয়ে শত শত মোবাইলের সিম ব্যবহার করলেও কোনোটিই তাদের প্রকৃত ন্যাশনাল আইডি দিয়ে নিবন্ধন করা নয়। নিম্ন আয়ের মানুষের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে তাদের এনআইডি দিয়ে সিমগুলো খোলা হয় বলে জানান সিআইডি প্রধান।
তাদের কাছ থেকে মোট ১২টি মোবাইল ফোন, ২০টি মিম কার্ড, একটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও চেক বই পাওয়া গেছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি আইন, দণ্ডবিধি ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।