পাবলিক নেটওয়ার্কগুলো সুবিধাজনক হলেও বিন্যামূল্যের এসব ওয়াইফাই সংযোগে, ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না।
Published : 25 Jun 2024, 03:50 PM
বিভিন্ন সময়ে জরুরি প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে পাবলিক ওয়াইফাই একটি সহজ ও সুবিধাজনক মাধ্যম। এ ওয়াইফাই কানেকশনের মাধ্যমে এমন সব কাজই করা সম্ভব যেগুলো বাড়ির ওয়াইফাই থেকে করা যায়, হয়তো সংযোগের গতিতে কিছুটা হেরফের হতে পারে।
পাবলিক নেটওয়ার্কগুলো সুবিধাজনক হলেও বিন্যামূল্যের এসব ওয়াইফাই সংযোগে, ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। আর সে কারণেই, কীভাবে পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সময় নিজের তথ্য নিরাপদে রাখবেন, তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
এর আগে জেনে নেওয়া যাক পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক আসলে কতটা অনিরাপদ?
পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের নিরাপত্তার কমতিকে কাজে লাগিয়ে হ্যাকাররা সহজেই ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি সাইট অ্যান্ড্রয়েড পুলিস। এসব হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর ব্যাংক বিবরণ, লগইন পাসওয়ার্ড এমনকি ডিভাইসে থাকা ব্যক্তিগত ছবিও হাতিয়ে নিতে পারে। পাশাপাশি, অপরাধীরা মানুষকে ফাঁদে আটকে ফেলার জন্য নকল ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে। যেগুলো স্বাভাবিক পাবলিক ওয়াইফাই সংযোগের মতো মনে হলেও, আসলে অপরাধীদের প্রতারণার অংশ।
হ্যাকাররা আরেকটি কৌশল ব্যবহার করে যাকে বলা হয় ‘ম্যান-ইন-দ্য-মিডল’ (এমআইটিএম), যেখানে গোপনে দুই পক্ষের মধ্যে হওয়া কথোপকথনে নজর রাখে তারা। এর মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ইমেইল লগইন পাসওয়ার্ড এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নিতে হ্যাকাররা সংবেদনশীল তথ্য বের করে নেয় বলে উল্লেখ করেছে অ্যান্ড্রয়েড পুলিশ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক পাবলিক নেটওয়ার্কে তথ্য নিরাপদ রাখার উপায়।
প্রথমেই, অটোমেটিক বা স্বয়ংক্রিয় নেটওয়ার্ক কানেকশন বন্ধ করুন, এবং মনে করে আগের ব্যবহার করা নেটওয়ার্কগুলো ‘ফরগেট’ করে দিন। অনেকেই নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট কোনো রেস্তোরাঁ, দোকান, বা অনেক মানুষের আনাগোনা রয়েছে এমন জায়গার নেটওয়ার্কের সঙ্গে ডিভাইসের সংযোগ করে থাকেন; আর অনেকদিন ধরে ব্যবহার করার ফলে ভাবতে পারেন নেটওয়ার্কটি নিরাপদ। তবে, কেউ শেষবার এটি ব্যবহার করার পরেই নেটওয়ার্কের সেটিং পরিবর্তন হতে পারে। এ কারণে, একটি পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক একবার ব্যবহার করে, কাজ শেষ হলেই সেটি ডিভাইস থেকে মুছে ফেলা উচিত।
ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের নামটি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন। সাইবার অপরাধীরা জাল পাবলিক ওয়াই-ফাই হটস্পট দিয়ে মানুষকে লোভ দেখানোর চেষ্টা করতে পারে যার মধ্যে জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের নামও থাকতে পারে। জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট বা দোকানে কর্মীদের থেকে সঠিক সংযোগের নামটি যাচাই করে নিন ও সঠিক নেটওয়ার্কে ডিভাইস সংযোগ করেছেন তা নিশ্চিত করুন।
পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে সংযোগ থাকা অবস্থায় সংবেদনশীল তথ্য দেখা অথবা পাঠানো থেকে বিরত থাকুন। সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে এমন অ্যাকাউন্টে লগইন করতে পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবেন না।
কিছু পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার জন্য মোবাইল নম্বর ও ইমেইল অ্যাড্রেস প্রয়োজন হতে পারে। এমন পরিস্থিতে একটি ‘সেকেন্ডারি’ বা কম সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে এমন আলাদা ইমেইল ব্যবহার করুন। এ ছাড়া, পাসওয়ার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রেও পুরনো পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করাই ভালো।
পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে সংযোগ থাকা অবস্থায় শুধু নিরাপদ ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন। অর্থাৎ, কেবল সেসব ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন যেখানে ‘এইচটিটিপিএস’ প্রোটোকল ব্যবহার করা হয়েছে তথ্য নিরাপদ রাখার জন্য। কোনো নির্দিষ্ট সাইটে এ প্রোটোকল না থাকলে বেশিরভাগ ব্রাউজার সতর্ক করে দেয়। এ ছাড়া, নিজেও এটি পরীক্ষা করে নিতে পারেন ইউআরএল লিংকের মাধ্যমে। ইউআরএল লিংকটি অবশ্যই ‘এইচটিটিপিএস’ দিয়ে শুরু হতে হবে। আর লিংকের শুরুতে প্রোটোকল না থাকলে ক্রোম ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারের বাম দিকের টগলে চাপ দিয়ে সাইটের তথ্য দেখে নিতে হবে, সাইট তথ্য পেইজে অবশ্যই ‘কানেকশন ইজ সিকিউওর’ বার্তাটি থাকতে হবে।
বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সময় ফায়ারওয়াল ব্যবহার করতে পারেন। ফায়ারওয়াল হল ‘ইনকামিং অ্যান্ড আউটগোয়িং ডেটা’ বা যেসব তথ্য ডিভাইসে আসছে ও যাচ্ছে সেটি নিরীক্ষণ করে এবং পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সময় নিরাপত্তার প্রথম স্তর হিসাবে কাজ করতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে অ্যান্ড্রয়েড পুলিস। ফলে, ফায়ারওয়াল ফিচারটি চালু করে পাবলিক নেটওয়ার্কের হ্যাকারদের বিরুদ্ধে বাড়তি একটি নিরাপত্তা ফিচার পেয়ে যাবেন।
পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের বেশকিছু সুবিধা থাকলেও, অনিরাপদ নেটওয়ার্ক ক্ষতি করতে পারে, হ্যাকাররা তথ্য চুরি করতে পারে, নিজের ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্য অনলাইনে ফাঁস হয়ে যেতে পারে। এ কারণেই এমন পরিস্থিতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।