কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরি ছবি যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কপিরাইটযোগ্য হবে না

‘ইউএস কপিরাইট অফিস’ এই ধরনের প্রম্পটের তুলনা করেছে কোনো ‘কমিশন পাওয়া শিল্পীকে ক্রেতার দিক নির্দেশনা দেওয়ার’ সঙ্গে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2023, 10:07 AM
Updated : 17 March 2023, 10:07 AM

‘মিডজার্নি’ বা ‘স্টেবল ডিফিউশনের’ মতো এআই মডেলে  টেক্সট প্রম্পটের মাধ্যমে তৈরি বিভিন্ন ছবি এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কপিরাইট করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

‘ইউএস কপিরাইট অফিস (ইউএসসিও)’ এই ধরনের প্রম্পটের তুলনা করেছে কোনো ‘কমিশন পাওয়া শিল্পীকে ক্রেতার দিক নির্দেশনা দেওয়ার’ সঙ্গে।

“এগুলো শনাক্ত করে প্রম্পটার কী চিত্রিত করতে চায়। তবে, সেই নির্দেশাবলী আউটপুটে প্রয়োগের বিষয়টি নির্ধারণ করে মেশিন নিজেই।” – কপিরাইট অফিসের জার্নাল ‘ফেডারেল রেজিস্টারে’ প্রকাশিত নতুন নির্দেশিকায় লিখেছে ইউএসসিও।

“যখন কোনো এআই প্রযুক্তি কেবল একজন মানুষের কাছ থেকে প্রম্পট নিয়ে প্রতিক্রিয়া হিসাবে জটিল লেখনী, ভিজ্যুয়াল বা সঙ্গীতের কার্যক্রম পরিচালনা করে, তখন ‘রচনার ঐতিহ্যগত উপাদান’ মানব ব্যবহারকারী নয়, বরং প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্ধারণ ও কার্যকর করা হয়।” --বলেছে সংস্থাটি।

সংস্থাটি আরও বলেছে, কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত মানুষের সৃজনশীলতার স্তরে এটি কপিরাইট সুরক্ষা প্রদান করবে কি না, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা।

সংস্থাটির দাবি, বিদ্যমান এআই মডেলগুলো কপিরাইটযোগ্য কাজ তৈরি করতে পারে না।

“এখনকার জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি নিয়ে অফিসের বোঝাপড়ার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, কীভাবে এমন সিস্টেম প্রম্পটকে ব্যাখ্যা করে বিভিন্ন উপাদান তৈরি করে, তার ওপর ব্যবহারকারীর চূড়ান্ত সৃজনশীল নিয়ন্ত্রণ নেই।” --বলেছে ইউএসসিও।

আরও পড়ুন:

“অফিসের বিবেচনায় এটা সুপ্রতিষ্ঠিত যে, কপিরাইট কেবল এমন উপাদান রক্ষা করতে পারে, যেগুলো মানুষের সৃজনশীলতার মাধ্যমে তৈরি পণ্য।”

এমনই এক বিখ্যাত ঘটনায় সংস্থাটি আদেশ জারি করে, যেখানে তারা বানরের তোলা সেলফিতে কপিরাইটের অনুমোদন দেয়নি।

যখন এআই’র তৈরি উপাদান আছে, এমন কাজের কথা আসে, তখন সেইসব কাজে এআই মডেলের অবদান ‘যান্ত্রিক পুনরুৎপাদন’ (অর্থাৎ, টেক্সট প্রম্পটের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি)-এর ফলাফল না কি সেগুলো লেখকের ‘নিজের মানসিক ধারণার’ প্রতিনিধিত্ব করে, ইউএসসিও সেই বিষয়গুলো যাচাই করে দেখে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।

বিদ্যমান নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, ইউএসসিও ‘বিভিন্ন এমন কাজের নিবন্ধন করবে না, যেগুলো মানব লেখকের “সৃজনশীল ইনপুট বা হস্তক্ষেপ” ছাড়া মেশিন বা এই ধরনের যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এলোমেলো বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি।’

তবে, অফিস এআই’র তৈরি বিভিন্ন উপাদানে কপিরাইট সুরক্ষা প্রদানের দরজাও খোলা রেখেছে।

“এর জবাব নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। বিশেষ করে, এআই টুল কীভাবে পরিচালিত হয় ও চূড়ান্ত কাজ তৈরিতে এটি কীভাবে ব্যবহৃত হয়, তার ওপর।”

“এটি আসলে প্রতিটি কেসের জন্য ভিন্ন ভিন্ন তদন্ত হবে। যদি কোনো কাজের সৃষ্টিশীলতা মেশিনের মাধ্যমে তৈরি হয়, তবে ওই কাজে মানুষের সৃজনশীলতার ঘাটতি থাকে। আর তা অফিস নিবন্ধন করবে না।”

গত মাসে ইউএসসিও নিশ্চিত করেছে, এক গ্রাফিক উপন্যাসে ব্যবহৃত মিডজার্নির তৈরি বিভিন্ন ছবি কপিরাইটযোগ্য নয়। তবে তারা আরও বলেছে, ক্রিস কাশতানোভার ‘জারিয়া অফ দ্য ডন’ উপন্যাসের টেক্সট ও লেআউটে কপিরাইট দেওয়া যেতে পারে।

সংস্থাটি বলেছে, কপিরাইটযোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে, কাশতানোভার ইনপুট ও মিডজার্নির আউটপুটের মধ্যে অনেক বেশি ‘দূরত্ব’ ছিল।

কাশতানোভার আইনজীবিরা বলেন, ইনপুটের পরিবর্তে আউটপুটে বেশি মনযোগ দিয়ে সংস্থাটি ‘ভুল আইনি মানদণ্ড প্রয়োগ’ করেছে।

এদিকে, কংগ্রেস ও জনসাধারণের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কপিরাইট আইন ও এআই নীতিমালা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে অনুসন্ধান চালানোর উদ্দেশ্যে নতুন এক উদ্যোগ চালু করেছে ইউএসসিও।  সংস্থাটি এপ্রিল ও মে মাসে বেশ কিছু প্যানেল ভিত্তিক আলোচনা পর্ব আয়োজন করবে। এর পাশাপাশি, এই বছরের শেষে এআই’র ব্যবহার সম্পর্কিত কপিরাইট সমস্যাগুলো নিয়ে জনসাধারণের মন্তব্য নেওয়ার পরিকল্পনাও করেছে সংস্থাটি।