এআই ব্যবহারে তৈরি ছবিতে কপিরাইট দিয়েও বাতিল হল যুক্তরাষ্ট্রে

“ছবিগুলো কোনো ‘মানব শিল্পী’র তৈরি নয়। ফলে ওগুলোর জন্য প্রাথমিকভাবে দেওয়া কপিরাইট নিবন্ধন বাতিল করা হলো।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2023, 05:17 AM
Updated : 24 Feb 2023, 05:17 AM

লেখক ক্রিস্টিনা কাশতানোভার কমিক বই ‘জারিয়া অফ দ্য ডন’-এ কপিরাইট সুরক্ষা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কপিরাইট দপ্তর। সে সিদ্ধান্ত এখন ফিরিয়ে নিয়েছে সংস্থাটি।

বইটির বিভিন্ন ছবি তৈরি হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইমেজ জেনারেটর ‘মিডজার্নি’তে দেওয়া টেক্সট প্রম্পটের মাধ্যমে।

ক্রিস্টিনার আইনজীবীর কাছে দপ্তরের সহযোগী রেজিস্টার রবার্ট কাসুনিকের পাঠানো চিঠি বলছে, ‘ওই প্রকাশনার লিখিত ও বিভিন্ন ভিজুয়াল উপাদান বাছাই, সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার কৃতিত্ব’ কাশতানোভার।

“তবে ছবিগুলো কোনো ‘মানব শিল্পী’র তৈরি নয়। ফলে ওগুলোর জন্য প্রাথমিকভাবে দেওয়া কপিরাইট নিবন্ধন বাতিল করা হলো।”

প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জের প্রতিবেদন বলছে, এই সিদ্ধান্তের পক্ষে কপিরাইট দপ্তর আগের বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ‘অ-মানব আধ্যাত্মিক প্রাণ’ বা ‘পবিত্র আত্মা’কে কপিরাইটের দাবিদার হিসেবে উপস্থাপন করা আবেদন। আরও আছে ‘বানরের সেলফি নেওয়ার’ ঘটনা যেখানে কপিরাইট মেলেনি।

কপিরাইট দপ্তর বলছে, সামাজিক মাধ্যমে কাশটানোভার পোস্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন অনুমোদিত হওয়ার পর তারা জানতে পেরেছে, এগুলো মিডজার্নির মাধ্যমে তৈরি। এর ফলাফল হিসেবে, এই সম্পর্কে বাড়তি তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি।

বইয়ের প্রচ্ছদে মিডজার্নি ও কাশটানোভা দুইজনের নাম উল্লেখ থাকলেও ওই চিঠি অনুসারে, কপিরাইট দপ্তরের কাছে জমা দেওয়া বইয়ের ১৮ পৃষ্ঠার মধ্যে কেবল এক জায়গাতেই মিডজার্নি’র নাম দেখা গেছে। আর এই কাজের প্রচ্ছদে ‘মিডজার্নি’ শব্দটি উল্লেখ থাকলেও, এ থেকে বোঝা সম্ভব নয় যে এর কিছু অংশ না কি পুরো কাজই এআই টুলের মাধ্যমে তৈরি।

চিঠির শেষে কাসুনিক লিখেছেন, কপিরাইট সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে ‘ভুল বা অসমাপ্ত তথ্যের’ ওপর ভিত্তি করে। আর সে কারণেই কপিরাইট বাতিল হচ্ছে।

এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন বইয়ের শিল্পী কাশটানোভা। একে মিডজার্নি ও একই ধরনের টুল ব্যবহার করা ব্যক্তিদের জন্য একটি ‘ভালো দিন’ বলে আখ্যা দেন তিনি।

“আপনি ‘জারিয়া’র মতো বইয়ে নিজের তৈরি ছবি দিলে তা কপিরাইটযোগ্য। গল্পটি যতক্ষণ না পুরোপুরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি, তা-ও কপিরাইটযোগ্য।” – লেখেন তিনি।

তবে, কপিরাইট দপ্তর তার ছবিগুলোর আলাদা করে কপিরাইট না দেওয়ায় হতাশাও ব্যক্ত করেছেন তিনি।

প্রতিবেদন বলছে, মিডজার্নি কীভাবে শব্দের প্রম্পট বিভিন্ন ‘ভেঙে’ প্রশিক্ষিত ডেটার সঙ্গে তুলনার মাধ্যমে ছবি তৈরি করে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে কপিরাইট দপ্তর।

অন্যান্য এআই প্রকল্পের সঙ্গে মিডজার্নির ভিন্নতার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে চিঠিতে।

“মিডজার্নি ব্যবহার করে সুনির্দিষ্ট আউটপুট কেমন হবে সেটি ঠিকঠাক বলতে না পারার বিষয়টিই শিল্পীদের ব্যবহৃত অন্যান্য টুলের চেয়ে মিডজার্নিকে আলাদা করে তোলে।”

কাশতানোভা কিছু সংখ্যক ছবি এডিট করায় সেগুলো কপিরাইটের যোগ্যতা পাবে, এমন দাবিও নাকচ করেছে দপ্তর। কারণ তার পরিবর্তনগুলো হয় ‘একেবারেই নগন্য ছিল ও কপিরাইট সুরক্ষায় যথেষ্ট সৃজনশীলতা দেখাতে পারেনি ’ অথবা জমা দেওয়া তথ্যে তিনি নিজের কৃতিত্ব নিশ্চিত করতে পারেননি।

“দপ্তরের যুক্তিতে বেশ কিছু সংখ্যক ত্রুটি আছে। এর কয়েকটি বৈধ, কয়েকটি যুক্তিসম্মত।” --এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন কাশতানোভার আইনজীবী লিন্ডবার্গ।

কাশতানোভা তার পোস্টের শেষে বলেন, “আমার আইনজীবীরা কপিরাইট অফিসকে বিষদ ব্যাখ্যা দেবেন যে, কীভাবে মিডজার্নি ব্যবহার করে তৈরি ছবিগুলো আমার সৃজনশীলতার সরাসরি প্রকাশ এবং সে কারণে কপিরাইটযোগ্য।”