‘গ্লোবুলার ক্লাস্টার’ তারা’র এমন একটি গুচ্ছ, যেখানে কাছাকাছি অনেকগুলো তারা এক সঙ্গে জটলা বেঁধে থাকে। এতে তারার সংখ্যা লাখ লাখও হতে পারে।
Published : 05 Jun 2024, 02:07 PM
মহাকাশের বিভিন্ন গ্যালাক্সিতে তারাগুচ্ছ বা তারার ক্লাস্টারে মাঝারি ভরের ব্ল্যাক হোলের রহস্য উদঘাটনের দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।
‘ইউনিভার্সিটি অফ টোকিও’-এর অধ্যাপক মিচিকো ফুজি’র নেতৃত্বে একদল গবেষক এক সম্ভাব্য উপায় উদ্ভাবন করেছেন, যা ‘গ্লোবুলার ক্লাস্টার’-এ ‘ইন্টারমিডিয়েট-মাস-ব্লাক হোলস (আইএমবিএইচএস)’ বা মাঝারি ভরের ব্ল্যাক হোল তৈরি হতে পারে।
‘গ্লোবুলার ক্লাস্টার’ তারা’র এমন একটি গুচ্ছ, যেখানে কাছাকাছি অনেকগুলো তারা এক সঙ্গে জটলা বেঁধে থাকে। এতে তারার সংখ্যা লাখ লাখও হতে পারে।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত এ গবেষণার বিভিন্ন সিমুলেশন থেকে ইঙ্গিত মেলে, এইসব ব্ল্যাক হোল কীভাবে তৈরি হতে পারে।
তারাগুচ্ছের ক্লাস্টার কীভাবে তৈরি হয় তা পরীক্ষার জন্য উন্নত কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করেছেন গবেষকরা। এতে গবেষকরা ‘ঘন আণবিক মেঘ’-এর উপর নজর দিয়েছেন। এমন অঞ্চল, যেখানে তারা’র জন্ম হয়।
এ সিমুলেশনে প্রথমবারের মতো বিভিন্ন ক্লাস্টারকে বিশদভাবে দেখার সুযোগ মিলেছে। যেখানে দেখা যায়, এইসব ঘন মেঘ বিশাল আকারের তারা তৈরি করতে পারে।
পরবর্তী সময়ে এসব তারা মাঝারি ভরের ব্ল্যাক হোলে বিবর্তিত হতে পারে।
আগের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে ইঙ্গিত মিলেছিল, তারার কিছু বড় ক্লাস্টার এইসব মাঝারি ভরের ব্ল্যাক হোলকে প্রভাবিত করতে পারে। এসব ব্ল্যাক হোলের ভর সূর্যের ১০০ থেকে ১০ হাজার গুণের মধ্যে রয়েছে।
তবে, এদের অস্তিত্ব মেনে নেওয়ার জন্য শক্তিশালী তাত্ত্বিক কোনো প্রমাণ মেলেনি। বিশেষ করে, যেগুলোর ভর সূর্যের ভরের এক হাজার থেকে ১০ হাজার গুণের মধ্যে রয়েছে সেগুলোর জন্য।
এসব প্রমাণের অভাব থাকার কারণ, এ ধারণাটি নিয়ে আরও অনুসন্ধান করতে আগ্রহী হয়েছেন গবেষকরা।
এই ক্লাস্টারে তারার জন্ম একেবারেই শান্তভাবে ঘটেনি। গ্লোবুলার ক্লাস্টার’-এর ঘন অবস্থার কারণে এখানে তারা’র সংঘর্ষ হয় ও ঘন ঘন তা একে অপরের সঙ্গে মিলে যায়।
এ ধরনের বারবার হতে থাকা সংঘর্ষ ‘রানঅ্যাওয়ে কলিশন’ হিসাবে পরিচিত, যা অনেক বড় আকারের তারা তৈরি করতে পারে, যেখানে প্রতিটি তারা’র ভর সূর্যের ভরের এক হাজার গুণ হতে পারে।
এইসব বিশাল ভরের বিভিন্ন তারা পরবর্তীতে মাঝারি ভরের ব্ল্যাক হোলে রূপান্তরিত হতে পারে। তবে, আগের বিভিন্ন সিমুলেশন থেকে ইঙ্গিত মিলেছিল, বিভিন্ন তারা’র গ্যাস প্রবাহ নিজেদের ভরের বেশিরভাগ অংশ আশপাশে সরিয়ে ফেলে, যা এদের যথেষ্ট বড় হতে বাধা দেয়।
বিভিন্ন আইএমবিএইচ সত্যিই বেঁচে থাকতে পারে কিনা তা দেখার জন্য গবেষকদের এ ক্লাস্টার গঠন প্রক্রিয়াটি বিশদভাবে অনুকরণ করতে হবে বলে প্রতিবেদন লিখেছে নোরিজ।
এ ধরনের সিমুলেশন তৈরি করা চ্যালেঞ্জিং। কারণ, এতে অনেক বেশি কম্পিউটিং ক্ষমতা প্রয়োজন। প্রতিটি তারা’কে আলাদাভাবে মডেল করার জন্য গবেষণা দলটি এক নতুন সিমুলেশন কোড তৈরি করেছেন, যা গবেষকদের এই ঘন পরিবেশে তারা’র সংঘর্ষকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছে।
গবেষকদের এসব সিমুলেশনে দেখা যায়, বিভিন্ন ‘রানঅ্যাওয়ে কলিশনের ফলে অনেক বড় আকারের তারা’র গঠন হয়, যা পরে মাঝারি ভরের ব্ল্যাক হোলে রূপান্তরিত হয়ে যায়। পাশাপাশি সিমুলেশনে দেখা ভরের অনুপাত, বাস্তবিক অর্থে তারা’র ক্লাস্টারে দেখা অনুপাতের সঙ্গে মিলে যায়।
ফুজি ও গবেষণা দলের চূড়ান্ত লক্ষ্য, আলাদাভাবে তারা’র মডেল তৈরি করে সব ধরনের ছায়াপথকে সিমুলেশন করা। তবে, সবচেয়ে ভাল মানের সুপারকম্পিউটার থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে মিল্কিওয়ের আকারের বিভিন্ন ছায়াপথকে সিমুলেশন করা এখনও কঠিন।
এদিকে, গবেষকদের দাবি, বামন ছায়াপথের মতো বিভিন্ন ছোট আকারের ছায়াপথের সিমুলেশন করা সম্ভব। প্রাথমিক মহাবিশ্বে গঠিত প্রথম তারার ক্লাস্টার পরীক্ষা করার লক্ষ্যও রেখেছেন গবেষকরা। এটি এমন অঞ্চলও হতে পারে, যেখানে আইএমবিএইচ-এর জন্ম হয়।