পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ গণনা ক্রয় মূল্যে: বাংলাদেশ ব্যাংক

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়ার দুদিনের মধ্যে সার্কুলার দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2022, 11:56 AM
Updated : 4 August 2022, 11:56 AM

অনেক আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে অবশেষে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাবের গণনা ক্রয়মূল্যে করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে বহুল আলোচিত এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের শেয়ারধারণের হিসাব করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা (এক্সপোজার লিমিট) নির্ধারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়ার দুদিনের মধ্যে শেয়ারের বাজার মূল্যের পরিবর্তে ‘ক্রয় মূল্য’ বিবেচনা করার বিষয়ে সায় দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এতদিন ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ বাজারমূল্য ধরে গণনা করে ঊর্ধ্বসীমা হিসাব করা হত।

বাংলাদেশের ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার নিয়্ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাজার সংশ্লিষ্ট একটি অংশের দীর্ঘদিনের চাওয়া পূরণ হতে চলেছে।

তবে ব্যাংকের বিনিয়োগ ‘ক্রয় মূল্যে’ গণনা করা নিয়ে বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদদের অনেকের দ্বিমত রয়েছে।

এ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব চলার বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্য ছিল। নতুন গভর্নর হিসেবে আব্দুর রউফ তালুকদারের দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের কম সময়ের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত এল।

সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নেতিবাচক হতে থাকলে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন শুরু হয়। তখনও ব্যাংকের ‘এক্সপোজার লিমিটের’ বিষয়টি সামনে আসে। পতন ঠেকাতে ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে আবারও বিএসইসি শেয়ারের দাম কমার সর্বনিম্ন দর ফ্লোরপ্রাইস আরোপ করে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, “ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ধারা ২৬ক এর উপ-ধারা (১) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ব্যাংক-কোম্পানি কর্তৃক অন্য কোনো কোম্পানির শেয়ারধারণের হিসাবায়নে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা (এক্সপোজার লিমিট) নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক ক্রয়কৃত মূল্যকেই ‘বাজারমূল্য’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।”

এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে সার্কুলারে বলা হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, শেয়ারের ক্রয়মূল্যে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাব করা হলে পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আরও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে।

বাজারমূল্যে হিসাব করার সমস্যা হল, ব্যাংক তার বিনিয়োগসীমার মধ্যে শেয়ার কিনলেও দাম বেড়ে সীমা অতিক্রম করলে তা বিক্রি করে দিতে হয়। এটা ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পথে এক ধরনের বাধা এবং তা পুঁজিবাজারে বিক্রির চাপ বাড়ালে চাপ তৈরি হয়।

বৃহ্স্পতিবারের সার্কুলারে বলা হয়, সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সার্কুলারে উল্লেখ করা কোনো ব্যাংক-কোম্পানির সলো (একক) ও কনসোলিটেডেড (সমন্বিত) উভয় ভিত্তিতে শেয়ারধারণের ঊর্ধ্বসীমা (এক্সপোজার লিমিট) নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট শেয়ার, করপোরেট বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ড ও অন্যান্য পুঁজিবাজার নিদর্শনপত্রের ‘বাজারমূল্য’ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৪৫ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়।

এক্সপোজার লিমিট হিসাব করার এ নিয়ম পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংককে তাগিদ দিয়ে আসছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

কমিশনের যুক্তি, ক্রয়মূ্ল্যে এক্সপোজার লিমিট হিসাব করলে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। আর হঠাৎ করেই ব্যাংকের কোনো সিকিউরিটিজ বিক্রি করার প্রয়োজন পড়বে না।

Also Read: পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা ‘ক্রয় মূল্যে’ ধরার প্রস্তাবে সায়

Also Read: ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা ‘ক্রয় মূল্যে’ গণনার সিদ্ধান্ত হয়েছে: বিএসইসি চেয়ারম্যান

অবশ্য উল্টো মতও আছে ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদদের কারও কারও। তাদের মতে, নিয়মের এ পরিবর্তনে সুবিধা খুব একটা হবে না, বরং তাতে কারসাজির সুযোগ বাড়বে এবং দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকের বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

এর আগে মঙ্গলবার বাজার মূল্যের পরিবর্তে ‘ক্রয় মূল্য’ বিবেচনা করার প্রস্তাবে সম্মতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।