পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা ‘ক্রয় মূল্যে’ ধরার প্রস্তাবে সায়

এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়্ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দীর্ঘদিনের চাওয়া পূরণ হতে চলেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2022, 06:18 AM
Updated : 3 August 2022, 06:18 AM

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা (এক্সপোজার লিমিট) নির্ধারণে সিকিউরিটিজের বাজার মূল্যর পরিবর্তে ‘ক্রয় মূল্য’ বিবেচনা করার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়্ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দীর্ঘদিনের চাওয়া পূরণ হতে চলেছে।

বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ বিষয়ে সম্মতি দিয়ে মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ হিসাব করতে বাজারমূল্য ধরে ঊর্ধ্বসীমা গণনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সমস্যা হল, ব্যাংক তার বিনিয়োগসীমার মধ্যে শেয়ার কিনলেও দাম বেড়ে সীমা অতিক্রম করলে তা বিক্রি করে দিতে হয়। এটা ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার পথে এক ধরনের বাধা।

আবার ব্যাংকের বিনিয়োগের আকার যেহেতু বড় হয়, নিয়মের কারণে শেয়ার বিক্রি করে দিতে গেলে বাজারে তৈরি হয় চাপ।

সে কারণে বিএসইসি শেয়ারের ক্রয়মূল্য ধরে এক্সপোজার লিমিট হিসাব করার নিয়ম চাইছিল। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই।

তাই এ বিষয়ে মত জানতে চেয়ে ১৭ জুলাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তাতে সায় দিয়ে মঙ্গলবার চিঠি দিল গভর্নরকে।

এখন নতুন নিয়ম বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদ-মর্যাদার কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষরে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। তারপর ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ সমন্বয় করতে পারবে।

এর আগে এ বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে বাংলদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বিএসইসির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

গত রোববার ‘সিএমজেএফ টক’ এ তিনি বলেছিলেন, “ত্রি-পক্ষীয় সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সাবেক গভর্নর ফজলে কবিরের সময়েই অর্থ মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছিল। বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার তখন অর্থ সচিব ছিলেন।

“অর্থ মন্ত্রণালয় এখন বিষয়টি আইনি দিক বিশ্লেষণ করে গেজেট প্রকাশ বা বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সার্কুলার জারি করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকে পাঠানো চিঠিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বলেছে, “নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ২৬ক ধারায় ব্যাংক কোম্পানি কর্তৃক ক্রয়কৃত মূল্যকেই ‘বাজারমূল্য’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।”

ব্যাংক কোম্পানি আইনে যা আছে

আইনের ২৬ ধারায় বলা আছে-

ব্যাংক কোম্পানি অন্য কোন কোম্পানির শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত পরিমাণের অধিক শেয়ার ধারণ করিবে না, যথা-

(ক) ধারণকৃত শেয়ার বাজারমূল্যে উক্ত ব্যাংক-কোম্পানির আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংস এর মোট পরিমাণের পাঁচ শতাংশ,

(খ) উক্ত কোম্পানির আদায়কৃত মূলধনের দশ শতাংশ

তবে শর্ত থাকে যে, উপরোক্ত দফা (ক) ও দফা (খ) এ শেয়ার ধারণের পরিমাণ আদায়কৃত মূলধনের দশ শতাংশের বেশি হইতে পারিবে না।

আরো শর্ত থাকে যে, এই আইন কার্যকর হইবার তিন বছরের মধ্যে প্রত্যেক ব্যাংক-কোম্পানি এমনভাবে উহার পুঁজিবাজার বিনিয়োগ কোষ পুনর্গঠন করিবে যাহাতে ধারণকৃত সকল প্রকার শেয়ার, কর্পোরেট বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ড ও অন্যান্য পুঁজিবাজার নিদর্শনপত্রের মোট বাজারমূল্য এবং পুঁজিবাজার কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত নিজস্ব সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বা কোম্পানিসমূহ বা অন্য কোন কোম্পানি বা কোম্পানিসমূহে প্রদত্ত ঋণ সুবিধা এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত কোন প্রকার তহবিলে প্রদত্ত চাঁদার পরিমাণ সমষ্টিগতভাবে উহার আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংস এর মোট পরিমাণের ২৫(পঁচিশ) শতাংশের অধিক না হয়।

এ বিধান লংঘন করলে বিশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। একাধিকবার নিয়ম লংঘনে প্রত্যেক দিনের জন্য অতিরিক্ত পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার সুযোগ রয়েছে।

এক্সপোজার লিমিট হিসাব করার এ নিয়ম পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংককে তাগিদ দিয়ে আসছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

কমিশনের যুক্তি, ক্রয়মূ্ল্যে এক্সপোজার লিমিট হিসাব করলে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা বাড়ানোর সুযোগ থাকবে। আর হঠাৎ করেই ব্যাংকের কোনো সিকিউরিটিজ বিক্রি করার প্রয়োজন পড়বে না।

অবশ্য উল্টো মতও আছে ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদদের কারও কারও। তাদের মতে, নিয়মের এ পরিবর্তনে সুবিধা খুব একটা হবে না, বরং তাতে কারসাজির সুযোগ বাড়বে এবং দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকের বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।