ইবিএল ২৫ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংক সাড়ে ১৭ শতাংশ এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
Published : 05 Apr 2023, 08:03 PM
মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, আমদানি কমে যাওয়ায় এলসির মার্জিন কমে যাওয়া, পুঁজিবাজারে মন্দা- এতসব দুর্বিপাকের মধ্যেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরও তিনটি ব্যাংক আগের বছরের চেয়ে বেশি আয় করে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে বুধবার ইস্টার্ন ব্যাংক বা ইবিএলের পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের জন্য ২৫ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংক সাড়ে ১৭ শতাংশ এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ জন্য ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
এর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংক সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ হিসেবে শেয়ার প্রতি এক টাকা ২৫ পয়সা এবং সমপরিমাণ বোনাস হিসেবে প্রতি ২০০ শেয়ারে ২৫টি শেয়ার দেবে।
প্রাইম ব্যাংক শেয়ার প্রতি এক টাকা ৭৫ পয়সা নগদ এবং শাহজালাল ১২ শতাংশ নগদ হিসেবে এক টাকা ২০ পয়সা এবং ৩ শতাংশ বোনাস হিসেবে প্রতি একশ শেয়ারে তিনটি শেয়ার দেবে।
ব্যাংক তিনটি এক আগের বছরও একই হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে শাহজালাল ১০ শতাংশ নগদের পাশাপাশি বোনাস শেয়ার দিয়েছিল ৫ শতাংশ।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর ব্যাংক খাত নিয়ে অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানির শেয়ারে আগ্রহ হারিয়েছেন। এমনকি তালিকাভুক্তির দিনই শেয়ারদর ১০ শতাংশ কমে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
তবে এখন পর্যন্ত যে পাঁচটি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তাদের সবার ব্যালেন্স শিট আগের বছরের তুলনায় স্ফীত হয়েছে।
এর আগে ব্যাংক এশিয়া এবং উত্তরা ব্যাংক আগের বছরের চেয়ে বেশি আয় করার তথ্য জানিয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক এশিয়ার বিনিয়োগকারীদেরকে শেয়ার প্রতি দেড় টাকা এবং উত্তরা ব্যাংক শেয়ার প্রতি এক টাকা ৪০ পয়সার পাশাপাশি ১৪ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে।
লোকসানি আইসিবি ইসলামী ব্যাংক মুনাফার মুখ দেখতে না পারলেও লোকসান কমাতে পেরেছে।
শাহজালালের মুনাফা বাড়ল প্রায় শতকোটি টাকা
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শাহজালাল ব্যাংক শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা ৩১ পয়সা আয় করতে পেরেছে। এক হাজার ৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ব্যাংকটি কর পরবর্তী মুনাফা করেছে ৩৫৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বেশি।
আগের বছর শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৪০ পয়সা হারে ব্যাংকটি ২৫৯ কোটি টাকার কিছু বেশি মুনাফা করতে পেরেছিল। এই হিসাবে তাদের আয় বেড়েছে ৯৮ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ আয় বেড়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ।
এ নিয়ে টানা গত পাঁচ বছর আয় বাড়ল ব্যাংকটির। ২০১৮ সালে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৪৭ পয়সা, পরের বছর ১ টাকা ৭৮ পয়সা এবং ২০২০ সালে ১ টাকা ৯৫ পয়সা আয় করেছিল ব্যাংকটি।
আয়ের পাশাপাশি সম্পদমূল্যও বেড়েছে শাহজালালের। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটি প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ১৮ টাকা ৩৫ পয়সা হিসেবে প্রায় এক হাজার ৯৮৩ কোটি টাকার সম্পদ ছিল। এক বছর পর তা বেড়ে শেয়ারপ্রতি ২০ টাকা ৩২ পয়সা হিসেবে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৯৫ কোটি টাকার বেশি।
আগামী ২৭ এপ্রিল যাদের বিও হিসাবে শেয়ার থাকবে তারাই লভ্যাংশ পাবেন। অর্থাৎ সেদিনই হবে লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট। এই লভ্যাংশ চূড়ান্ত করতে বার্ষিক সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে আগামী ২৪ মে।
প্রাইমের মুনাফা বেড়েছে প্রায় ৭৫ কোটি
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ৫৩ পয়সা আয় করতে পেরেছে। এই হিসেবে এক হাজার ১৩২ কোটি ২৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ব্যাংকটি কর পরবর্তী ৩৯৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করতে পেরেছে।
আগের বছর শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৮৭ পয়সা হিসেবে ব্যাংকটি আয় করেছিল ৩২৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ আয় বেড়েছে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা বা প্রায় ২৩ শতাংশ।
প্রাইম ব্যাংকের এই আয় গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ আর টানা চার বছর আয় বেড়েছে আগের বছরের চেয়ে বেশি।
২০১৭ সালে ব্যাংকটি শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৪৭ পয়সা, পরের বছর ১ টাকা ৬১ পয়সা আয় করতে পেরেছিল।
আয়ের পাশাপাশি সম্পদ বেড়েছে ব্যাংকটির। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি সম্পদ ছিল ২৮ টাকা ৪১ পয়সা। আগের বছর যা ছিল ২৬ টাকা ২৬ পয়সা।
আগামী ৩০ এপ্রিল যাদের হাতে শেয়ার থাকবে, তারাই লভ্যাংশ পাবেন। লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে আগামী ২৮ মে।
ইবিএলের আয় খুব বেশি বাড়েনি
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ৪ টাকা ৭৭ পয়সা আয় করতে পেরেছে। এই হিসেবে এক হাজার ৭৩ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ব্যাংকটি কর পরবর্তী ৫১১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করতে পেরেছে।
আগের বছর শেয়ার প্রতি ৪ টাকা ৭৬ পয়সা হিসেবে ব্যাংকটি আয় করেছিল ৫১০ কোটি ৭৯ লাখ টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ আয় বেড়েছে এক কোটি টাকার মতো।
ব্যাংকটির সম্পদমূল্য বেড়েছে কিছুটা। ২০২১ সাল শেষে ৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার সম্পদ ছিল ব্যাংকটির। এক বছর পর তা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।
আগামী ৩ মে যাদের হাতে শেয়ার থাকবে, তারাই লভ্যাংশ পাবেন। লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে আগামী ৩১ মে।