“বিনিয়োগের সময় তো আরও আগেই এসেছে। গত তিন মাসে যারা বিনিয়োগ করেছেন, তারা ভালো করেছেন”, বলেন আহমেদ রশীদ লালী।
Published : 16 Jul 2023, 03:19 PM
স্কয়ার ফার্মার মত বড় মূলধনী কোম্পানি সাত মাস পর ক্রেতা খুঁজে পাওয়ায় টানা দ্বিতীয় দিন সূচক ও লেনদেনের উত্থান দেখল পুঁজিবাজার।
কোম্পানিটির বিপুল পরিমাণ শেয়ার লেনদেন হলেও দর বেড়েছে কমই। তবে দামে সামান্য হেরফেরেই সূচকে পড়েছে বড় প্রভাব।
সাত মাস ধরে ফ্লোর প্রাইসে প্রায় ক্রেতাশূন্য অবস্থায় থাকার পর বৃহস্পতিবার ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ১১৯টি শেয়ার হাতবদল হয় কোম্পানিটির। গত এক বছরে এটিই সর্বোচ্চ লেনদেন।
সেদিন দর খুব একটা বাড়েনি, গত বছরের ২৯ নভেম্বরের পর প্রথমবারের মতো ৬০ পয়সা দর বাড়ে শেয়ারটির।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার দর বেড়েছে ১ টাকা ৭০ পয়সা, হাতবদল হয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৪৯টি শেয়ার। এই পরিমাণ দর বৃদ্ধিতেই সূচকে যোগ হয়েছে ৩.২৪ পয়েন্ট।
তবে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইতে তেজ দেখিয়েছে মূলত বীমা খাত, যেটি গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সংশোধনে ছিল। লেনদেনে শীর্ষে না থাকলেও দর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্য সব খাতকে ছাড়িয়ে গেছে এটি।
জীবন বীমার ১৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ছয়টির, কমেছে ৫টির, আগের দিনের দরে ছিল চারটি। সাধারণ বীমার ৪২ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৬টির, কমেছে একটির, চারটি ছিল আগের দিনের দরে আর লেনদেন হয়নি এটির।
সব মিলিয়ে এদিন ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইক্স বেড়েছে ২৬ পয়েন্ট, সূচকের অবস্থান এখন ৬ হাজার ৩৬৭ পয়েন্ট, যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ। গত বছরের ৮ নভেম্বরের পর এটি সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। সেদিন সূচক ছিল এখনকার চেয়ে ১৭ পয়েন্ট বেশি।
সব মিলিয়ে এদিন বেড়েছে ১৩০টি কোম্পানির দর, কমেছে ৬১টির। আগের দিনের দরে ছিল ১৯২টি কোম্পানি। সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে ৩৮৩টি কোম্পানির শেয়ার। গত বছরের ৩১ জুলাই ফ্লোর প্রাইস দেওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হলো এদিন।
মাস চারেক আগেও কোনো দিন একশটি, কোনোদিন তার চেয়েও বেশি সংখ্যক কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। রিজার্ভের দ্রুত পতন, বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তায় নানামুখী গুজবে প্রভাবিত হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। অর্থনৈতিক সংকট কাটার আভাস মিলতে শুরু করার পর ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৯৩৩ কোটি ৭৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১৮৩ কোটি টাকা বেশি।
ডিএসইর সাবেক জ্যেষ্ঠ ভাইস-প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশীদ লালী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেশ কয়েক মাস পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থমকে ছিল। তবে বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হচ্ছেন। স্কয়ার ফার্মার মতো কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা খুঁজে পাওয়া পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক দিক।
“তাদের আর্থিক প্রতিবেদন আসছে, আগামী মাসে লভ্যাংশের ঘোষণা আসবে। এবার কেনিয়া ও ফিলিপাইনের ফ্যাক্টরির মুনাফাও যোগ হবে। সব মিলিয়ে পুঁজিবাজারের জন্য এখন স্বস্তিকর সময়।”
বিনিয়োগ করার সময় তাহলে এসেছে?- এমন প্রশ্নে অভিজ্ঞ এই বিনিয়োগকারী বলেন, “বিনিয়োগের সময় তো আরও আগেই এসেছে। গত তিন মাসে যারা বিনিয়োগ করেছেন, তারা ভালো করেছেন।”
বীমা ফিরল তেজ নিয়ে
রোজার ঈদের পর থেকে টানা কয়েক সপ্তাহ পুঁজিবাজারে ছিল বীমা খাতের প্রাধান্য। দর বৃদ্ধি বা লেনদেন-দুই দিক দিয়েই সব খাতকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল এটি।
তবে সম্প্রতি লেনদেনের শীর্ষস্থান হারিয়ে ফেলার পাশাপাশি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সংশোধনে বিনিয়োগকারীদের বেশ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছিল।
রোববারের লেনদেন বিশেষ করে সাধারণ বীমার বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি দিয়েছে অনেকটাই। এদিন ৯ শতাংশের বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১৬টি কোম্পানির মধ্যে ১০টিই বীমা খাতের। এর প্রতিটিই সাধারণ বীমা কোম্পানি।
আরও একটি কোম্পানির শেয়ারদর ৮ শতাংশের বেশি একটির ৬ শতাংশের বেশি, আটটির ৫ শতাংশের বেশি, তিনটির চার শতাংশের বেশি, পাঁচটির বেড়েছে তিন শতাংশের বেশি।
সাধারণ বীমা খাতে লেনদেন হয়েছে ৬৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জীবন বীমায় এই উত্থানের প্রভাব কম, যদিও লেনদেনে এগিয়ে এই কোম্পানিগুলোই। ১৫টি কোম্পানির ৭৩ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
একটি কোম্পানির দর ৩ শতাংশের বেশি দুটির দুই শতাংশের বেশি বেড়েছে।
সব মিলিয়ে বীমা খাতে লেনদেন হয়েছে ১৩৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা ছিল খাতওয়ারী লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে।
শীর্ষে ছিল খাদ্য খাত, সেখানকার ২১ কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১৫৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। দর বেড়েছে ১৩টি কোম্পনির, কমেছে ৭টির আর একটি ছিল ফ্লোর প্রাইসে।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা হাতবদল হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। প্রকৌশল খাতে লেনদেন ছিল ৯৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
এছাড়া ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৮৪ কোটি ৮৫ লাখ, বস্ত্র খাতে ৭১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা হাতবদল হয়েছে।
আর কোনো খাত ৫০ কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করতে পারেনি।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে যারা
শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানিই সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে।
কোম্পানিগুলো হলো ইসলামিক কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল ফিড মিলস, আজিজ পাইপস, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ও কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স।
পতনের শীর্ষে যারা
এই তালিকার শীর্ষে থাকা মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ দর হারিয়েছে ৫.৩১ শতাংশ। মুন্না অ্যাগ্রো হারিয়েছে ৪.৭ এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪.৬৯ শতাংশ দর হারিয়েছে রূপালী লাইফ।
এপেক্স ফুটওয়্যার, জেনারেশন নেক্সট, সিএনএ টেক্সটাইল সিএপিএম আইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ৩ শতাংশের বেশি এবং প্রগ্রেসিভ লাইফ ও সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা দর হারিয়েছে ২ শতাংশের বেশি।