ফুয়াং ফুডসের দর আট কর্মদিবসে ৪২ শতাংশ এবং রূপালী ব্যাংকের দর ৭ কর্মদিবসে বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।
Published : 13 Jul 2023, 04:12 PM
একেক দিন একেক খাতে আগ্রহ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। তবে বছরের পর বছর ধরে ভালো ব্যবসা করতে পারছে না, লোকসান দিচ্ছে, এমন কোম্পানিতেই ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।
শক্তিশালী মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারে ক্রেতা না থাকার মধ্যেও বেশ কিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ার অস্বাভাবিক হারে লাফাচ্ছে।
কিছু কোম্পানির শেয়ারদর বেড়ে গিয়ে আবার কমছে, তবে কিছু কোম্পানির শেয়ারদর টানা বাড়ছেই।
কোরবানির ঈদের আগে থেকে শুরু হওয়া এই প্রবণতা চালু থাকল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসেও। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দিনের বেশিরভাগ সময় সূচক কমে লেনদেন হলেও একেবারে শেষ মুহূর্তে আগের দিনের চেয়ে চার পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় লেনদেন।
তবে দর বেড়েছে এমন কোম্পানির তুলনায় কমে যাওয়া কোম্পানির সংখ্যা অনেকটাই বেশি।
এদিন বেড়েছে ৮০টি কোম্পানির শেয়ারদর, দর হারিয়েছে ১০৬টি। আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে ১৮৫টি কোম্পানি, যার সিংহভাগই আছে ফ্লোর প্রাইসে।
সব মিলিয়ে ৩৯৩ টি কোম্পানির মধ্যে হাতবদল হয়েছে ২৭১টির দর। তিনটির লেনদেন স্থগিত আছে আর একটির লেনদেনের ইতিহাস নেই। ফলে ক্রেতা ছিল না ১৯টি কোম্পানির।
লেনদেন কমে গেছে একশ কোটি টাকারও বেশি। সারাদিনে হাতবদল হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকার কিছু বেশি, আগের দিন যা ছিল ৮৫৫ কোটি টাকারও বেশি।
বেশ কিছুদিন পর লেনদেনে শীর্ষস্থান ফিরে পেয়েছে বীমা খাত। এতে লেনদেন হয়েছে ১১২ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ১৩০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
লেনদেনে সেরা হলেও দরপতন দেখেছে খাতটি। জীবন বীমার ১৫টি কোম্পানির মধ্যে লেনদেন হয়েছে ১৪টির। একটিরও দর বাড়েনি। চারটি ফ্লোর প্রাইসে আর ১০টির দর কমে লেনদেন শেষ হয়েছে। ৮৪ কোটি ৮০ লাখ টাকাই হাতবদল হয়েছে এই ১৫ কোম্পানিতে।
সাধারণ বীমায় হাতবদল হয়েছে ২৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। একটি কোম্পানির দর বেড়েছে, কমেছে ৩১টির। আটটি কোম্পানি আগের দিনের দরে আর দুটির লেনদেন হয়নি।
দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল আগের দিন শীর্ষে থাকা খাদ্য খাত। এই খাতের ২১টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১০৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ১৩৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
এই খাতেও দরপতন হয়েছে। চারটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৪টির দর। তিনটি ছিল আগের দিনের দরে।
যে চারটির দর বেড়েছে তার মধ্যে আছে আলোচিত ফুওয়াং ফুডস, যার দর আরও বেড়েছে ১০ শতাংশ। কেবল আট কর্মদিবসে ২৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে দর বেড়ে হয়ে গেল ৪২ টাকা ৯০ পয়সা।
কেবল আট কর্মদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৮২ শতাংশেরও বেশি।
৯৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা লেনদেন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের বিনিয়োগকারীরা মোটামুটি স্বস্তিতে ছিলেন। কারণ, এই খাতের তিনটি কোম্পানির দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ১৩টির, বাকি ১৭টি ছিল আগের দিনের দরে।
এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৭০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, প্রকৌশল খাতে ৫৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা, বস্ত্র খাতে ৫৯ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
প্রকৌশল খাতে ১৬ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৫টির দর, বস্ত্র খাতে ১৫টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৯টির দর।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে লোকসানি কোম্পানি
গত বছর ১০ টাকার শেয়ারে ২ টাকা ২১ পয়সা লোকসান দেওয়া ফুওয়াং ফুডসের দর আবার ১০ শতাংশ বেড়ে দর বৃদ্ধির শীর্ষে অবস্থান করছে।
গত বছরের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের ঘোষিত লভ্যাংশ অর্থসংকটের কারণে সময়মত বিতরণ করতে না পারা লুবরেফের দরও বেড়েছে প্রায় সমান হারে।
তৃতীয় অবস্থানে ছিল গত বছর লভ্যাংশ না দেওয়া রূপালী ব্যাংক। গোটা খাত ঘুমিয়ে থাকলেও সাত কর্মদিবসে শেয়ারদর ২৫ টাকা ২০ পয়সা থেকে হয়ে গেল ৩৪ টাকা ৪০ পয়সায়। বেড়েছে ৩৬ শতাংশেরও বেশি।
ফ্লোর প্রাইসে শেয়ারটির ক্রেতা ছিল না, এখন লেনদেন হচ্ছে ২০ লাখেরও বেশি।
লোকসানি কোম্পানি অলিম্পিক অ্যাকসেসোরিজ, খান ব্রাদার্স, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের দরও বেড়েছে সার্কিট ব্রেকারের কাছাকাছি।
লোকসানি ইয়াকিন পলিমান, বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে গত বছর সামান্য মুনাফা করা ঢাকা ডায়িং, কোনো বছর শেয়ার প্রতি ১ পয়সা, কোনো বছর ২ পয়সা মুনাফা দেখানো জেনারেশন নেক্সট এবং বন্ধ কোম্পানি খুলনা পেপার মিলসও ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায়।
এসব কোম্পানির শেয়ারদর ৭.০৮ শতাংশ থেকে ৮.৯৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
পতনের শীর্ষে ১০টির ৯টিই বীমা কোম্পানি
সবচেয়ে বেশি দর হারানো চারটি কোম্পানিই জীবন বীমার। শীর্ষ দশের ছয়টিই এই খাতের। বাকি চারটি কোম্পানির মধ্যে তিনটি সাধারণ বীমার। বাকি কোম্পানিটি খাদ্য খাদের শ্যামপুর সুগার। গত এক যুগেও লভ্যাংশ নেওয়ার ইতিহাস না কোম্পানিটির শেয়ারদর সম্প্রতি ৯০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা হয়ে গিয়েছিল।
সবচেয়ে বেশি ৯.৯০ শতাংশ দর হারিয়েছে প্রগ্রেসিভ লাইফ। অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সংকটে থাকা কোম্পানিটিকে জেড গ্রুপে নামিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
রূপালী লাইফের দরও দিনের পতনের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে কমেছে। ৮.৭৩ শতাংশ কমে দর দাঁড়িয়েছে ২১৫ টাকায়।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রাইম লাইফের দর কমেছে ৬.৪৬ শতাংশ। এছাড়া সোনালী লাইফের দর ৪ শতাংশের বেশি এবং পপুলার লাইফ ও মেঘনা লাইফের দর কমেছে তিন শতাংশের বেশি।
সাধারণ বীমার তিন কোম্পানির মধ্যে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স ৪.৮৮ শতাংশ, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স ৪.৪০ শতাংশ এবং ইসলামিক কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ৪.১৭ শতাংশ।
এই তালিকায় বীমা ছাড়া একমাত্র কোম্পানি ছিল শ্যামপুর সুগার, যেটি দর হারিয়েছে সাড়ে চার শতাংশের বেশি।