ডিএসইতে এক লাখের বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৮৪ কোম্পানির। ১০ হাজারের বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫৪ কোম্পানির
Published : 09 Oct 2023, 04:59 PM
অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ ও নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতি নিয়ে বিরোধের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ খরার মধ্যে আরও দরপতন দেখল বিনিয়োগকারীরা।
ফ্লোর প্রাইস দিয়ে প্রতিটি শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দেওয়া হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না সূচকের পতন। বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দরেও বিপুল সংখ্যক শেয়ারের ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স ২৪ পয়েন্ট পতনের পর সোমবার তা পড়েছে আরও ৭ পয়েন্ট।
সূচকের অবস্থান এখন ৬ হাজার ২২৯, যা গত ১৬ অগাস্টের পর সর্বনিম্ন। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ২২০ পয়েন্ট।
ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে বেশি থাকা ১০৭টি কোম্পানি দর হারিয়েছে এদিন। বিপরীতে বেড়েছে কেবল ২৯টি। আগের দিন ১২টি কোম্পানির দর বেড়েছিল, কমেছিল ১৫৪টির দর।
ফ্লোর প্রাইসে আগের দিনের দরে লেনদেন হওয়া কোম্পানির সংখ্যা ১৪৭টি।
ডিএসসিতে তালিকাভুক্ত ৩৯২টি কোম্পানির মধ্যে এদিন ২৮৩টি কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হয়েছে। বাকি কোস্পানিগুলোর মধ্যে তিনটির লেনদেন বন্ধ আর ১০৬ টির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।
যেসব কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা ছিল, তার মধ্যে এক লাখের বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে, এমন কোম্পানির সংখ্যা কেবল ৮৪টি। মোট ১৫৪টি কোম্পানির কমপক্ষে ১০ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
ফলে কার্যত এদিন আড়াইশরও বেশি কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা ছিল না।
ব্যাংক, মিউচুয়াল ফান্ড, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, প্রকৌশল আর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কোম্পানি বস্ত্র খাতের বিপুল সংখ্যক কোম্পানির শেয়ারে একদম ক্রেতা নেই।
তবে এই চিত্রের মধ্যেও সার্বিকভাবে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। সারাদিনে ডিএসইতে হাতবদল হয়েছে ৪২৬ কোটি ১০ লাখ ১২ হাজার টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন ছিল ৩৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
ফের ফ্লোরমুখি ‘মিছিল’
গত কয়েক মাসে যেসব কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইস ছাড়িয়ে গিয়েছিল, টানা দরপতনের কারণে সেগুলো আবার ফ্লোরে ফিরে আসছে।
৯ মাসেরও বেশি সময় ফ্লোর প্রাইস ২৫ টাকা ২০ পয়সায় আটকে থাকা রূপালী ব্যাংক গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ ফ্লোর ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ২৬ জুলাই দর দাঁড়ায় ৩৬ টাকা ৪০ পয়সায়।
সেই কোম্পানির শেয়ার দর হারিয়ে ফ্লোরের কাছাকাছি নেমে এসেছে। সোমবার ১০ পয়সা বাড়লেও দর দাঁড়িয়েছে ২৫ টাকা ৫০ পয়সায়, যা তার ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে কেবল ৩০ পয়সা বেশি।
সাধারণ বীমা খাতের স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স গত ৫ সেপ্টেম্বর তার ফ্লো প্রাইস ৪৩ টাকা ৩০ পয়সা ছাড়ায়। দর দ্রুতই ৫৮ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এখন উল্টো দৌড়ে দর স্থির হয়েছে ৪৩ টাকা ৯০ পয়সায়। আর ৬০ পয়সা কমলেই সেটি ফ্লোর ছুঁয়ে ফেলবে।
কেবল এই দুটি কোম্পানি নয়, আরও অনেক কোম্পানিই ফ্লোর প্রাইসে ফিরে এসেছে। মৌলভিত্তি দুর্বল থাকলেও লাফাতে লাফাতে দাম বাড়তে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর আরও দ্রুত কমছে।
অগাস্টের তৃতীয় সপ্তাহের শুরুতে ২৮ টাকা ৮০ পয়সা থেকে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষে ৬১ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের পতনও হচ্ছে দ্রুত। এক মাসেরও কম সময়ে শেয়ারের দর নেমে এসেছে ৩৭ টাকা ৪০ পয়সায়।
একইভাবে জুনের শুরুতে ১০ টাকার নিচে লেনদেন হওয়া লোকসানি খুলনা পেপার মিলসের দর জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহের শুরুতে ১৬ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। সেটিও এখন নেমে এসেছে ৯ টাকা ৩০ পয়সায়।
তবু দুর্বল কোম্পানির কদর
মৌলভিত্তি শক্তিশালী নয়, কোম্পানির ব্যবসার প্রবৃদ্ধি নেই, ভবিষ্যত পরিকল্পনাও ঘোষণা নেই, এমন কিছু কোম্পানিকে আবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে দেখা গেছে।
শেয়ার প্রতি ২৫ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণার পর লাফ দেওয়া দেশবন্ধু পলিমার আবার দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে। কেবল ২৫ কর্মদিবসে দর ২২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে উঠে গেছে ৩১ টাকায়। আজ বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।
দুই বছর ধরে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করা লোকসানি কোম্পানি লিবরা ইনফিউশনের শেয়ারদর আরও বেড়ে ছাড়িয়ে গেছে এক হাজার টাকা। দর বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি।
লোকসানি ইমাম বাটন ও ইনটেক অনলাইন এদিনও ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায়।
লেনদেনের হিসাবে এদিনও অন্য সব খাতকে ছাড়িয়ে গেছে সাধারণ বীমা। তবে আগের দিনের চেয়ে কমেছে হিস্যা। আগের দিন মোট লেনদেনের প্রায় ২৫ শতাংশ হয়েছিল এই খাতে। এদিন তা কমে ১৬ শতাংশে নেমেছে।
আগের তিন ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছির ৪০টি, এদিন দর হারিয়েছে আরও ৩০টি। আটটি আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে, যেগুলোর প্রায় সবগুলোই আছে ফ্লোর প্রাইসে। চারটির দর কিছুটা বেড়েছে।
জীবন বীমা খাতের ১৫টি কোম্পানির মধ্যে লেনদেন হয়নি চারটির। বাকিগুলোর মধ্যে দর হারিয়েছে ৭টি, চারটি হাতবদল হয়েছে ফ্লোর প্রাইসে।