ঈদ শেষে প্রথম দিন পুঁজিবাজারে সূচক, লেনদেন দুটোই বাড়ল। তবে লোকসানি স্বল্প মূলধনী, আর দুর্বল কোম্পানি শেয়ারদরে উত্থান, মৌলভিত্তিক কোম্পানির ‘ঘুমিয়ে থাকার’ চিত্র পাল্টায়নি এতটুকু।
সোমবার ৮৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি আর ৩৮টির দরপতনের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকে যোগ হলো ২৩ পয়েন্ট। গত ৫ মার্চ ৩৬ পয়েন্ট বাড়ার পর এই প্রথম এক দিনে সূচক এতটা বাড়ল।
ঈদের ছুটির শেষে সাধারণত লেনদেনের গতি থাকে না। এ দিক দিয়েও দিনটি ছিল ব্যতিক্রম। ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগের দিনের কাছাকাছি লেনদেনই হয়েছে। দিন শেষে হাতবদল হয়েছে ৫৫২ কোটি ৫২ লাখ ১৪ হাজার টাকার শেয়ার, ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে ছিল ৫৫৮ কোটি ৫৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
তবে ২০২টি কোম্পানির শেয়ার এদিনও ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হয়েছে, যেগুলোর লেনদেন আসলে খুব বেশি হয়নি। এই কোম্পানিগুলোতে হাতবদল হয়েছে কেবল ১০ কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
দর বেড়েছে এমন কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ৪১৮ কোটি ৫২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। আর দর হারানো কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১০০ কোটি ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।
এদিন মোট ৬৩টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি। আর নামমাত্র লেনদেন হয়েছে এমন কোম্পানির সংখ্যা দেড় শটিরও বেশি।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে ফের দুর্বল কোম্পানি
দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানির তিন লোকসানে। চারটির আয় ও লভ্যাংশের ইতিহাস ভালো নয়।
এর মধ্যে ৯.৯৯ শতাংশ বেড়ে দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় থাকা হাইডেলবার্গ সিমেন্ট গত সেপ্টেম্বরে সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ার প্রতি ৪ টাকা ২৭ পয়সা লোকসান দিয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ারদর ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগে ছিল ১৭৯ টাকা ১০ পয়সা। এক দিনে বাড়তে পারত ১৭ টাকা ৯০ পয়সা। এই পরিমাণই বেড়ে দর দাঁড়িয়েছে ১৯৭ টাকা।
টানা তিন বছর ধরে লোকসান দিয়ে আসা স্টাইলক্রাফট গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৭ পয়সা আয়ের তথ্য জানানোর দিন কোম্পানির দর বাড়ল ৯.৯৪ শতাংশ। তিন মাসে এই মুনাফা সত্ত্বেও কোম্পানিটি নয় মাসে শেয়ারপ্রতি এক টাকা ৩ পয়সা লোকসানে।
তিন অর্থবছরে লোকসান এবং চলতি অর্ধবছরের অর্ধবার্ষিকেও ঘুরে দাঁড়াতে না পারা খান ব্রাদার্সের শেয়ারও একদিনে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমায় গিয়ে লেনদেন শেষ করেছে। ৯.৮০ শতাংশ দর বেড়েছে কোম্পানিটির।
এছাড়া গত পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বছর কেবল এক শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেওয়া ন্যাশনাল ফিডমিলের দর বেড়েছে ৮.৯৮ শতাংশ।
গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ২ টাকা লভ্যাংশ দেওয়া ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারদর ২৯ টাকা ৮০ পয়সা বা ৮.৭৩ শতাংশ বেড়েছে।
গত এক যুগে কখনও শেয়ারপ্রতি ২ টাকার বেশি লভ্যাংশ দিতে না পারা স্বল্প মূলধনী এপেক্স ফুডের দর বেড়েছে ৮.৭৩ শতাংশ বা ২৮ টাকা ১০ পয়সা।
টাকা ১১ বছর শেয়ার প্রতি এক টাকা করে লভ্যাংশ দিয়ে আসা সোনালী আঁশের শেয়ারদর বেড়েছে ৩৯ টাকা ৩০ পয়সা বা ৮.৬৬ শতাংশ।
গত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৬০ পয়সা নগদ এবং ৬ শতাংশ বোসান শেয়ার দেওয়া আমরা টেকনোলজির দর ৮.১৪ শতাংশ, গত দুই অর্থবছরে শেয়ার প্রতি ৪০ পয়সা করে লভ্যাংশ দিয়ে আসা বিডিঅটোকারের দর ৭.৬২ শতাংশ এবং ২০২০ সালে তালিকাভুক্তির পর দুই বছর এক টাকা করে লভ্যাংশ নেওয়া ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৭.২৮ শতাংশ।
শীর্ষ দশের বাইরে আরও একটি কোম্পানির শেয়ারদর ৭ শতাংশের বেশি, দুটির দর ৬ শতাংশের বেশি, ৭টির দর ৫ শতাংশের বেশি, ১০টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ৭টির দর তিন শতাংশের বেশি, ১২টির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৭টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।
এর মধ্যে সিংহভাগই স্বল্প মূলধনী, দুর্বল কোম্পানি।
দরপতনের শীর্ষে যারা
নতুন তালিকাভুক্ত মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার একদিন দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায়, তো পরের দিন থাকলে দরপতনের শীর্ষ তালিকায়।
ঈদের আগের শেষ কর্মদিবসে ১০ শতাংশের কাছাকাছি দর বেড়েছিল মিডল্যান্ড ব্যাংকের। সেই ব্যাংকটিই ঈদ শেষে প্রথম কর্মদিবসে ৫.২১ শতাংশ দর হারিয়ে পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান পেল।
এছাড়া জিলবাংলা সুগার মিলস ৩.৫৯ শতাংশ, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ ও আলহাজ্ব টেক্সটাইলস ৩.২০ শতাংশ করে, ঈদের আগে দুই কর্মদিবসে দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় থাকা ন্যাশনাল টি কোম্পানি ৩.০৫ শতাংশ, শ্যামপুর সুগার ৩.০২ শতাংশ দর হারিয়েছে।
ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, রূপালী লাইফ, বেঙ্গল ইউন্ডসর, এডএন টেলিকমও ছিল দরপতনের শীর্ষ তালিকায়।
এসব কোম্পানির বেশিরভাগের দরেই গত কয়েক মাসে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল।