উড়তে থাকা জীবন বীমার বড় পতন, সূচক হারাল পুঁজিবাজার

দরপতনের শীর্ষ সাত কোম্পানির ছয়টিই ছিল জীবন বীমা। আগের কর্মদিবসেই চিত্রটি ছিল বিপরীত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2023, 10:08 AM
Updated : 11 June 2023, 10:08 AM

টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে জীবন বীমা কোম্পানির শেয়ারে ব্যাপক চাহিদার যে চিত্র পুঁজিবাজারে দেখা গেছে, সেটি দেখা গেল নতুন সপ্তাহের প্রথম দিনও। তবে এদিন এই খাতের প্রায় সব কোম্পানির বড় দরপতন হয়েছে।

এ খাতের ১৫টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ১৩টি। নতুন তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানির দর অবশ্য বেড়েছে ১০ শতাংশ।

গত সপ্তাহে মূলধনী আয়ের ওপর কর বসানোর গুজবে মঙ্গলবার বড় দরপতনের পর দুই দিনে বাজার অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। তবে রোববার আবার সূচকের পতন দেখল বিনিয়োগকারীরা।

৬৪ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ১১৭টি দর হারানোর দিন সূচক কমল ১১ পয়েন্ট। লেনদেন এক হাজার কোটি টাকার বেশি হলেও তা কিছুটা কমেছে। 

এদিন সবচেয়ে বেশি দর হারানো সাতটি কোম্পানির মধ্যে ছয়টিই জীবন বীমা খাতের। পাশাপাশি ঢালাও পতন হয়েছে সাধারণ বীমার শেয়ারদরে। দরপতনের পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে দুই ধরনের বীমা কোম্পানিরই।

জীবন বীমা লেনদেনের শীর্ষে যথারীতি। হাতবদল হয়েছে ২৬৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ২১০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সেদিন এই খাদের সব কোম্পানির দরই বেড়েছিল।

সাধারণ বীমা খাতে বেড়েছে ৬টির দর। পাঁচটির দর ছিল অপরিবর্তিত আর ৩০টি কোম্পানিই দর হারিয়ে লেনদেন শেষ করেছে। এই কোম্পানিগুলোতে লেনদেন হয়েছে ৫৫ কোট ১০ রাখ টাকা, যা বৃহস্পতিবার ছিল ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

সব মিলিয়ে দুই ধরনের বীমা কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ৩২১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৩২ শতাংশের বেশি।

লেনদেনের দিক দিয়ে এরপরের স্থানগুলো ছিল যথাক্রমে ওষুধ ও রসায়ন যে দুটিতে লেনদেন হয়েছে ৯০ কোটি টাকার বেশ।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতে লেনদেন হয়েছে ৭০ কোটি টাকার বেশি। প্রকৌশল খাতে ৬৭ কোটি টাকা এবং বস্ত্র খাতে হাতবদল হয়েছে ৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর বাইরে কেবল বিদ্যু জ্বালানিতে লেনদেন হয়েছে ৫০ কোটি টাকার বেশি।

দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে এদিন সবচেয়ে ভালো করেছে কাগজ ও আনুষঙ্গিক খাত। ছয়টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে পাঁচটির। একটির দর ছিল অপরিবর্তিত। ছোট খাতগুলোর মধ্যে চামড়া ও সিমেন্টও খুব একটা খারাপ করেন। বাকি বেশিরভাগ দর হারানো কোম্পানির সংখ্যা বেশি ছিল।

ব্যাংক, আর্থিক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, প্রকৌশল, বস্ত্র খাতে ফ্লোরে পড়ে থাকা কোম্পানিগুলোর ঘুম ‘ভাঙার’ কোনো লক্ষণ নেই।

পতনের শীর্ষে প্রায় সবই বীমা

তরতর করে বাড়তে থাকা প্রগতি লাইফ ও মেঘনা লাইফের দর কমেছে একদিনে যতটা কমা সম্ভব ততটাই।

পপুলার লাইফ ও রূপালী লাইফের দর কমেছে ৮ শতাংশের বেশি।

দরপতনের শীর্ষ পাঁচে জীবন বীমার বাইরে ছিল কেবল প্রকৌশল খাতের মীর আকতার হোসেন লিমিটেড, যেটি দর হারিয়েছে ৭.০৯ শতাংশ।

পদ্মা লাইফ ও ন্যাশনাল লাইফের স্থান ছিল এর পরে। দুটি কোম্পানিই দর হারিয়েছে ৬ শতাংশের বেশি।

শীর্ষ দশের অন্য কোম্পানিগুলো হলো সিএপিএমআইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, ও রূপালী ইন্স্যুরেন্স।

জীবন বীমা খাতের আরও দুটি কোম্পানি ৫ শতাংশের বেশি, তিনটি চার শতাংশের বেশি একটি দুই শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে।

নতুন তালিকাভুক্ত ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে উঠে গেছে ৭৯ টাকা ২০ পয়সায়। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ১০ শতাংশ। এ ছাড়া ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির দর বেড়েছে ৬.১৬ শতাংশ। 

দর বৃদ্ধির শীর্ষে যারা

দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা বেশিরভাগ কোম্পানিই দুর্বল হিসেবে বিবেচিত। কোনো কোনোটি লোকসানি। কিছু কোম্পানি মুনাফায় থাকলেও তার পরিমাণ বেশি নয়, লভ্যাংশের ইতিহাসও ভালো নয়।

ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের বাইরে বাকি কোম্পানিগুলো হলো বঙ্গজ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, সি পার্ল, মেঘনা সিমেন্ট, মুন্নু সিরামিকস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, জিকিউ বলপেন ও নাভানা ফার্মা।

এগুলোর দর ৭.৩৩ শতাংশ থেকে ৯.৯৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।