‘পার্শ্বনায়কই’ থেকে যাবেন ভিনিসিউস?

কাতার বিশ্বকাপে সতীর্থদের গোলে অবদান রাখা এই ব্রাজিলিয়ান নিজে এখনও গোলের আনন্দে ডানা মেলতে পারেননি।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরদোহা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2022, 06:24 AM
Updated : 2 Dec 2022, 06:24 AM

গত দুই ম্যাচে গোল ছাড়া সবকিছুই করেছেন ভিনিসিউস জুনিয়র। কখনও বুদ্ধিদ্বীপ্ত পাসে বেঁধে দিয়েছেন আক্রমণের সুর, কখনও গতির ঝড় তুলে কাঁপন ধরিয়েছেন প্রতিপক্ষের রক্ষণে। কিন্তু গোল এখনও সোনার হরিণ তরুণ এই ফরোয়ার্ডের জন্য। তাই কাতার বিশ্বকাপে এখনও তিনি পার্শ্বনায়ক!

সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে নকআউট পর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল। এখন পর্যন্ত তিন গোল দিয়েছে রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা, হজম করেনি একটিও। গোলের খাতায় নাম তুলেছেন রিশার্লিসন ও কাসেমিরো। ভিনিসিউস থেকেছেন নেপথ্যের কারিগর হয়ে।

গত দুই ম্যাচে ২২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের সামনে যে পার্শ্বনায়ক থেকে নায়ক হওয়ার সুযোগ একেবারে আসেনি, তা নয়। কখনও তাড়াহুড়ো করে, কখনো ভারসাম্য হারিয়ে পিছলে পড়ে কিংবা টাইমিংয়ের গড়বড়িতে সুযোগগুলো মাঠেই ফেলে দিয়ে এসেছেন রিয়াল মাদ্রিদের এই তরুণ।

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ক্যামেরুনের বিপক্ষে খেলবে ব্রাজিল। চোটের কারণে এ ম্যাচেও আক্রমণভাগের প্রাণভোমরা নেইমারের খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ভিনিসিউসের কাছে স্বাভাবিকভাবে তিতের চাওয়া থাকবে আরও বেশি। কেবল সুযোগ তৈরি করা নয়, এবার তা কাজে লাগানোর বার্তাও নিশ্চয় তার কানে গুজে দেবেন কোচ।

চলতি বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ব্রাজিলের যতগুলো আক্রমণ, তার অধিকাংশের শুরু গতিময় ভিনিসিউসের পা থেকে। আবার সুযোগ নষ্টও করেছেন অনেকগুলো। সার্বিয়া ম্যাচেই যেমন রিশার্লিসনের জোড়া গোলে অবদান রাখার কৃতিত্ব যেমন তার, পাশাপাশি একাধিক সুযোগও নষ্টের দায়ও তার কাঁধে।

২৭তম মিনিটে চিয়াগো সিলভার দারুণ ক্রসে যথেষ্ট ক্ষিপ্র হতে না পেরে পা ছোঁয়াতে পারেননি ভিনিসিউস। ৪০তম মিনিটে নিকোলা মিলেনকোভিচের চ্যালেঞ্জে দিশেহারা হয়ে সুযোগ হারান। আবার তিনিই পরে তিনটি আক্রমণের সুর বেঁধে দেন। যার মধ্যে ৫৫তম মিনিটের সুযোগ সদ্ব্যবহারে ব্যর্থ নেইমার। বাকি দুটি কাজে লাগিয়ে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের অভিযানে কাতারে আসা সেলেসাওদের জয়ের নায়ক বনে যান রিশার্লিসন।

সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও ব্যর্থতার সঙ্গে দুর্ভাগ্যও পিছু নেয় ভিনিসিউসের। তাই ২৭তম মিনিটে রাফিনিয়ার ক্রসে তিনি তড়িঘড়ি করে দুর্বল ভলি নেন। ৬৪তম মিনিটে জালে বল জড়িয়েও গোল পান না আক্রমণের শুরুতে রিশার্লিসন অফসাইডে থাকায়। আবার দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ‘ওয়ান-অন-ওয়ানে’ পাওয়া সুযোগ তালগোল পাকিয়ে হারিয়ে বসেন!

এই ভিনিসিউসই আবার ৫৩তম মিনিটে গোললাইন থেকে ফাবিয়ান রিডারের শট আটকে ব্রাজিলকে স্বস্তিতে রাখেন। ৮৩তম মিনিটে তার পাস ধরে বুলেট গতির শটে লক্ষ্যভেদের আনন্দে ডানা মেলেন কাসেমিরো। ব্রাজিলও জিতে যায় ১-০ গোলে। শুধু তার গোলের আনন্দে মেতে ওঠা হয় না কোনোভাবেই। তাই পার্শ্বনায়ক থেকে হয়ে উঠতে পারেন না নায়ক।

শৈশব থেকেই তিনি হতে চেয়েছেন নায়ক। রিও দে জেনোইরোর নিম্নবিত্তদের আবাস্থল সাও কানসালোতে বেড়ে ওঠার সময় ফুটসালে তিনি ছিলেন সেরা খেলোয়াড়। সমবয়ীদের চেয়ে সবসময় এগিয়ে ছিলেন যোজন যোজন মাইল।

গত চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও ভিনিসিউস ছিলেন রিয়ালের মাদ্রিদের জয়ের নায়ক। লিভারপুলের বিপক্ষে রিয়ালের ১-০ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে ছিলেন নির্ণায়ক। ক্যামেরুন ম্যাচ দিয়েই কি আড়াল ভেঙে নায়ক হওয়ার শুরু ভিনিসিউসের?