এমবাপে-জিরুদের গোলে শেষ আটে ফ্রান্স

নকআউট পর্বের প্রথম ধাপে ফ্রান্সের দুই গোলদাতাই গড়েছেন রেকর্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2022, 03:57 PM
Updated : 4 Dec 2022, 03:57 PM

ম্যাচজুড়ে আলো ছড়ালেন কিলিয়ান এমবাপে। অলিভিয়ে জিরুদের গোলে অবদান রাখার পর তিনি নিজে করলেন চমৎকার দুটি গোল। দুজনেই গড়লেন রেকর্ড। দাপুটে পারফরম্যান্সে পোল্যান্ডকে উড়িয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠল ফ্রান্স।

দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে রোববার শেষ ষোলোর ম্যাচে ৩-১ গোলে জিতেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

প্রথমার্ধে জিরুদ দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল করেন এমবাপে। পুরো ম্যাচে নিষ্প্রভ থেকে শেষ দিকে পেনাল্টি থেকে পোল্যান্ডের হারের ব্যবধান কমানো গোলটি করেন রবের্ত লেভানদোভস্কি।

নিয়মিতদের বেশিরভাগকে বিশ্রাম দিয়ে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে ১-০ গোলে হেরেছিল ফ্রান্স। ওই দল থেকে একাদশে ৯টি পরিবর্তন আনেন ফ্রান্স কোচ দিদিয়ে দেশম। ফ্রান্সের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৪২ ম্যাচ খেলার রেকর্ডে ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী লিলিয়ান থুরামের পাশে বসেন গোলরক্ষক উগো লরিস।

শুরু থেকে বল দখলে এগিয়ে থাকা ফ্রান্স চতুর্থ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায়। অঁতোয়ান গ্রিজমানের কর্নারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানের হেড লক্ষ্যে থাকেনি।

ত্রয়োদশ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে জোরাল নিচু শটে চেষ্টা করেন অহেলিয়া চুয়ামেনি, ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন গোলরক্ষক ভয়চেখ স্ট্যাসনি। চার মিনিট পর উসমান দেম্বেলের শট সহজেই আটকে দেন তিনি।

১৯৮৬ সালের পর প্রথমবার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় ওঠা পোল্যান্ড ঘর সামলাতেই ব্যস্ত থাকে বেশি। বল নিয়ে ফ্রান্সের বক্সেই যেতে পারছিল না তারা। ২১তম মিনিটে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে লেভানদোভস্কির বাঁ পায়ের শট পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।

২৯তম মিনিটে বক্সে ঢুকে ডান দিক থেকে দেম্বেলে পাস দেন দূরের পোস্টে, ছুটে গিয়ে স্লাইডে ফাঁকা জালে বল পাঠাতে পারেননি জিরুদ। যদিও অফসাইডের পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান। ৩৬তম মিনিটে দুরূহ কোণ থেকে এমবাপের শট ঠেকিয়ে দেন স্ট্যাসনি। 

খেলার ধারার বিপরীতে ৩৮তম মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল পোল্যান্ড। সতীর্থের কাটব্যাকে পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে পিওতর জেলিনস্কির শট পা দিয়ে ফেরান লরিস। ফিরতি বলে জেলিনস্কির আরেকটি প্রচেষ্টা ঠেকান দায়দ উপেমেকানো। এরপর ইয়াকুব কামিনিস্কির শট গোললাইন থেকে বিপদমুক্ত করেন ভারানে।

৪৪তম মিনিটে জিরুদের রেকর্ড গড়া গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। এমবাপের পাস ডি-বক্সে পেয়ে বাঁ পায়ের শটে দূরের পোস্ট দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন এসি মিলান স্ট্রাইকার।

ফ্রান্সের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় থিয়েরি অঁরিকে ছাড়িয়ে এককভাবে চূড়ায় বসলেন জিরুদ। তার মোট গোল হলো ৫২টি। এর মধ্যে তিনটি এবারের বিশ্বকাপে।

৫৬তম মিনিটে অল্পের জন্য গোল পাননি এমবাপে। পিএসজি তারকার শটে বল প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে যায়। দুই মিনিট পর দারুণ ওভারহেড কিকে জালে বল পাঠান জিরুদ, যদিও তার আগেই ফাউলের বাঁশি বাজান রেফারি।

Also Read: পেলে-ইউজেবিওকে ছাড়িয়ে এমবাপের ২ রেকর্ড

Also Read: গ্রেট অঁরিকে ছাড়িয়ে জিরুদের রেকর্ড

৬৪তম মিনিটে প্রতিপক্ষের একজনের বাধায় এমবাপে ডি-বক্সে পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন করেন ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা। তবে, তার আগে অফসাইডে ছিলেন দেম্বেলে।

৭৪তম মিনিটে দারুণ গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন এমবাপে। ডান দিক থেকে দেম্বেলের পাস বক্সের সামনে পান তিনি। একটু ভেতরে ঢুকে জায়গা বানিয়ে তার ডান পায়ে নেওয়া শট ওপরের কোণা দিয়ে জালে জড়ায়।

বয়স ২৪ বছর হওয়ার আগে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলের তালিকায় পেলেকে (৭) ছাড়িয়ে এককভাবে চূড়ায় বসলেন এমবাপে (৮)। ফাইনালের দুই দিন পর ২৪ বছর পূর্ণ হবে তার।

বিশ্ব মঞ্চে সবচেয়ে কম বয়সে আট গোলের রেকর্ডও এখন এমবাপের (২৩ বছর ৩৪৯ দিন)। তিনি ভেঙে দিলেন পর্তুগালের গ্রেট ইউজেবিওর রেকর্ড (২৪ বছর ১৮২ দিন)।

যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে আবারও এমবাপে-জাদু। মার্কাস থুরামের পাসটা বক্সের ভেতর কোনাকুনি জায়গায় পান তিনি। দুই খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে তার ডান পায়ের শটে বল দূরের পোস্ট দিয়ে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছায়। স্কোরলাইন হয়ে যায় ৩-০।

গত বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের পথে চার গোলের পর চলতি আসরে এমবাপের গোল হলো পাঁচটি। সঙ্গে অ্যাসিস্ট দুটি।

একেবারে শেষ মুহূর্তে ডি-বক্সে ফরাসি ডিফেন্ডার উপেমেকানোর হাতে বল লাগলে ভিএআরের সাহায্যে মনিটরে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।

লেভানদোভস্কির স্পট-কিক শুরুতে ঠেকিয়ে দেন লরিস। তবে আগেই লাইন থেকে বেরিয়ে আসায় আবার শট নিতে দেন রেফারি। এবার আর ভুল করেননি পোল্যান্ডের রেকর্ড গোলদাতা। তাতে হারের ব্যবধানই শুধু কমে তাদের।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় নিয়ে কাতারে এসে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে অমন হার ফ্রান্সের অহমে লাগা স্বাভাবিক। নিয়মিতরা ফিরে পরের ম্যাচেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে কক্ষপথে ফেরালেন দলকে। এগিয়ে গেল তারা আরেক ধাপ।

সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আগামী শনিবার শেষ আটে ইংল্যান্ড অথবা সেনেগালের মুখোমুখি হবে দেশমের দল।