রোজার মাসে সৌদি ক্লাবের অনুশীলন সূচি অবাক করেছিল রোনালদোকে

সৌদি আরবের ফুটবলে ব্যতিক্রমী অনেক কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ থাকলেও সব মিলিয়ে দারুণ খুশি পর্তুগিজ তারকা।

ইউরোপিয়ান ফুটবলে ক্লাবগুলির অনুশীলন সূচি থাকে সাধারণত সকালে। সৌদি আরবে গিয়ে ক্রিস্তিয়ানো দেখলেন, অনুশীলন হয় বিকেলে বা সন্ধ্যায়। রমজান মাসে তো অনুশীলন শুরুর সময় ছিল রাত ১০টা! এতে চমকে গিয়েছিলেন পর্তুগিজ তারকা। এরকম কিছু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হলেও সব মিলিয়ে সৌদি আরবের ফুটবলে তিনি দারুণ খুশিই। যদিও এখানে অবকাঠামোর আরও উন্নতির জায়গা দেখছেন ৩৮ বছর বয়সী তারকা। 

গত জানুয়ারিতে রিয়াদের ক্লাব আল নাস্‌রে যোগ দেওয়ার পর সৌদি ফুটবলে রোনালদোর প্রথম মৌসুম শেষ হয়েছে। চোটের কারণে অবশ্য বুধবার দলের শেষ ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। সব মিলিয়ে সৌদি প্রো লিগে (এসপিএল) প্রথম মৌসুমে ১৬ ম্যাচ খেলে ১৪ গোল তার। দল যদিও পারেনি চ্যাম্পিয়ন হতে। আল-ইত্তিহাদের পেছনে থেকে রানার্স আপ হয় আল নাস্‌র। 

মৌসুম শেষে এসপিএলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রোনালদো বলেন, সৌদি লিগে ফুটবলের মান ভালো হলেও উন্নতির অবকাশ আছে অন্য কিছু জায়গায়। 

“এই লিগ খুব ভালো। তবে আরও অনেক ভালো করার সুযোগ আছে। এমনিতে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগ। ভালো ভালো দল, দারুণ সব স্থানীয় ফুটবলার আছে। তবে অবকাঠামোয় কিছুটা উন্নতি করতে হবে। এমনকি রেফারির মান, ভিএআর পদ্ধতি… আরেকটু দ্রুতগতির হতে হবে। এরকম ছোট ছোট জায়গাগুলোয় উন্নতি করতে হবে।”

নিজ দেশের ক্লাব স্পোর্তিং লিসবন থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ ও ইউভেন্তুসের মতো ক্লাবে ক্যারিয়ার জুড়ে খেলে এখন সৌদিতে গিয়ে ফুটবল ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন ছিল তার জন্য। তবে চ্যালেঞ্জকে তিনি স্বাগতই জানিয়েছেন।

“ইউরোপে আমরা সাধারণত অনুশীলন করি সকালে। এখানে অনুশীলন হয় বিকেলে বা সন্ধ্যায়, কিংবা রাতে। রমজান যখন শুরু হলো, আমাদের অনুশীলন ছিল রাত ১০টায়! খুবই অদ্ভুত ব্যাপার ছিল তা।” 

“তবে এই ব্যাপারগুলি মানিয়ে নেওয়ারই অংশ। সবই অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি। এই মুহূর্তগুলোয় বেঁচে থাকতেই পছন্দ করি, কারণ সবকিছু থেকেই শেখার আছে। এসব কঠিন ছিল অবশ্যই, তবে এমন নয় যে আগে কখনও দেখিনি। সৌদিতে ফুটবল সমর্থকদের নিয়ে এখনও পর্যন্ত আমার অভিজ্ঞতা, তারা ফুটবলকে সত্যিই ভালোবাসে এবং এখানকার জীবন আমি ভালোবাসি এবং এখনও পর্যন্ত খুবই খুশি আছি।”

আড়াই বছরের চুক্তিতে আল নাস্‌রে যোগ দিলেও প্রায়ই নানা গুঞ্জন ওঠে তার নতুন ঠিকানায় চলে যাওয়ার। তবে রোনালদো সাফ জানিয়ে দিলেন, থেকে যাবেন সৌদিতেই। এই লিগ ভবিষ্যতে বিশ্বের শীর্ষ ৫ লিগের মধ্যে থাকতে পারে বলে যে আশার কথা আগে বলেছিলেন, সেটি শোনালেন আবারও। 

“আমি এখানে দারুণ খুশি। এখানে থেকে যেতে চাই… এখানেই থাকব। আমার মতে, তারা যেভাবে কাজ করে চলেছে, যেভাবে তারা করতে চায়, তা যদি করতে পারে, আগামী ৫ বছরে বিশ্বের শীর্ষ ৫ লিগের মধ্যে উঠে আসতে থাকতে পারে সৌদি লিগ।” 

রোনালদোর পথ ধরে লিওনেল মেসিসহ আরও বেশ কিছু তারকা ভবিষ্যতে সৌদি ফুটবলে নাম লেখাতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে। তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলেন রোনালদোও। 

“তারা যদি আসে, বড় বড় তারকা, বড় নাম… তারা তরুণ হোক বা বেশি বয়সী, তাদেরকে এখানে স্বাগত। কারণ, সত্যিই তারা এলে এই লিগের কিছুটা হলেও উন্নতি হবে। এখানে বয়স কোনো ব্যাপার নয়।” 

প্রথম মৌসুমে অসাধারণ কিছু করতে না পারলেও রোনালদোর ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স খারাপ ছিল না। তবে তিনি হতাশ দলকে কিছু জেতাতে না পারায়। 

“আমার আশা একটু ভিন্ন ছিল। সত্যি বলতে, এই মৌসুমে কিছু একটা জিততে চেয়েছিলাম। তবে সবসময় তো আর চাওয়ার সঙ্গে পাওয়া মেলে না। কখনও কখনও আবেগ, ধারাবাহিকতা ও অধ্যাবসায় দিয়ে সেরাটা অর্জন করে নিতে হয় আস্তে আস্তে।” 

“আমার বিশ্বাস, আগামী বছর আমরা আরও অনেক উন্নতি করব। গত ৫-৬ মাসে দলটা অনেক উন্নতি করেছে। এমনকি এই লিগ, অন্য দলগুলিও অনেক উন্নতি করেছে। কখনও কখনও কিছুটা সময় লাগে। তবে যদি বিশ্বাস থাকে এবং লক্ষ্যে অটুট থাকা যায়, তাহলে সবই সম্ভব। এই বছর কিছু জয়ের আশা করেছিলাম। পারিনি আমরা। তবে আগামী মৌসুমে আবারও ইতিবাচক থাকব এবং আত্মবিশ্বাসী থাকব যে চিত্র বদলাবে, আমরা আরও ভালো কিছু করব। কাজেই বিশ্বাস করে যেতে হবে এবং সেটা অর্জনে কাজ করে যেতে হবে।”