Published : 08 Oct 2023, 07:16 PM
২৩ সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া এবারের আসরের পর্দা নামল রোববার। এশিয়ান গেমসের এবারের আসরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কেবল দুটি ব্রোঞ্জ। ‘অংশ নেওয়াই বড় কথা’- বরাবরের মতো এই কথাই যেন হয়ে থাকল সান্ত্বনা।
চীনের হাংজুর আসরে দুটি ব্রোঞ্জই বাংলাদেশ জিতেছে ক্রিকেট থেকে। ছেলেদের বিভাগে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জিতে নেয় বাংলাদেশ। মেয়েরাও ব্রোঞ্জ নির্ধারণী ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতে ৫ উইকেটে।
এবারের আসরে প্রায় একশ অ্যাথলেট-কর্মকর্তা অংশ নেন বাংলাদেশের হয়ে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মার্চপাস্টে জাতীয় পতাকা বহন করেন গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ ও নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।
এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তিগত পদকটি এসেছিল ১৯৮৬ সালের আসরে। সেবার বক্সিং থেকে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন। এবার বক্সার সেলিম হোসেন হাত ধরে স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ, কিন্তু ৫১ কেজি ওজন শ্রেণির কোয়ার্টার-ফাইনালে জাপানি প্রতিযোগীর কাছে হেরে থামে সেলিমের পথচলা। এই ডিসিপ্লিনে অংশ নেওয়া আবু তালহা, জিন্নাত ফেরদৌস পারেননি চমক দেখাতে।
ইমরানুর রহমান থাকায় অ্যাথলেটিক্স নিয়ে যা একটু স্বপ্ন ছিল। ১০০ মিটার স্প্রিন্টের সেমি-ফাইনালেও উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু বাংলাদেশের দ্রুততম মানব পারেননি পদকের লড়াইয়ের মঞ্চে উঠতে। সেমি-ফাইনালের হিটে ১০.৪২ সেকেন্ড সময় নিয়ে আট জনের মধ্যে ষষ্ঠ হয়ে থামেন তিনি।
ফুটবল ডিসিপ্লিনের ছেলেদের বিভাগে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার আগে চীনের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ের তৃপ্তি সঙ্গী হয় বাংলাদেশের। মেয়েদের বিভাগেও নেপালের বিপক্ষে ড্র করে দল; বিদায় ঘণ্টা বাজে গ্রুপপর্ব থেকে।
যথারীতি এবারও বিবর্ণ শুটিং। নারীদের দশ মিটার এয়ার রাইফেল দলগত ইভেন্টে ১৫ দলের মধ্যে নবম হয় বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত ইভেন্টেও চূড়ান্ত পর্বে উঠতে পারেননি তিন শুটার। ৫৯জন শুটারের মধ্যে শায়রা খাতুন ১৩তম, নাফিসা তাবাসসুম ২৫তম ও কামরুন নাহার কলি ২৭তম হন।
ছেলেদের দশ মিটার এয়ার রাইফেল দলগত ইভেন্টে ১৪ দলের মধ্যে সপ্তম হয় বাংলাদেশ (১৮৭৫.৬০)। ব্যক্তিগত ইভেন্টেও চূড়ান্ত পর্বে উঠতে পারেননি তিন শুটার। তামজিদ বিন আলম, রবিউল ইসলাম ও অর্নব শারার। অর্নব ৫৪ জনের মধ্যে হয়েছেন ১৮তম। তার স্কোর ৬২৬.২০।
দশ মিটার এয়ার রাইফেলের মিক্সড টিম ইভেন্টে ২১ দেশের মধ্যে নবম, ৫০ মিটার এয়ার রাইফেলের থ্রি পজিশন ইভেন্টে ১৩ দেশের মধ্যে ১২তম, ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে ১৩তম হয় বাংলাদেশ। ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে শাকিল আহমেদ ৫৬৪ স্কোর করে ৪০তম, শাকের আহমেদ ৫৬০ স্কোর করে ৪৭তম ও সাব্বির আল আমিন ৫৫৬ স্কোর করে ৫৩তম হন ৫৬জন প্রতিযোগীর মধ্যে।
৫০ মিটার এয়ার রাইফেল থ্রি পজিশনে দলগত ইভেন্টে ১৭০৫ স্কোর করে ১৪তম হয়। ব্যাক্তিগত ইভেন্টে রবিউল ইসলাম ৫৭১ স্কোর করে ৩৪, তারকা শুটার আব্দুল্লাহ হেল বাকি ৫৭০ স্কোর করে ৩৬ ও শোভন চৌধুরী ৫৬৪ স্কোর করে ৪২তম হন ৫৪ জন শ্যুটারের মধ্যে।
সাঁতারেও নেই সুখবর। ১০০ মিটার ব্যাক স্ট্রোকে হিটে ২৮ জনের মধ্যে ২১ তম হন সামিউল ইসলাম রাফি ১.০০.০২ সেকেন্ড সময় নিয়ে। ৫০ মিটার ব্যাক স্ট্রোকে ৩২ জনের মধ্যে ২২তম হন তিনি (২৭.২০ সেকেন্ড)।
মেয়েদের ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইল ইভেন্টে সোনিয়া আক্তার হিটে ৩০.১১ সেকেন্ড সময় নিয়ে ৩২ জনের মধ্যে ২৭তম হন। ৫০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে সোনিয়া হিটে সময় নেন ৩১.৭৪ সেকেন্ড; ৩১ জনের মধ্যে হন ২৭তম।
হকিতে পাঁচ ম্যাচে দুই জয় ও তিন হারে সেমি-ফাইনালে ওঠার আশা গুঁড়িয়েছিল প্রিলিমিনারি রাউন্ডে। অষ্টম স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও বাংলাদেশে ওমানের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে যায়।
জিমন্যাস্টিক্সে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেন সাংখিয়ং খুমি ও আবু সাঈদ রাফি। তায়কোয়ানদোর পুমসের ব্যক্তিগত ইভেন্টের রাউন্ড অব সিক্সটিন থেকে বিদায় নেনন নূরুদ্দিন হোসেন ও রুমা খাতুন। ৫৮ কেজি ওজন শ্রেণিতে মোহাম্মদ ইলিয়াস হেরে যান ইরানের হাজি মাহদির কাছে। ব্যবধান ছিলো ২-০।
ফেন্সিংয়ের সেইবার ইভেন্টে গত এসএ গেমসে সোনাজয়ী ফাতেমা মুজিবের মতো রোকসানা খাতুনও পাঁচ ম্যাচ হেরে ছিটকে যান শুরুতেই। নারীদের দলগত সাবরে ইভেন্টের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে হংকং-এর কাছে ৪৫-১৭ পয়েন্টে হেরে বিদায় নেয় বাংলাদেশ।
গলফে ঝলক দেখাতে পারেননি সিদ্দিকুর রহমান ও জামাল হোসেন। ১৪তম অবস্থানে থেকে শেষ করেন সিদ্দিকুর এবং জামাল হন ৩৫তম।
ভারোত্তলনে এসএ গেমসের সোনাজয়ী মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ৬৪ কেজি ওজন শ্রেণিতে পাঁচ প্রতিযোগীর মধ্যে চতুর্থ হন ১৭৫ কেজি তুলে। ছেলেদের ৭৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে ‘বি’ গ্রুপে তৃতীয় হয়েছে পদকের লড়াই থেকে ছিটকে যান শেখ নাইম হোসেন।
এছাড়া আর্চারি, কারাতে, দাবা, ব্রিজ, আর্চারি, কাবাডিতেও বাংলাদেশ পায়নি কোনো সুখবর।