Published : 28 Jun 2023, 09:00 AM
হাভিয়ের কাবরেরার দৃষ্টিতে তিনি ‘খুবই পরিণত’, সহকারী কোচ হাসান আল মামুন মুগ্ধ তার বল পায়ে রাখার সক্ষমতায়, মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ রাখার পারদর্শীতায়। ২১ বছর বয়সী মোহাম্মদ হৃদয় এখন দলের মাঝমাঠের ‘হৃদয়’ হয়ে উঠছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় তরুণ এই মিডফিল্ডারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন কাবরেরা। মামুনও উত্তরসূরির রক্ষণ ও আক্রমণে অবদান রাখার সামর্থ্যে জানালেন বিস্মিত হওয়ার কথা।
হৃদয় এত কিছু ভাবেন না! ২০২১ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “হৃদয় দিয়ে খেলতে চান।” সে প্রসঙ্গ উঠলে লাজুক হাসি দিলেন। ঘুরেফিরে বললেন, সামনের দিনগুলোতে লাল-সবুজের জার্সিতে শতদলে মেলে ধরার প্রতিশ্রুতি।
পরিণত এবং বৈচিত্র্যময়
২০২১ সালের নভেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক। এরপর চোটের থাবায় মাঠের বাইরে ছিলেন হৃদয়। ডান পায়ের পেশির চোট কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের অভিযানে দলে জায়গা পেলেন। লেবানন ও মালদ্বীপের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই তিনি দেখিয়েছেন সামর্থ্যের ঝলক। কোচের আস্থার প্রতিদান তিনি দিয়েছেন রক্ষণে তপু-তারেকদের পাশে দাঁড়িয়ে, কখনও রাকিব-ফাহিমদের আক্রমণের পথটা প্রশস্ত করে দিয়ে।
বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে বুধবার গ্রুপের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভুটান। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে ম্যাচটি। এ ম্যাচ সামনে রেখে নেওয়া প্রস্তুতি শেষে কোচ উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে কথা বললেন হৃদয়কে নিয়ে।
“আমার কাছে পুরো দল গুরুত্বপূর্ণ, হৃদয়ও একজন খেলোয়াড়, আরও একজন মিডফিল্ডার, এই তো! সে খুবই ভালো খেলছে। খুবই পরিণত এবং যদি সে এভাবে পারফরম করতে পারে, তাহলে দলের জন্য ভবিষ্যতে সম্পদ হয়ে উঠবে।”
বিভিন্ন ভূমিকায় দায়িত্ব পালনের পারদর্শীতা হৃদয়কে দলে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে বলে মনে করেন সহকারী কোচ হাসান। ২১ বছর বয়সী তরুণ দলের কাছে নির্ভরতা হয়ে উঠছেন বলেও মনে করেন সাবেক এই তারকা।
“হৃদয় আমাদের টিমের নাম্বার ৬। যখন আমরা বিল্ড-আপে যাই, আক্রমণে উঠি, ও কিন্তু প্রতিপক্ষের মূল খেলোয়াড়কে (নাম্বার-১০) আটকে রাখার কাজটি চমৎকারভাবে করে। কেননা, ওর ম্যাচ পড়তে পারার সামর্থ্য খুবই ভালো। দলের প্রয়োজনে সে সবসময় সক্রিয়। ওর সবচেয়ে ভালো গুণ হচ্ছে বল পায়ে রেখে খেলতে পারে, জায়গা পেলেই নিখুঁতভাবে কাজে লাগাতে পারে। প্রতিপক্ষের রক্ষণে হানা দিতে পারে।“
“সাধারণত নাম্বার ৬-এর এই সামর্থ্য থাকে না। হৃদয় নাম্বার-৬ পাশাপাশি নাম্বার-৮-এর ভূমিকাটাও পালন করতে পারে। দ্বৈত ভূমিকা নিতে পারে, সেট পিস এবং এরিয়াল বলে ভালো করার সামর্থ্য তার আছে। মাঝমাঠে যে নির্ভরতার ব্যাপার, সেটা হৃদয়ের আছে।”
হৃদয় করে যেতে চান নিজের কাজ
প্রশংসায় ভেসে যেতে চান না হৃদয়। লেবানন ও মালদ্বীপ ম্যাচে নিজের কাজটুকু করেছিলেন ঠিকঠাক। ভুটানকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচেও দুই সোহেল রানা ও জামাল ভূঁইয়ার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। বেঁধে দিয়েছেন আক্রমণের সুর। আবাহনীর এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের চাওয়া উন্নতির সিঁড়িগুলো একে একে পেরিয়ে চূড়ায় ওঠা।
“যখনই সুযোগ আসে খেলার, তখনই চেষ্টা করি নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে খেলার। দোয়া করবেন যেন এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি। নিজের জন্য, আমাদের ফুটবলের জন্য সবসময় নিজের সেরাটা দিয়ে খেলতে পারি।”
“এখন আমরা সবাই এক হয়ে চেষ্টা করছি। মাঝমাঠে দুই সোহেল, (সোহেল রানা ও মোহাম্মদ সোহেল রানা), জামালের সঙ্গে এক হয়ে ভালোভাবে চেষ্টা করছি। আসলে কোচ আমাদের যে পরিকল্পনা বলছে, আমরা সেভাবেই খেলার চেষ্টা করছি।”
গত বছর চোট থাবা বসায় ডান পায়ে। তাতে আড়ালেই চলে যান তিনি। কিন্তু সাফে এখন তিনি দলের অপরিহার্য সদস্য। তবে হৃদয় স্তুতির স্রোতে ভেসে যেতে চান না। এখনও তিনি নিজেকে মনে করেন শিক্ষার্থী।
“গত বছর টিমে ছিলাম, কিন্তু খেলার সুযোগ পাইনি। মাঝখানে চোটের কারণে একটা গ্যাপ পড়েছিল। সেখান থেকে ফিরে এসেছি, জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছি। সবসময় চেষ্টা থাকে ভালো একটা কিছু করার। আমারও সেই চেষ্টা থাকে।”
“ক্লাব পর্যায়ে মারিও লেমোস, অস্কার ব্রুসন এবং জাতীয় দলে হাভিয়ের কাবরেরার সাথে কাজ করছি। প্রতিটি কোচেরই ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা থাকে। আমি চেষ্টা করি তাদের কাছ থেকে শেখার। তবে কোচ কেবল আমার কাছ থেকে নয়, দলের কাছে যেটা চান, সেটা যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে সেটা দলের জন্য ভালো।”
হৃদয়ের কাছে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভূটান
এ পর্যন্ত ১৩ ম্যাচের পরিসংখ্যানের ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় ১০টি, ড্র দুটি, হার ১টি। সাফের আঙিনায় কখনও তাদের কাছে হারেনি দল। তবে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে চান না হৃদয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে উঠে আসা এই ফুটবলার মনে করেন, তিন পয়েন্ট পেতে হলে নিজেদের উজাড় করে দিয়েই খেলতে হবে তাদের।
“আমরা কোনো দলকেই সহজভাবে নিচ্ছি না। প্রতিটি দলই আমাদের কাছে শক্তিশালী। তাদের শক্তি ও দুর্বল দিক নিয়ে কোচ কাজ করছে, তাদের বিপক্ষে কীভাবে খেললে বিষয়গুলো আমাদের জন্য সহজ হয়, সেরা ফল বের করে নিতে পারি, সেগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে।”
“সেমি-ফাইনালে ওঠার ক্ষুধা তো অবশ্যই আছে। ভূটানকে হারিয়ে আমরা সেমি-ফাইনালে উঠতে চাই। ওরা গত দুই ম্যাচ হেরেছে, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ভূটান ম্যাচ আমাদের জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।