ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
স্পেনের কাছে হেরে ইউরো থেকে বিদায়ের পর জার্মান কোচ নাগেলসমান বললেন, হ্যান্ডবলের উদ্দেশ্য ও বলের নিশানা নির্ণয়ে প্রয়োজনে আরও প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত।
Published : 06 Jul 2024, 01:05 PM
ম্যাচের সময়ই যথেষ্ট ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ইউলিয়ান নাগেলসমান। মার্ক কুকুরেইয়ার হাতে বল লাগার পর রেফারি যখন বাঁশি বাজালেন না কিংবা ভিএআর দেখলেন না, জার্মান কোচ তখনই বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। ম্যাচের পরও ক্ষোভের প্রকাশ থাকল তার কণ্ঠেও। ওই সিদ্ধান্তকেই যদিও হারের একমাত্র কারণ বলছেন না তিনি, তবে এসব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির আরও গভীর ব্যবহার তিনি দেখতে চান।
ইউরোর কোয়ার্টার-ফাইনালে শুক্রবার স্পেন-জার্মানির তুমুল লড়াইয়ের উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা সেটি। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে জামাল মুসিয়ালার জোরাল শট বক্সের ভেতর কুকুরেইয়ার হাতে লাগে। স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের বাঁ হাত তখন শরীর থেকে বেশ দূরেই ছিল। তবে তিনি বলের নিশানা থেকে হাত সরিয়ে শরীরের পেছন দিকে নিচ্ছিলেন বলেও মনে হচ্ছিল রিপ্লে দেখে।
বারবার টিভি রিপ্লে দেখে ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন, কুকুইরেইয়ার হাত পেছন দিকেই ছিল, এটা ইচ্ছাকৃত হ্যান্ডবল নয় এবং পেনাল্টিও ছিল না। তবে ভিএআর না দেখায় প্রশ্নের অবকাশ রয়েই যায়। আসলেই কুকুরেইয়া হাত শরীরের পেছনে নিচ্ছিলেন কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়ার উপায়ও তো নেই।
ম্যাচ শেষে কুকুরেইয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে সেই প্রশ্নই তুললেন নাগেলসমান। এজন্যই এসব ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করার পরামর্শ জার্মান কোচের।
“এটা নিয়ে (হ্যান্ডবল) খুব একটা কথা বলতে চাই না। তবে অভিপ্রায় আরেকটু খতিয়ে দেখা দরকার ছিল। কেউ যদি বল গ্যালারিতে পাঠায় এবং সেখানে বল কারও হাতে লাগে, অবশ্যই তা পেনাল্টি নয়। তবে বল যখন পরিষ্কারভাবে গোলের দিকে ছুটছে এবং কারও হাতে লাগছে, তখন তার সেটার পেছনের উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলতেই পারি।”
“খেয়াল রাখতে হবে, বলের নিশানা কোন দিকে ছিল। ৫০টি রোবট আমাদেরকে কফি এনে দিচ্ছে। কাজেই এআই ব্যবহার করে ক্রস, শট, নিশানা, এসব নির্ণয় করা যেতেই পারে। এটা তো খুব সহজ ব্যাপার। আমাদের অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত, শট কোন দিকে যাচ্ছে। তবে আমাদের হারের পেছনে একমাত্র কারণ এটিই নয়।”
স্টুটগার্টে ম্যাচের ৫১তম মিনিটে দানি ওলমোর গোলে স্পেন এগিয়ে যাওয়ার পর ক্রমে নিজেদের গুছিয়ে নেয় জার্মানি। একটা পর্যায়ে একের পর এক আক্রমণও তারা করতে থাকে। সুযোগ হাতছাড়া হয় অনেক। শেষ পর্যন্ত ৮৯তম মিনিটে তারা সমতা ফেরাতে পারে।
অতিরিক্ত সময়েও দাপট ছিল তাদেরই বেশি। কিন্তু ম্যাচ যখন টাইব্রেকারে গড়ানোর পথে, তখনই আরেকটি গোল হজম করে বসে তারা। সেই ওলমোর দারুণ ক্রস থেকে অনেকটা লাফিয়ে দুর্দান্ত হেডে গোল করে স্পেনকে সেমি-ফাইনালে তুলে নেন মিকেল মেরিনো।
পিছিয়ে পড়ার পর লড়াইয়ে ফিরতে পারায় দলকে বাহবা দিচ্ছেন নাগেলসমান। তবে শেষের আক্ষেপটুকুও তার সঙ্গী।
“পুরো ম্যাচ একটু বেশিই উন্মুক্ত ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেই এবং ভালো খেলতে থাকি। ৬০ মিনিটের পর থেকে তো আমরাই পরিষ্কারভাবে ওদের চেয়ে এগিয়ে ছিলাম, দারুণ কিছু সুযোগ তৈরি করেছি এবং শেষ দিকে গোল করেছি, যা আমাদের প্রাপ্য ছিল।”
“অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম পাঁচ মিনিট ছাড়া বাকি সময়টায় মনে হয়েছে, কেবল আমরাই জয়ের জন্য খেলছি। আমাদের সুযোগ এসেছিল, মাত্র দুই সেন্টিমিটারের জন্য আমরা গোল করতে পারিনি। খেলায় দারুণভাবেই ছিলাম আমরা, কিন্তু শেষ সময়ে গোল হজম করে বসলাম।”
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা ছিল জার্মানির। সেদিক মনোযোগ বেশি দিতে গিয়েই রক্ষণভাগ ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছিল কি না, সেই প্রশ্ন উঠল। নাগেলসমান অবশ্য এতে একমত নন।
“জানি না, আমরা একটু বেশিই উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম কি না, বেশি ঝুঁকি নিয়েছিলাম কি না… আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে আমি বলব, ‘না।’ তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই সময়টায় (গোল হজমের) আমরা উইংয়ে যথেষ্ট চাপ তৈরি করতে পারিনি এবং দানি ওলমো দারুণ ক্রসটি করে ফেলে।”
দেশের মাঠের আসরে কোয়ার্টার-ফাইনালেই থেমে যেতে হওয়াটা দলের জন্য ও সমর্থকদের জন্য হতাশার ব্যাপার বটে। তবে গত কয়েকটি বড় আসরে জার্মানি দলকে নিয়ে যে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল সমর্থকদের মধ্যে, সেটি এবার বদলে দেওয়ার তৃপ্তি পাচ্ছেন নাগেলসমান।
“জাতীয় দলকে নিয়ে আগে যে ধারণা ছিল লোকের যে, তারা জিততে চায় না, জয়ের যথেষ্ট তাড়া দেখায় না, আমার মনে হয়, আজকে তেমন কিছু এক সেকেন্ডের জন্যও দেখা যায়নি। ফুটবলাররা মাঠে নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে। আমি ছেলেদেরকে বলেছি, এটিই যেন সঙ্গে বয়ে নেয়।”
“আমরা এমন এক দেশে বাস করি, যেখানে অনেক পরিস্থিতিতেই অনেক কিছু বলে লোকে। অনেক সময় নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় অনেক কিছু। আশা করি, জাতীয় দল ও ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরি হবে, সমাজের মাঝেও আমরা বলতে পারব যে, সমাজ হিসেবে আমরা কিছু একটা করতে পারি, সামনে এগোতে পারি।”