পর্তুগালের লিসবনে আগামী রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি হবে পিএসজি। প্রতিযোগিতার পাঁচটি শিরোপা জেতা বায়ার্ন ১০ বার ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। পিএসজিকে সেখানে শিক্ষানবীশই বলা যায়।
তবে, ঘরোয়া ফুটবলে বছরের পর বছর দাপট দেখানো পিএসজিকে আন্ডারডগ ভাবার সুযোগ কমই। অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকলেও তেজদ্বীপ্ত দলটিকে ‘পরিপূর্ণ প্যাকেজ’ মনে করছেন অনেকে। সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ফাইনালে উঠে আসা পিএসজির চলতি আসরের নানা দিক নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য এই আয়োজন।
ফাইনালের আগ পর্যন্ত জয়-হার-ড্র
গ্রুপ ও নকআউট পর্ব মিলিয়ে এ পর্যন্ত খেলা ১০ ম্যাচে পিএসজির জয় ৮টি। একটি করে হার ও ড্র। গ্রুপে ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে জেতে টমাস টুখেলের দল; ড্র করে একটিতে। একমাত্র হার শেষ ষোলোর প্রথম লেগে, বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মাঠে ২-১ গোলে। এ পর্যন্ত ২৫ গোল দিয়ে লিগ ওয়ানের চ্যাম্পিয়নরা হজম করেছে মাত্র ৫টি। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫টি করে গোল করেছেন কিলিয়ান এমবাপে ও মাউরো ইকার্দি। আক্রমণভাগের আরেক সেনানি নেইমারের গোল ৩টি।
ম্যাচ | ফল | গোলদাতা (পিএসজি) |
পিএসজি-রিয়াল মাদ্রিদ | ৩-০ | আনহেল দি মারিয়া (১৪ ও ৩৩) তমা মুনিয়ে ৯০+১ |
গালাতাসারাই-পিএসজি | ০-১ | মাউরো ইকার্দি ৫২ |
ক্লাব ব্রুজ-পিএসজি | ০-৫ | ইকার্দি ৭ ও ৬৩, কিলিয়ান এমবাপে ৬১, ৭৯ ও ৮৩ |
পিএসজি-ব্রুজ | ১-০ | ইকার্দি ২২ |
রিয়াল মাদ্রিদ-পিএসজি | ২-২ | এমবাপে ৮১, পাবলো সারাবিয়া ৮৩ |
পিএসজি-গালাতাসারাই | ৫-০ | ইকার্দি ৩২, সারাবিয়া ৩৫, নেইমার ৪৬, এমবাপে ৬৩, এদিনসন কাভানি ৮৪ |
শেষ ষোলোর ফল
ম্যাচ | ফল | গোলদাতা (পিএসজি) |
বরুশিয়া ডর্টমুন্ড-পিএসজি | ২-১ | নেইমার ৭৫ |
পিএসজি-বরুশিয়া ডর্টমুন্ড | ২-০ | নেইমার ২৩, বের্নাত ৪৫+১ |
কোয়ার্টার-ফাইনাল ও সেমি-ফাইনাল
ম্যাচ | ফল | গোলদাতা (পিএসজি) |
আতালান্তা-পিএসজি | ১-২ | মার্কিনিয়োস ৯০, এরিক মাক্সিক চুপো-মোটিং ৯০+৩ |
লাইপজিগ-পিএসজি | ৩-০ | মার্কিনিয়োস ১২, আনহেল দি মারিয়া ৪২, বের্নাত ৫৮ |
দায়িত্বে টমাস টুখেল
২০১৮ সালে পিএসজির দায়িত্ব নেওয়ার পর দলটিকে দুটি লিগ ওয়ানের ট্রফি এনে দেন তিনি। এ মৌসুমে জিতেছেন ফরাসি কাপ ও লিগ কাপ। ২০১৯-২০ মৌসুমের শুরুতে জিতেছেন ফরাসি সুপার কাপ। এই জার্মান কোচের সামনে সুযোগ আছে পাঁচটি শিরোপা জয়ের ইতিহাস গড়ে মৌসুম শেষ করার। প্রথম কোচ হিসেবে পিএসজিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তোলা টুখেল প্রতিযোগিতায় ১৮ ম্যাচের মধ্যে দলটিকে ১২টিতে জয় এনে দিয়েছেন। বায়ার্নের বিপক্ষে ফাইনাল সামনে রেখে বলেছেন, “এই দলের কোচ হতে পেরে আমি খুবই খুশি। এটা আনন্দের। ছেলেরা শুধু কথা বলে না, করে দেখাচ্ছে। ফাইনাল বড় ম্যাচ, আমরা সবটুকু নিংড়ে দেব।”
২০২০ সালে পিএসজি শুরু করেছিল নেইমার, কিলিয়ান এমবাপে, আনহেল দি মারিয়া এবং মাউরো ইকার্দির মতো তারকা নিয়ে, থিতু হয়েছিল ৪-৪-২ ফরমেশনে। কিন্তু খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতির কারণে টুখেল ফরমেশনে বদল আনেন। আতালান্তার বিপক্ষে নেইমারকে প্লে মেকারের ভূমিকায় রেখে ৪-৩-১-২ ফরমেশন সাজান তিনি; ওই ম্যাচে বেঞ্চে রাখেন ইকার্দিকে। লাইপজিগের বিপক্ষে নেইমারকে ফলস নাইন পজিশনে খেলাতে ছক কষেন ৪-৩-৩ ফরমেশনে। আস্থা রাখার মতো রক্ষণভাগ সাজান প্রতি ম্যাচে। ১০ ম্যাচে মাত্র ৫ গোল হজম তার প্রমাণ-যে কোনো দলের চেয়ে এবারের আসরে যা সবচেয়ে কম গোল খাওয়ার পরিসংখ্যান।
নির্ভরতার নাম নেইমার
পিএসজিকে ‘পরিপূর্ণ প্যাকেজ’ বলার আরেকটি কারণ দলটির আক্রমণভাগে নেইমারের উপস্থিতি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে ব্রাজিলিয়ান হিসেবে সবচেয়ে বেশি গোল করা নেইমার নকআউট পর্বের ম্যাচগুলোয় দলের জন্য দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ক হয়ে উঠেছেন। ২০১৭ সালের পর এই প্রথম চোটমুক্ত হয়ে নকআউট পর্বে খেলছেন তিনি। যদিও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে কোয়ার্টার-ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল ও ফাইনাল নিয়ে পর্তুগালের লিসবনে হওয়া ‘মিনি টুর্নামেন্ট’ এ এখনও গোল পাননি তিনি। কিন্তু আসরে তিন গোল করা নেইমার ড্রিবলিং, পাসিং, উদ্দীপ্ত ফুটবল ও সাফল্য ক্ষুধা দিয়ে দলকে সামনের দিকে টেনে নিচ্ছেন দারুণভাবে। ইউরোপ সেরার প্রথম ট্রফির জন্য বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলারের দিকে খুব করে তাকিয়ে থাকবে পিএসজি।