একের পর এক আক্রমণে মাঠে আধিপত্য বিস্তার করা, প্রতিপক্ষকে তাদের সীমানায় বেঁধে রক্ষণের ওপর চাপ ধরে রাখা এবং বল নিয়ে বিপক্ষ দলকে উঠতে না দেওয়ার কৌশলে দারুণ সফল বায়ার্ন। মৌসুমের শুরুতে ঘরোয়া লিগে দলটিকে ভুগতে দেখা গেলেও ইউরোপ সেরার মঞ্চে শুরু থেকেই তারা ছিল স্বরূপে। আর গত নভেম্বরে ফ্লিক দায়িত্ব নেওয়ার পর পুরনো কৌশলকেই আরেকটু ঘষে-মেজে অব্যর্থ কৌশলে পরিণত করেছে। পরিসংখ্যানেই যার প্রমাণ।
চলতি বছরে বুন্ডেসলিগায় কেউই তাদের হারাতে পারেনি। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তো মৌসুম জুড়েই তারা অজেয়, জিতেছে ১০ ম্যাচের সবকটিতে। সব প্রতিযোগিতা মিলে ২০২০-এ ২৫ ম্যাচের ২৪টিতে জিতেছে তারা।
আক্রমণে প্রতিপক্ষকে কাবু করে ফেলার কৌশল সবচেয়ে কাজে লেগেছে কদিন আগে কোয়ার্টার-ফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে। পাঁচবারের ইউরোপ সেরা দলটিকে ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত করে তারা। আর সেমি-ফাইনালে অলিম্পিক লিওঁকে হারায় ৩-০ ব্যবধানে।
মূলত বায়ার্নের কৌশল আক্রমণাত্মক হলেও সেটার ফরমেশন আবার নানারূপী। দলে মূল স্ট্রাইকার রবের্ত লেভানদোভস্কি, তবে আক্রমণে ওঠার সময় কখনোই তাকে একা দেখা যায় না। সামনে তিনিই থাকেন বটে, তবে চাপটা আসে তার পেছনের তিন জন থেকে-ডান দিকে সের্গে জিনাব্রি, মাঝে টমাস মুলার আর বাঁ দিকে ইভান পেরিসিচ।
তাদের পেছনে লেয়ন গোরেটস্কা ও থিয়াগো আলকান্তারাকে কখনোই তেমন একটা প্রথাগত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতে দেখা যায় না। গোরেটস্কার খেলার ধরন তো প্রতিপক্ষের রক্ষণের ওপরই বাড়তি চাপ তৈরি করে।
আধুনিক ফুটবলে লেফট-ব্যাকদের যা করতে দেখা যায়, তাই করে থাকেন ঘানার আলফোনসো ডেভিস। অনেকটা মার্সেলো ও জর্দি আলবার মতো বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণ তৈরি করেন। আর বাঁজামাঁ পাভার্দের চোটে সুযোগ পাওয়া জসুয়া কিমিচ মূলত একজন মিডফিল্ডার।
দলটির এমন কৌশল তখনই শুধু কার্যকর হবে যখন তাদের রক্ষণ অরেকটা ওপরে উঠে খেলবে এবং খেলার জায়গা কমিয়ে আনবে। তবে, এর মাঝে ঝুঁকিও আছে ঢের। বিশেষ করে প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগ যদি খুব গতিময় হয়, তাহলে পাল্টা আক্রমণে তাদের সঙ্গে পেরে ওঠার কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে বায়ার্নকে।
সেমি-ফাইনালে অলিম্পিক লিওঁ ঠিক এই কৌশলই নিয়েছিল, নিশ্চিত সুযোগও পেয়েছিল অনেক। যদিও বাজে ফিনিশিংয়ে কোনোটিই কাজে লাগাতে পারেনি তারা। তবে, ওই ম্যাচেই বায়ার্নের অতি-আক্রমণাত্মক কৌশলের দুর্বলতাও বেরিয়ে পড়ে।
ম্যাচের পর দলটির কোচ হান্স ফ্লিকও স্বীকার করে নেন দুর্বলতার কথা। লিওঁর বিপক্ষে ম্যাচে ভাগ্য সহায় না হলে অন্যরকম কিছুও হতে পারতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নেইমার-এমবাপে-ইকার্দিদের নিয়ে গড়া পিএসজির আক্রমণভাগের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ আরও কয়েক গুণ বেশি। সামান্য ভুলেও দিতে হতে পারে চড়া মাশুল। লিওঁ ম্যাচ শেষেই তাই ফাইনালের আগে নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছিলেন ফ্লিক।
আলাদা করে বলতে গেলে, বাঁ দিকে এমবাপের দারুণ গতি বায়ার্নের জন্য দুর্ভাবনার বড় কারণ হতে পারে। সেই সঙ্গে অনেক নিচ থেকে নেইমারের ড্রিবল করে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা আর আনহেল দি মারিয়ার নিখুঁত পাসে ওই দুই সতীর্থকে খুঁজে নেওয়ার সামর্থ্য বায়ার্নের ভীতির কারণ হতে পারে।
তাদের আটকাতে মূলত ডেভিস ও কিমিচকে অথবা চোট কাটিয়ে ফেরা পাভার্দকে (যদি দলে রাখা হয়) রক্ষণে ততটাই জমাট ও কার্যকর হতে হবে, ঠিক যতটা বল পায়ে তাদের সচারচর দেখা যায়।
অফসাইডের ফাঁদে ফেলে, রক্ষণভাগকে আরও নিচে খেলিয়ে, ফাঁকা জায়গাগুলো কমিয়ে দিয়ে এমবাপের হুমকি কমিয়ে আনতে পারেন ফ্লিক।
সেক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক কৌশলেও পরিবর্তন আনতে হবে বায়ার্নকে, যা শিরোপা লড়াইকে দিতে পারে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশ সময় রাত একটায় শুরু হবে ম্যাচটি। এখন প্রশ্ন হলো-এতদিনের সফল কৌশল থেকে সরে আসবে বায়ার্ন নাকি অনড় থাকবে?