প্রথমার্ধের ওই পেনাল্টি বাতিল না হলে ম্যাচের চিত্র ভিন্ন হতেও পারত, বলছেন রেয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলত্তি।
Published : 17 Apr 2025, 10:22 AM
ভিএআর পরীক্ষার ওই একটু সময়কেও কখনও কখনও মনে হয় অনেক লম্বা। এবার তো সত্যিই সময় লাগল বেশ অনেকটা। মনে হচ্ছিল যেন অন্ততকাল! রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজালেও চলছিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। ভিএআর রেফারিরা দীর্ঘ সময় পরীক্ষা করলেন, এরপর মাঠের রেফারি ছুটে গিয়ে চোখ রাখলেন মনিটরে। এরপর যে সিদ্ধান্ত দিলেন, তা হতাশার স্রোত বইয়ে দিল রেয়াল মাদ্রিদে। পেনাল্টি বাতিল! রেয়ালের কোচ কার্লো আনচেলত্তির মতে, এই পেনাল্টি পেলেই ম্যাচের চিত্র হতে পারত অন্যরকম।
এর কিছুক্ষণ আগে অবশ্য পেনাল্টি নাটকের প্রথম দফা মঞ্চস্থ হয়ে যায়। সেই পেনাল্টি ছিল আর্সেনালের। ভিএআর দেখেই রেফারি সিদ্ধান্ত জানান, আর্সেনালের মিকেল মেরিনোকে ফাউল করেছেন রেয়ালের তরুণ ডিফেন্ডার রাউল আসেন্সিও। যদিও বল ছিল অনেক দূরে এবং বক্সে এসেছেও খানিকটা পরে। কিছুটা হলেও সংশয়ের অবকাশ সেখানে আছে।
তবে ম্যাচে সেটা কোনো পার্থক্য গড়ে দেয়নি। সাকার দুর্বল পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেন রেয়ালের গোলকিপার থিবো কর্তোয়া। এরপর ২৩তম মিনিটে আনচেলত্তির আক্ষেপের সেই অধ্যায়।
ডেক্লান রাইসের বাধায় কিলিয়ান এমবাপে বক্সে পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। দ্রুতই হলুদ কার্ড দেখান রাইসকে। তবে আর্সেনালের এই মিডফিল্ডার ও তার সতীর্থরা মানতেই পারছিলেন না। রাইস বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, এমবাপেকে তিনি পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে ধরে রাখলেও তা মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো জোরাল ছিল না।
আর্সেনালের প্রতিবাদের মুখে ভিএআর পরীক্ষা করা হয় সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেকটা বেশি সময় নিয়ে। পরে রেফারি গিয়ে মনিটর দেখে তুলে নেন নিজের সিদ্ধান্ত।
প্রধমার্ধে আর গোলের দেখা পায়নি রেয়াল। পেনাল্টিতে ব্যর্থ সেই সাকা দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ গোল করে আরও হতাশায় পোড়ান রেয়ালকে। একটু পরই উইলিয়াম সালিবার ভুলে ভিনিসিউস জুনিয়রের গোলে সামান্য আশা জাগায় চ্যাম্পিয়নরা। তবে সেটির পূর্ণতা দিতে পারেনি। উল্টো শেষ সময়ে আরেকটি গোল হজম করে ম্যাচ হেরে বসে ২-১ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলের বিশাল জয়ে সেমি-ফাইনালে পৌঁছে যায় আর্সেনাল।
ম্যাচের পর আর্সেনালকে কৃতিত্ব দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের ব্যর্থতার কথাও বললেন আনচেলত্তি। তবে রেয়াল কোচের মতে, পেনাল্টির সিদ্ধান্ত অন্যরকম হলে ম্যাচের অবস্থাও ভিন্ন হতে পারত।
“দুই ম্যাচেই আর্সেনাল আমাদের চেয়ে ভালো ছিল, এটা মেনে নিতেই হবে। সেমি-ফাইনালে খেলা তাদের প্রাপ্য ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি। পরিস্থিতি বদলানোর জন্য ইতিবাচক একটি মুহূর্তের প্রয়োজন ছিল। সেটি হতে পারত সেই পেনাল্টি, যেটির বাঁশি সে (রেফারি) বাজিয়েছিল, কিন্তু পরে বাতিল করে দেয়। ওই পেনাল্টি হলে ম্যাচের চিত্র ভিন্ন হতে পারত।”
“এরপরও আমরা চেষ্টা করেছি। তবে আর্সেনাল রক্ষণ দারুণভাবে সামলেছে। আমরা জায়গা বের করতে পারিনি। আমরা তাড়না দেখিয়েছি, তবে তা যথেষ্ট হয়নি।”
চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে রেয়াল এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এখানে শিরোপা ছাড়া অন্য যে কোনো ফলই তাদের জন্য ব্যর্থতার। টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন তারা। আগের ১০ আসরের ছয়টিতেই তারা জিতেছে শিরোপা। নানা সময়ে পেছন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য কিছু নজিরও তারা মেলে ধরেছে। এবার মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখছে দল।
সেই অভিজ্ঞতাকেও আলিঙ্গন করে আরও ভালো হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন রেয়াল কোচ।
“চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে পড়া হতাশাজনক অবশ্যই। ফুটবলেরই আরেকটি দিক এটি। ফুটবলের আনন্দময় দিকের অংশ ছিলাম আমরা অনেকবার, আজকের সময়টা অন্যরকম এবং এটা মেনে নিতেই হবে। অন্য অনেক দলের চেয়ে এই অভিজ্ঞতা (হতাশা) অনেক কম হয়েছে আমাদের। তবে সামলাতেই হবে আমাদের, কারণ এটা আমাদেরকে সহায়তা করবে আরও ভালো হতে।”