Published : 03 May 2025, 11:47 AM
স্তুতি, ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা- কেভিন ডে ব্রুইনের জন্য কোনো কিছুরই কমতি রাখলেন না পেপ গুয়ার্দিওলা। কিন্তু অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন তিনি পরের প্রসঙ্গেই। এতই যদি দুর্দান্ত হয়ে থাকেন ডে ব্রুইনে, ফর্ম যদি এত ভালো থাকে, তাহলে তাকে কেন ধরে রাখছে না ম্যানচেস্টার সিটি! বিব্রত ম্যানচেস্টার সিটি কোচ এই উত্তরের গভীরে যেতে চাইলেন না।
ডে ব্রুইনের গোলেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শুক্রবার উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সকে হারায় ম্যানচেস্টার সিটি। ঘরের মাঠে ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে গোলটি করেন ৩৩ বছর বয়সী মিডফিল্ডার।
ম্যাচের ৬৪ শতাংশ সময় বল নিজেদের কাছে রেখেও আক্রমণে ঠিক কার্যকর হতে পারেনি ম্যানচেস্টার সিটি। গোলে ৯টি শট নিলেও লক্ষ্যে ছিল স্রেফ ২টি। সেখানেই একটিতে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন ডে ব্রুইনে।
আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা নিশ্চিত করতে এই তিন পয়েন্ট হতে পারে মহামূল্য। ৩৫ ম্যাচে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে এখন তিন নম্বরে আছে গুয়ার্দিওলার দল। ৩৪ ম্যাচে ৬২ পয়েন্ট নিউক্যাসল ইউনাইটেডের, ৬০ পয়েন্ট চেলসি ও নটিংহ্যাম ফরেস্টের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইয়ে আছে এই সবকটি দল। এমনকি ৩৪ ম্যাচে ৫৭ পয়েন্ট পাওয়া অ্যাস্টন ভিলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
প্রিমিয়ার লিগ থেকে এবার পাঁচটি দল খেলবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। একেকটি পয়েন্ট যখন বিশাল কিছু, উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে এই তিন পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল ম্যানচেস্টার সিটির জন্য।
সেই তিন পয়েন্ট ধরা দিল ডে ব্রুইনের সৌজন্যে, মৌসুম শেষেই যিনি ক্লাব ছাড়ছেন। বিদায়ী মিডফিল্ডারকে ম্যাচ শেষে প্রশংসায় ভাসালেন কোচ গুয়ার্দিওলা।
“তাকে স্রেফ বলব ‘ধন্যবাদ।’ ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকার ম্যাচে তার পারফরম্যান্স ছিল দারুণ, আজকেও সে গোল করে জয় এনে দিল। আমি খুবই খুশি যে, সে এভাবে শেষ করতে পারছে। ইতিহাদে (ঘরের মাঠে) আর একটি ম্যাচ বাকি আছে আমাদের। আশা করি ভালো খেলবে সে।”
ডে ব্রুইনের পারফরম্যান্সে কোচ যদি এতই খুশি হন, পরের প্রশ্নটাও প্রাসঙ্গিক। তাহলে কেন তাকে নতুন চুক্তির প্রস্তাব দেননি তিনি, ক্লাবের সর্বকালের সেরাদের একজনকে কেন ধরে রাখা হচ্ছে না? বয়সও তো খুব বেশি হয়ে যায়নি!
এই প্রশ্নে গুয়ার্দিওলার চোখেমুখে, শরীরী ভাষায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে উঠল স্পষ্ট। ধরে না রাখার কারণ ব্যাখ্যায় না গিয়ে তিনি তুলে ধরলেন ক্লাবে ডে ব্রুইনের অবদান।
“কেভিনের জন্য সবটুকু শুভকামনা জানাই। তাকে ছাড়া এতগুলো বছরে এত কিছু সম্ভব হতো না। অবিশ্বাস্য এক ফুটবলার সে, তবে এখন পরিস্থিতিটাই এমন…।”
“এই ধরনের ফুটবলারের বিকল্প পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ব্যাপারটি শুধু পারফরম্যান্সের নয়, আমাদের অসংখ্য সমর্থকের হৃদয়ে সে যেভাবে জায়গা করে নিয়েছে, সেটিই আসল। আমাদের যত সাফল্য, তা ফুটবলারদেরই।”
২০১৫ সালে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়ার পর ১৬টি ট্রফি জিতেছেন ডে ব্রুইনে। এর মধ্যে ছিল ছয়টি প্রিমিয়ার লিগ ও ক্লাবের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। পারফরম্যান্স আর ধারাবাহিকতায় প্রায় প্রতিটিতে তার ছিল বড় অবদান। প্রিমিয়ার লিগের মৌসুম সেরা ফুটবলারর স্বীকৃতি পেয়েছেন দুই দফায়।
যে ক্লাবে ১০ বছর কাটিয়েছেন, যে ক্লাবের সঙ্গে এতটা জুড়ে গেছে জীবন, সেই ক্লাবের কাছ থেকে নতুন প্রস্তাব না পেয়ে হতাশার কথা আগেও বলেছেন ডে ব্রুইনে। এই ম্যাচের পরও তার কণ্ঠে ফুটে উঠল সেই হাহাকার।
“সতীর্থদের অনেকেই বলেছে যে, আমাকে চলে যেতে হওয়ায় তারা কষ্ট পাচ্ছে। তবে কখনও কখনও জীবন এরকমই। যেভাবে পারফর্ম করছি আমি, সতীর্থদের সঙ্গে যেমন বোঝাপড়া এখনও… সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছি এবং ম্যাচ জিততে মরিয়া…। এসবেই ফুটে ওঠে, এখনও এই ক্লাবে খেলতে পারি। নইলে গত চার-পাঁচ সপ্তাহে যেমন খেলছি, তা করতে পারতাম না।”
তার ভবিষ্যৎ ঠিকানা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে পাড়ি জমাবেন বলেই জোর গুঞ্জন। বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের খবর, তার নতুন ক্লাব হতে পারে শিকাগো ফায়ার।