টেনিস: উইম্বলডন
সরাসরি সেটের এই জয়ে টেনিসে যেন নিজের আধিপত্যের সূচনার জানান দিলেন কার্লোস আলকারাস, একইসঙ্গে হয়তো ক্যারিয়ারের শেষের শুরু দেখে ফেললেন ৩৭ বছর বয়সী জোকোভিচ।
Published : 14 Jul 2024, 09:48 PM
মাসখানেক আগে হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের ধাক্কা, সঙ্গে বয়সের ভার যেন একসঙ্গে চেপে বসল নোভাক জোকোভিচের ওপর। ম্যাচের প্রথম গেমেই তার সার্ভিস ব্রেক করে যে বার্তা দিলেন কার্লোস আলকারাস, সময় গড়ানোর সঙ্গে সেটাই সত্যি করে আধিপত্য ছড়ালেন তিনি। তৃতীয় সেটে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেন সার্ব তারকা; কিন্তু তরুণ প্রতিপক্ষের দাপটের সামনে পেরে উঠলেন না। গ্রেট প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে উইম্বলডনের মুকুট ধরে রাখলেন স্প্যানিশ তারকা।
সেন্টার কোর্টে রোববার পুরুষ এককের ফাইনালে প্রথম দুই সেটে দাঁড়াতেই পারেননি জোকোভিচ। সোয়া এক ঘণ্টার মধ্যেই প্রথম দুই সেট জিতে যান আলকারাস। তৃতীয় সেটে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবল চেষ্টা করেন রেকর্ড ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী। কিন্তু তার কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছিল না; সার্ভিসে দেখা গেল না ভয়ঙ্কর রূপ, ভালোমতো খেলতে পারলেন না ড্রপ শট, পারলেন না ফেরাতেও।
ফলাফল, গতবারের ফাইনালের হারের প্রতিশোধ নেওয়া হলো না ৩৭ বছর বয়সী জোকোভিচের। ৬-২, ৬-২, ৭-৬ (৭-৪) গেমে জিতে টানা দ্বিতীয়বার এখানে ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন আলকারাস।
জোকোভিচ আশায় ছিলেন ২৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে কিংবদন্তি মার্গারেট কোর্টকে ছাড়িয়ে টেনিসের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মেজর জয়ের রেকর্ড নিজের করে নেওয়ার। একই সঙ্গে উইম্বলডনের পুরুষ এককের রেকর্ড আটবারের চ্যাম্পিয়ন ফেদেরারের কীর্তি ছোঁয়ার। কিন্তু এদিন যে কোনোকিছুই ঠিকঠাক করতে পারলেন না তিনি।
প্রথম সেটের পর দ্বিতীয় সেটের প্রথম গেমেও তার সার্ভিস ব্রেক করেন আলকারাস। তৃতীয় সেটে অবশ্য লড়াই দারুণ জমে ওঠে। প্রথম ছয় গেমের দুটিতে একে অপরের সার্ভিস ব্রেক করার তুমুল সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি কেউ। অবশেষে ৪-৪ এর পর নবম গেমে গিয়ে সার্ভিস ব্রেক করেন আলাকারাস।
পরের সেটেই পাল্টা সার্ভিস ব্রেক করে ঘুরে দাঁড়ালেন জোকোভিচ। সেট গড়াল টাইব্রেকারে, সেখানে আর পারলেন না তিনি। গতি আর নিখুঁত পারফরম্যান্সে ছড়ি ঘুরিয়ে ক্যারিয়ারে চতুর্থ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন ২১ বছর বয়সী আলকারাস। গতবারের উইম্বলডন ছাড়া তার অন্য দুই গ্র্যান্ড স্ল্যাম সাফল্য হলো ২০২২ সালের ইউএস ওপেন ও গত মাসে জেতা ফরাসি ওপেন।
এবারের জয়ে রেকর্ডের পাতায়ও দাগ কেটেছেন আলকারাস। ইতিহাসের প্রথম স্প্যানিশ খেলোয়াড় হিসেবে টানা দুইবার উইম্বলডনে চ্যাম্পিয়ন হলেন তিনি, সব মিলিয়ে নবম। আর ১৯৬৮ সালের পর ষষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে একই পঞ্জিকাবর্ষে ফরাসি ওপেন ও উইম্বলডন জিতলেন তিনি।
টেনিসের উন্মুক্ত যুগে তৃতীয় সর্বকনিষ্ট খেলোয়াড় হিসেবে উইম্বলডনে মুকুট ধরে রাখার কীর্তি গড়লেন আলকারাস, ২১ বছর ৭০ দিন। আগের দুজন হলেন বরিস বেকার (১৮ বছর ২৭৭ দিন) ও বিয়ন বর্গ (২১ বছর ২৬ দিন)।
প্রতিপক্ষের এতসব কীর্তি গড়ার দিনেই জোকোভিচ হয়তো তার ক্যারিয়ারের শেষের শুরুটা দেখতে পাচ্ছেন। গত বছর যিনি জিতেছিলেন তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম, অন্যটিতেও উঠেছিলেন ফাইনালে, সেই তিনিই চলতি বছরে সাড়ে ছয় মাসে এখনও কোনো শিরোপার দেখা পাননি।
চোটের থাবার ফরাসি ওপেন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হওয়া, এরপর মাসখানেক আগে হাঁটুর অস্ত্রোপচার, তা থেকে সেরে উঠে কোর্টে ফিরলেও আসরজুড়েই নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি জোকোভিচ। আর ফাইনালে তো প্রতিপক্ষকে তেমন চ্যালেঞ্জই জানাতে পারলেন না।
ম্যাচ শেষে তাইতো প্রতিপক্ষের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিলেন তিনি। বললেন, জয়টা আলকারাসেরই প্রাপ্য।
“অবশ্যই এই ফল আমি চাইনি; তবে প্রথম দুই সেটে যে পর্যায়ের টেনিস খেলেছি, তা আমার মানের নয়। অবশ্য শীর্ষ মানের টেনিস খেলার জন্য কার্লোসের প্রশংসা প্রাপ্য।”
“এমনটা হওয়ার ছিল না, আমি ম্যাচটা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আজ সেই সত্যিকারের বিজয়ী। তাই তাকে অভিনন্দন…২১ বছর বয়সে তুমি যা করেছো, অবিশ্বাস্য। এগিয়ে যাও, তোমার কাছ থেকে আমরা আরও অনেক (দারুণ পারফরম্যান্স) দেখব।”