বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ জানিয়েছেন, কৃষ্ণা রানী সরকারের ভারতের চিকিৎসা নিতে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।
Published : 31 May 2024, 06:46 PM
মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী বাংলাদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কৃষ্ণা রানী সরকার। সাফের পর থেকেই পায়ের চোটে ভুগছেন এই ফরোয়ার্ড। দেশে এতদিন চিকিৎসা নিয়েছেন, কিন্তু চোট কাটিয়ে ওঠা হয়নি। চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের দলেও জায়গা হয়নি তার। সব মিলিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের দাবি, কৃষ্ণাকে ভারতের পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।
সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে বৃহস্পতিবার লম্বা পোস্ট দেন কৃষ্ণা। সেখানে চোট নিয়ে হতাশার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বাফুফের অবহেলার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও দেন তিনি।
“২০২২ এ সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার থেকে ইনজুরিতে পড়ি। প্রায় দেড় বছর হয়ে গেছে। পা আগে থেকে ভালো কিন্ত এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়ে উঠতে পারিনি। প্র্যাকটিস করলেই ব্যথা হয়। বাফুফের ফিজিও দিয়ে আমার ট্রিটমেন্ট চলছে। সবাই জানে ইনজুরিটা অনেক বিরল। ব্যথা নিয়েই প্র্যাকটিস করছি। দেশে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।”
“২০২৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফিজিও দেবাশিষ চৌধুরি স্যারকে (বিসিবির প্রধান চিকিৎসক) দেখিয়েছিলাম। উনি প্রায় আমাকে অনেকদিন দেখেন, যখন ব্যথা কমছিল না। স্যার বলেছিলেন অস্ট্রেলিয়া, ভারতে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করাতে। কিন্তু যখন আমি বাফুফেকে জানাই, উনারা বলেন আরও কিছুদিন দেশে ডাক্তার দেখাতে। আমি অনেকদিন তাদেরকে ভারতে যাওয়ার কথা বলছি। কিন্তু উনারা আমার কথায় কোনো গুরুত্ব দেয়নি। আজও পর্যন্ত ব্যথা নিয়ে প্র্যাকটিস করছি।”
সবশেষ এশিয়ান গেমসে বেঞ্চে কাটানো সময়ের প্রসঙ্গও কৃষ্ণা টেনেছেন ওই স্ট্যাটাসে। ক্যারিয়ারের এতদিনের পরিশ্রম ‘নিমিষেই শেষ’, লিখেছেন এমন হতাশার কথাও।
“চায়নাতে যখন এশিয়ান গেম খেলতে যাই, তিনটা ম্যাচ বেঞ্চে বসে কাটিয়েছি। ব্যাক টু ব্যাক দুইটা টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে গেলাম। একজন প্লেয়ার হিসেবে এটা মেনে নেওয়া খুব দুঃখজনক। কষ্ট একটাই, কখনও কোনো টিমমেট, প্লেয়ার বা কোচকে বলতে দেখলাম না, কৃষ্ণার ইনজুরি তাকে তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট করানো হোক। কারো কোনো মাথাব্যথাই নেই। ১০ বছরের পরিশ্রম এক নিমিষে শেষ।”
“অনেক প্লেয়ারকে দেখেছি এভাবে হারিয়ে যেতে। মনে হয় সেই দিনটা আর বেশি দিন নেই কৃষ্ণার জন্য। সবাই আমার জন্য আশীর্বাদ এবং দোয়া করবেন, যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ি। আবার আগের মতো মাঠে ফিরতে পারি। (বিঃ দ্রঃ মনের কিছু কথা শেয়ার করলাম। কারো কোনো খারাপ লাগে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)।”
কৃষ্ণার স্ট্যাটাস নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কিরণ জানান, একদিন আগেই বাফুফের সাধারণ সম্পদক ইমরান হোসেন তুষার কথা বলেছেন কৃষ্ণার সঙ্গে। সেখানে তার ভারতের যাওয়ার বন্দোবস্তো করার কথা হয়েছে।
“আমরা বলেছি, তুমি ভারতে যাও…তোমার যাওয়ার জন্য কত টাকা লাগতে পারে, সেটা তো আমরা জানি না। একটা রিকুইজিশন দাও। ডাক্তার দেখাও। কী লাগে, না লাগে, সেটা আমরা দেখব। এই কথা বলার পর সে কিভাবে এই স্ট্যাটাস দিতে পারে?”
“মাঝখানে আমাকে বলেছে, ‘আপা, আমি আমার বাবার সাথে যাব (ভারতে)। আপনি শুধু ভিসাটা করে দেন।’ আমি সেটাও হাসানকে বলেছি করে দাও। মাস দুয়েক আগে বলেছিল (এই কথা)। গতকাল ইমরান ওকে বলছে রিকুইজিশন দিতে, তারপরও এই স্ট্যাটাস।”
মেয়েরা বাফুফে ভবনের চতুর্থ তলার ক্যাম্পেই থাকেন। তাদের চিকিৎসায় বাফুফের কার্পণ্য থাকে না বলে দাবি কিরণের।
“অবশ্যই বাফুফে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। এর আগে আরও প্লেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে না? এখন ও যদি বলে অস্ট্রেলিয়া পাঠাতে হবে… দেবাশিষ বলেছে, অস্ট্রেলিয়া পাঠাতে হবে…সেটা তো সম্ভব নয়। ভারত পাশের দেশ, সেখানে পাঠাতে চেয়েছি আমরা। আমাদের ক্যাম্পে যারা থাকে, তাদের সমস্ত চিকিৎসার বিষয়টি আমরাই দেখি।”
“বাংলাদেশের যত ট্রিটমেন্ট আছে, ওর জন্য করা হয়েছে। ক্রিকেট বোর্ডের দেবাশিষ সাহেবকে দেখানো হয়েছে। সে বলেছে, বাংলাদেশে এই ট্রিটমেন্ট হবে না। ভারত, অস্ট্রেলিয়া বা সিঙ্গাপুর যেতে হবে। আমরা ওর ভারতে যাওয়ার ভিসার বিষয়টি অ্যারেঞ্জ করে দিয়েছি। এখন ভুল বোঝাবুঝি কিনা, সেটা ওকে জিজ্ঞাসা করেন। সে বাফুফের চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়। কেন সে এক কথা বলল, সেটা নিয়ে আমরা তাকে শোকজ নোটিশ দেব।”