প্যারিস অলিম্পিকস
‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিকসের এবারের আসরেও বাংলাদেশের অ্যাথলেটদের ঘিরে সে অর্থে বড় আশা বলতে গেলে নেই।
Published : 25 Jul 2024, 04:19 PM
‘অংশগ্রহণই মূল কথা’- প্যারিস অলিম্পিকস ঘিরে যথারীতি এবারও বাংলাদেশের মূলমন্ত্র এই প্রচলিত কথাটি। তবে স্বপ্নের আঁকিবুকি যে একেবারেই নেই, তাও নয়। পর্দা ওঠার অপেক্ষায় থাকা প্যারিস অলিম্পিকসের মার্চ পাস্টে দেশের লাল-সবুজ পতাকা যার হাতে থাকবে, সেই আর্চার মোহাম্মদ সাগর ইসলামের দিকে বিশেষ করে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিকসের এবারের আসরের উদ্বোধন শুক্রবার। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের পাঁচ অ্যাথলেট। সাগরসহ স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান, শুটার রবিউল ইসলাম, দুই সাঁতারু সোনিয়া আক্তার ও সামিউল ইসলাম রাফি।
কিছুটা আশা আছে শুটার রবিউলকে ঘিরেও। ‘চমক’ দেখাতে পারেন লন্ডন প্রবাসী স্প্রিন্টার ইমরানুর। সাঁতারে প্রত্যাশার পারদ চড়ছে না, সেখানে ব্যক্তিগত টাইমিংয়ে উন্নতিই মূল চাওয়া।
গত জুনের মাঝামাঝি তুরস্কের আন্তালিয়াতে ২০২৪ ওয়ার্ল্ড কোয়ালিফিকেশন টুর্নামেন্ট আর্চারির পুরুষ রিকার্ভ এককের সেমি-ফাইনালে উঠে সরাসরি প্যারিস অলিম্পিকসে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন সাগর। পাঁচ জনের মধ্যে একমাত্র এই ১৮ বছর বয়সী তরুণই সরাসরি খেলছেন এবার।
তুরস্কের ওই আসরে দারুণ প্রাপ্তির হাতছানি ছিল কোয়ার্টার-ফাইনালে ৬৬০ স্কোর করা সাগরের সামনে, কিন্তু পারেননি তিনি। ফাইনালে হেরে পেয়েছিলেন রুপা। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এটিই ছিল সাগরের ব্যক্তিগত ইভেন্টে প্রথম পদক। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এত দূর আসা সাগর আন্তালিয়ার সুর প্যারিসে টেনে নিতে পারেন কিনা, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
দেশের ট্র্যাকে যতটা ঝড় তুলেছেন ইমরানুর, তেমনটা পারেননি দেশের বাইরে। জাতীয় অ্যাথলেটিকসে ১০ দশমিক ৩৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে দ্রুততম মানবের খেতাব তিনি ধরে রেখেছেন বটে, কিন্তু সবশেষ আসরে ব্যক্তিগত সেরা টাইমিং করতে পারেননি, এ ইভেন্টে তার সেরা টাইমিং ১০ দশমিক ১১ সেকেন্ড।
এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকসে ৬০ মিটারে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সোনা জেতা এই অ্যাথলেট মুকুট ধরে রাখতে পারেননি গত আসরে। ইরানের রাজধানী তেহরানে হওয়া প্রতিযোগিতায় ৬ দশমিক ৬৭ সেকেন্ড নিয়ে চতুর্থ হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া অন্য এক মহাভারও আছে ইমরানুরের কাঁধে!
এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৭ জন অ্যাথলেট অলিম্পিকসের ট্র্যাকে দৌড়েছেন, কিন্তু প্রথম রাউন্ডের বৈতরণী পার হতে পারেননি কেউই। মর্যাদার এই ইভেন্টে সেই দেয়াল ইমরানুর পার হতে পারলে সেটাই হবে অনেক বড় প্রাপ্তি।
দুই সাঁতারু সামিউল ও সোনিয়ার প্রাপ্তির হিসেব-নিকেশ তাদের নিজেদের কাছেই পরিষ্কার। বাস্তবতার শক্ত জমিনে পা রেখে সেরা টাইমিং করতে পারাই অর্জন মানছেন তারা। সামিউলের ব্যক্তিগত ইভেন্ট ব্যাকস্ট্রোক, এই ইভেন্টে তিনি ঘরোয়াতে পেয়েছেন সাফল্য, কিন্তু প্যারিসের সুইমিংপুলে নামবেন ফ্রিস্টাইল ইভেন্টে!
গত জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যাকস্ট্রোকের তিন ইভেন্টে রেকর্ড গড়ে সোনা জেতা সামিউল গত পাঁচ মাস থাইল্যান্ডে প্রস্তুতি নিয়েছেন ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলের জন্য। সেখানে ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ৫৩ দশমিক ১৩ সেকেন্ড টাইমিং করেছিলেন, প্যারিসে এই টাইমিং ছাপিয়ে যাওয়াই মূল লক্ষ্য তার।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাঁতারু সোনিয়া গত বছর হাংজু এশিয়ান গেমসে ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ৩০ দশমিক ১১ সেকেন্ড টাইমিং করেছিলেন, এটিই তার ব্যক্তিগত সেরা। ওই আসরে তিনি হয়েছিলেন ২৭তম, বোঝাই যাচ্ছে, অলিম্পিকের বড় মঞ্চে ২৬ বছর বয়সী এই সাঁতারুর অংশ নেওয়াই বড় কথা!
বড় প্রত্যাশা নেই শুটার রবিউলকে ঘিরেও। শুটিংয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্জন কমনওয়েলথ গেমসে; ১৯৯০ সালে অকল্যান্ডের আসরে কদিন আগে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো আতিকুর রহমান ও আব্দুর সাত্তার নিনির হাত ধরে সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ, এরপর ২০০২ ম্যানচেস্টারের আসরে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে আসিফ হোসেন খান জিতেছিলেন সোনা, আব্দুল্লাহ হেল বাকি ও শাকিল আহমেদ পেয়েছিলেন রুপা, কিন্তু অলিম্পিকে বাংলাদেশের কোন শুটার আজ অবধি পদকের লড়াইয়ে উঠতে পারেনি।
১০ মিটার এয়ার রাইফেলের ‘সেরা আটে’ ওঠার চ্যালেঞ্জ তাই রবিউলের সামনে। গত জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়াতে হওয়া প্রতিযোগিতায় মাত্র ০ দশমিক ৩ পয়েন্টের জন্য সরাসরি অলিম্পিকসে খেলার টিকেট বঞ্চিত হয়েছিলেন রবিউল, ওই না পারাই তার জ্বালানি।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অ্যাথলেটদের সামনে চ্যালেঞ্জ মূলত নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়া। বাস্তবতা যে এমনই!