‘আদিম ব্ল্যাক হোল’ বা ‘পিবিএইচ’ মূলত বিভিন্ন এমন অনুমানমূলক বস্তু, যার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় মহাবিশ্বের প্রাথমিক সময়ে।
Published : 06 May 2024, 06:32 PM
মহাবিশ্বে বিভিন্ন এমন অতি উজ্জ্বল বা ‘আল্ট্রালাইট’ ব্ল্যাক হোল থাকার সম্ভাবনা আছে, যেগুলো সহজে মরে যেতে পারে না, এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
সরাসরি ডার্ক ম্যাটারের বিভিন্ন কণা শনাক্ত করার আগ পর্যন্ত বা জোতির্বিদ্যার প্রচলিত ধারণা থেকে ডার্ক ম্যাটার একেবারে বাদ দেওয়ার আগ পর্যন্ত সেরা উপায় হতে পারে এর বিভিন্ন জবাব নিয়ে খোঁজ অব্যাহত রাখা।
নতুন এ গবেষণায় তাত্ত্বিকভাবে বিভিন্ন এমন আদিম ব্ল্যাক হোলের দিকে মনযোগ দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর বেশ কিছু আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
আদিম বা প্রিমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোল (পিবিএইচ) মূলত বিভিন্ন এমন অনুমানমূলক বস্তু, যার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় মহাবিশ্বের প্রাথমিক সময়ে।
গবেষণার তথ্য অনুসারে, এইসব ব্ল্যাক হোল মূলত পদার্থের ঘনত্ব ও স্পেসটাইমে বিভিন্ন বস্তুর ‘মাইক্রো-ফ্লাকচুয়েশন’ থেকে পর্বতের ভরওয়ালা বালির কণা আকারের ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়।
এখন পর্যন্ত কোনও আদিম ব্ল্যাক হোল শনাক্ত করা না গেলেও ধারণা করা হয়, এদের মধ্যে ডার্ক ম্যাটারের সব ধরনের প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য আছে। উদাহরণ হিসেবে, এদের থেকে আলো বের না হওয়া ও ছায়াপথে এদের দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর ক্ষমতা। তবে, এদের অস্তিত্ব যদি আদৌ থেকে থাকে, তবে এতে ডার্ক ম্যাটারের অনেক ব্যাখ্যাই খুঁজে পাওয়া যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি সাইট ইউনিভার্স টুডে।
তবে সমস্যা হল, আদিম ব্ল্যাক হোল হতে পারে, এমন বেশিরভাগ বস্তুই পর্যবেক্ষণের পর বাতিল হয়ে গেছে।
উদাহরণ হিসেবে, ডার্ক ম্যাটারের সম্ভাব্য অস্তিত্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে, এই ধরনের মহাকর্ষীয় বস্তুর মধ্যে ডার্ক ম্যাটারের মাত্রা এতটাই বেশি থাকতে হবে যে, এরা প্রায়শই মানুষের দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকা বিভিন্ন তারা অতিক্রম করবে।
আর এতে এমন ‘মাইক্রোলেনসিং ফ্লেয়ার’ তৈরি হবে, যা আমাদের নিয়মিতই পর্যবেক্ষণ করা উচিৎ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইউনিভার্স টুডে।
এ ধরনের ঘটনা শনাক্ত করতে রাতের আকাশে বেশ কয়েকবার সমীক্ষা চালানো হলেও তাতে কোনও সুফল মেলেনি। তাই সাম্প্রতিক দিনগুলোয় ‘পিবিএইচ’-এ ডার্ক ম্যাটার থাকার ধারণাটিও তেমন জনপ্রিয় নয়।
তবে, নতুন এ গবেষণায় কিছুটা ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বণ করা হয়েছে। গতানুগতিক আদিম ব্ল্যাক হোল ঘেঁটে দেখার বদলে এতে বিবেচিত হয়েছে ‘আল্ট্রালাইট’ ব্ল্যাক হোল। এদের সম্ভাব্য ভর খুবই কম। আর এগুলো এতটাই ছোট যে, এগুলোতে ‘হকিং রেডিয়েশন’ ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
তাত্ত্বিকভাবে, হকিং রেডিয়েশন হল এমন কালো রঙের বিকিরণ, যা ব্ল্যাক হোলের দিগন্তের বাইরে ঘটে থাকে।
এর ক্ষয়ের হার, একটি গোটা ব্ল্যাক হোলের আকারের সমানুপাতিক। তাই এ ধরনের অতি উজ্জ্বল ব্ল্যাকহোলের জীবন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিকিরণ অব্যাহত থাকতে পারে।
যেহেতু কোয়ান্টাম মহাকর্ষের সম্পূর্ণ মডেল এখনও তৈরি হয়নি, তাই এ ধরনের আল্ট্রালাইট ব্ল্যাক হোলের পরিণতি কী, তা এখনও অজানা। আর সে বিষয়টিই ঘেঁটে দেখা হয়েছে এ গবেষণায়।
‘ন্যাশনাল রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি অবজারভেটরি’র একজন জ্যোতির্পদার্থবিদ ও বিজ্ঞান লেখক ব্রায়ান কোবারলিন বলছেন, এর সম্ভাব্য ফলাফল তিনটি।
প্রথমটি হল, ব্ল্যাক হোল পুরোপুরি বিকিরণ করে বিভিন্ন উচ্চ ক্ষমতাওয়ালা কণার সংক্ষিপ্ত ঝলক দেখিয়ে শেষ হয়ে যায়।
দ্বিতীয়টি হল, কিছু প্রক্রিয়া ব্লাক হোলের সম্পূর্ণ বাষ্পীভবনে বাধা দেবে ও একে এক ধরনের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে যাবে।
এদিকে, তৃতীয় বিকল্পটির ফলাফল অনেকটা দ্বিতীয়টির মতোই। তবে এক্ষেত্রে, ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থার কারণে ব্ল্যাক হোলের দিগন্ত অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। আর এতে এমন ঘন ভর সৃষ্টি হবে, যা ‘নেকেড সিঙ্গুলারিটি’ নামে পরিচিত।
তিনি আরও বলেন, গবেষণাটির শেষ দুটি ফলাফলের ক্ষেত্রে, বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে বৈদ্যুতিক চার্জ থাকার সম্ভাবনা আছে।