“উপাচার্যের বক্তব্যের অডিও ও তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে আছে। আমি উপাচার্যের বক্তব্য হুবহু লিখেছি “
Published : 03 Aug 2023, 06:46 PM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে প্রতিবেদন প্রকাশের অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিষয়টি জানানো হয়।
সাময়িক বহিষ্কার হওয়া মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তিনি একটি দৈনিক পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। তার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আফজলনগর গ্রামে।
মনোয়ার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির অর্থ সম্পাদক পদে রয়েছেন।
অফিস আদেশে বলা হয়, “গত ৩১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নবীনবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের বক্তব্যকে বিকৃত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন ও সুপারিশে ২ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের সভায় অনুমোদিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হল।”
এ বিষয়ে ইকবাল মনোয়ার বলেন, “উপাচার্যের বক্তব্যের অডিও ও তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে আছে। আমি উপাচার্যের বক্তব্য হুবহু লিখেছি। কিন্তু কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বুধবার রাত আটটায় আমাকে রেজিস্ট্রার ভবনে ডাকা হয়। এরপর সই নিয়ে আমাকে অফিস আদেশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। সাংবাদিকতার কারণে আমাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হল। তবে আমি কোনো অন্যায় বা অপসাংবাদিকতা করিনি।”
জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন জানান, এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রধান সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী এবং সদস্যসচিব হিসেবে আছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরী।
উপাচার্য বলেন, “এটি অপসাংবাদিকতা। আমি তো উদাহরণ হিসেবে থিউরি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছি। সেখানে এভাবে তো বলিনি। আমার বক্তব্য খণ্ডিত এবং বিকৃত করে প্রকাশ করা হয়েছে। ওইদিন আমি শিক্ষার্থীদের ক্রিটিকাল থিংকিংয়ের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উদাহরণ হিসেবে বলেছি, প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে দুর্নীতি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। এখন কোনো শিক্ষার্থী ভাবতে পারেন- এ ধারণা সঠিক কিনা। যেমন দুর্নীতির মাধ্যমে মানুষ আয় করলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়ে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।”
উদাহরণ হিসেবে শিক্ষার্থীদের বলেছি, “যেমন- তুমি দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করে পদ্মার পাড়ে গিয়ে যখন ইলিশ মাছ খাও তখন এই এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। সুতরাং অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। প্রচলিত একটি ধারণার বিপরীতে নতুন ধারণা তখনই তৈরি হয় যখন তুমি 'ক্রিটিকাল থিংকিং' করতে পারো। সুতরাং, যে কোনো নতুন ধারণা বা তত্ত্বের জন্য 'ক্রিটিকাল থিংকিং' গুরুত্বপূর্ণ।
“এ বক্তব্যে নিয়ে যেন কারও ভুল ধারণা তৈরি না হয় সেজন্য সেদিন উদাহরণ শেষে শিক্ষার্থীদের এটাও বলেছি, এর মানে আমি কিন্তু দুর্নীতির পক্ষে বলছি না। বরং বোঝার জন্য একটি উদাহরণ দিলাম। আমি নিজে সব সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। আমি নিজেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধ করেছি।”
এদিকে, মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ারকে সাময়িক বহিষ্কারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে মাবনবন্ধন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। এ সময় সকলে ওই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। মাবনবন্ধনে বক্তারা বলেন, ইকবাল মনোয়ার অপসাংবাদিকতা করেনি। অন্যায়ভাবে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমরা এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
গত ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নবীনবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন।
সেখানে তার দেওয়া বক্তব্য উদ্ধৃত করে যায়যায়দিন পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘দুর্নীতি হচ্ছে তাই বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে: কুবি উপাচার্য’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
সেখানে উপাচার্যকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “অনেকেই বলে দেশে দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। কিন্তু আমি বলব উল্টো কথা। দেশে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই উন্নতি হচ্ছে। এটা নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন কথা বলতে পারে। যে ঘুষ খায়, সে পদ্মাপাড়ে যায় ইলিশ খেতে। এতে পদ্মাপাড়ের গরিব মানুষেরা ধনী হচ্ছে। দুর্নীতি এভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তাই অর্থনীতিবিদগণ দুর্নীতি নিয়ে কখনো কোনো বিরূপ মন্তব্য করে না। তবে যারা পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে কাজ করে তারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে থাকে। নৈতিকতার জায়গায়ও এটি প্রশ্নবিদ্ধ। তবে অর্থনীতির জায়গা থেকে যদি বলি, দুর্নীতি কখনোই উন্নয়নের জন্য বাধা নয়।”