সম্প্রতি যেসব অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামবে সে এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যাবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় সরকার।
Published : 22 Jan 2024, 11:38 AM
তাপমাত্রা কমে যাওয়া জেলাগুলোর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি যেসব অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামবে সেসব এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যাবে বলে সিদ্ধান্ত দেয় সরকার।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের আলোকে সোমবার উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ বেশকিছু জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা আসে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুড়িগ্রাম
গত বৃহস্পতিবার থেকে জেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় সরকারি সিদ্ধান্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ।
তিনি বলেন, শৈত্য প্রবাহের কারণে জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বহাল থাকবে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, সোমবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা আরও দুএকদিন বিরাজ করবে।
লালমনিরহাট
শৈত্য প্রবাহের কারণে জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, লালমনিরহাটে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে সোম ও মঙ্গলবার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার সকাল ৯টায় লালমনিরহাট জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার।
লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী বলেন, “শৈত্যপ্রবাহ চলমান থাকায় লালমনিরহাট জেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
জয়পুরহাট
জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী জানান, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
নওগাঁর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, সোমবার সকাল ৯টায় জয়পুরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় সোমবার থেকে দুদিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জেছের আলী জানান, পরিস্থিতির উন্নতি হলে বুধবার থেকে যথারীতি পাঠদান শুরু হবে।
বগুড়া
শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাওয়ায় বগুড়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে।
সোমবার সকাল ৯টায় জেলায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে বগুড়া আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক শাহ আলম জানান।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী জানান, তীব্র শীতের কারণে জেলার মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার বিষয়টি সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চৌধুরী জানান, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় জেলার প্রাথমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বগুড়ার প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “ওই দুই স্তরের শিক্ষা অফিসাররা তাদের ডিডির সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছেন।”
পাবনা
একই পরিস্থিতিতে পাবনার সব উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠদান কার্যক্রম একদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
রোববার মধ্যরাতে জেলা প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা আসে।
বিজ্ঞপ্তি দুটিতে বলা হয়েছে, পাবনার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসার কারণে সোমবার একদিনের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল বন্ধ রাখতে উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হল।
গত কয়েকদিন ধরেই ঈশ্বরদী উপজেলাসহ পাবনার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রয়েছে। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস জানায়, গত শুক্রবার জেলায় গড় তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও শনিবার তা কমে ১০.২ ডিগ্রিতে দাঁড়ায়। গত রোববার তা আরো কমে হয়েছিল ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সোমবারের রেকর্ড করা তাপমাত্রার ব্যাপারে ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন বলেন, সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টার রেকর্ডেও তাপমাত্রা একই রয়েছে।
রঞ্জন আরো বলেন, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এ সপ্তাহে শীতের প্রকোপ আরো বাড়তে পারে।
এদিকে, মধ্যরাতের নির্দেশনার বিষয়টি যথা সময়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে না পৌঁছানোর ফলে কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে স্কুলে এসে ফিরে যেতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাহফুজা সুলতানা বলেন, “নির্দেশনা অনেক দেরিতে আসার ফলে অনেককেই জানানো সম্ভব নাও হতে পারে। তবে উপজেলা অফিসারদের সকল প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করতে নির্দেশনা দেওয়া ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “তাপমাত্রা আরো কমলে বা একই থাকলে আগামীকালও (মঙ্গলবার) স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশনা আসতে পারে।”
মাদারীপুর
শীতে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় জেলার সবগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মাদারীপুরের সহকারী আবহাওয়া কর্মকর্তা আবদুর রহিম সান্টু বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল বলেন, “মাদারীপুর আবহাওয়া অফিস থেকে সকালে আমরা জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বার্তা পেয়েছি। সরকারি নির্দেশনা রয়েছে, ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা থাকলে পাঠদান বন্ধ রাখা যাবে। তাই শিশুদের কথা বিবেচনা করে আমরা সোমবার জেলায় সব প্রাথমিকের পাঠদান বন্ধ রেখেছি। পাঠদান বন্ধ থাকলেও শিক্ষকরা সবাই প্রতিষ্ঠানে আছেন।”
এদিকে, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামায় মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ বাহারের নম্বরে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে মাদারীপুরের শহীদ বাচ্চু উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাশেদ কামাল জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা দুপুর ১টায় বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ করেন।
নীলফামারী:
সোমবার নীলফামারীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন পরিস্থিতিতে মাধ্যমিকে দুই দিন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন দিনের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে বলে জানান নীলফামারী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান।
পাঠদান বন্ধের খবর আগে না পাওয়ায় তীব্র শীত উপেক্ষা করে অনেক শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে যেতে দেখা গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় জেলার উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে স্কুলে যাওয়া খুবই কষ্টকর।
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে জেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয় দু-দিন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন দিনের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পাঠদান বন্ধের ঘোষণাটি সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের জানানো হয়েছে বলে জানান মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান।
সোমবার বেলা ১১টার পর বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে পাঠদান বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। তবে কিছু বিদ্যালয়ে মর্নিং শিফট চালু ছিল। অভিভাবকদের অভিযোগ, পাঠদান বন্ধের খবর আগে জানানো হলে শীতে কষ্ট করে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যেতে হত না।
নীলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নলনী কান্ত রায় বলেন, “সকাল ৯টায় মর্নিং সিফটের ক্লাস শুরু হলে মোবাইল ফোনে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পাঠ দান বন্ধের বার্তা দেন। তাৎক্ষণিক শিক্ষার্থীদের ছুটি দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে ডে শিফটের শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।”
শাহিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, “সকাল পৌনে ৯টার দিকে বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখার বার্তা পাঠান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। ওই বার্তা পেয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করে নোটিস দেওয়া হয়েছে।
“তবে আগে ম্যাসেজ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে চলে এসেছে। বন্ধের নোটিশ পাওয়ার পর তারা বাড়ি ফিরে গেছে।”
সিরাজগঞ্জ:
সিরাজগঞ্জে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসায় জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে প্রাথমিকের এক হাজার ৬৭১টি এবং মাধ্যমিকের ৫৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয় বলে জানান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা।
শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল জানান, সোমবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান জানান, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে আসায় জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম চলমান থাকবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আফসার আলী বলেন, মাধ্যমিক স্তরের (দাখিল মাদ্রাসাসহ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।