ওই সাংবাদিক জাইকার কয়েকটি প্রকল্পের ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ের তথ্য চেয়ে ইউএনও কার্যালয়ে আবেদন করেন বলে জানায় তার পরিবার।
Published : 08 Mar 2024, 09:28 PM
শেরপুরের নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিনের কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করার ঘটনায় এক সাংবাদিককে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
৫ মার্চ নকলা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম মো. শিহাবুল আরিফ তাকে এ দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
দণ্ড পাওয়া শফিউজ্জামান রানা দৈনিক দেশ রূপান্তরের নকলা উপজেলা সংবাদদাতা।
রানার স্ত্রী বন্যা আক্তারের অভিযোগ, সম্প্রতি জাইকার কয়েকটি প্রকল্পের ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ের তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে ইউএনও কার্যালয়ে আবেদন করেন রানা। এসব প্রকল্পের তথ্য চাওয়ায় তার ওপর ক্ষুব্ধ হন ইউএনও।
বন্যা আক্তার বলেন, “৫ মার্চ রানা তার ১৫ বছর বয়সী ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এডিপি প্রকল্পের কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ক্রয়সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে ইউএনও কার্যালয়ে আবেদন করেন। আবেদনটি কার্যালয়ের কর্মচারী গোপনীয় সহকারী (সিএ) শীলার কাছে দিয়ে রিসিভড কপি চান রানা।
“শীলা তাকে অপেক্ষা করতে বলেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর আবার শীলার কাছে রিসিভড কপি চান রানা। তখন শীলা বলেন, ‘ইউএনওকে ছাড়া কপি দেওয়া যাবে না।’ পরে রানা বিষয়টি জেলা প্রশাসককে মোবাইল ফোনে জানান। এতে ইউএনও ক্ষিপ্ত হন।”
এক পর্যায়ে রানাকে ডেকে ‘ভুয়া সাংবাদিক’ এবং তার ছেলেকে ‘বাপের মত চোর সাংবাদিক হবি’ এমন উক্তি করেন বলে অভিযোগ বন্যার।
তিনি বলেন, ইউএনও এবং শীলা আক্তারের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে রানাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে নকলা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিহাবুল আরিফ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ছয় মাসের জেল দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বলেন, “সাংবাদিক রানা তথ্য চেয়ে আবেদন করতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি তখনই তথ্য চান। তাকে বলি, এখন আমার মিটিং আছে। তথ্য দেওয়ার জন্য আমার হাতে ২০ দিন সময় আছে।
“কিন্তু রানা সিএ শীলার কাছে থাকা ওই তথ্যের ফাইল টানাটানি এবং অসদাচরণ করেছেন। এতে অফিসের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। তাই সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে বলেছি।”
এ ঘটনায় বিভিন্ন সাংবাদিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা নিন্দা জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ উজ্জ্বল বলেন, “ওই সাংবাদিক যদি কোনো দোষ করে থাকেন, তাহলে লোকাল সাংবাদিক নেতারা রয়েছেন, প্রেস কাউন্সিল আছে সেখানে বিচার দিতে পারতেন ইউএনও।
“কিন্তু নকলা উপজেলা প্রশাসন তা-না করে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাকে সাজা দিয়ে দিল; যা মোটেও ঠিক হয়নি।”
সাংবাদিক ইউনিয়ন শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি মানিক দত্ত বলেন, তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিককে ছয় মাসের সাজা, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। জেলা প্রেসক্লাবের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিক রানাকে ছাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গাঙচিল সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদ শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি কবি রফিক মজিদ বলেন, “সাংবাদিক যদি কোনো অন্যায় করে থাকে, তাহলে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনে বিচার দেওয়া যেত। কিন্তু তা-না করে সাজা দেওয়া হয়; যা সাংবাদিকদের জন্য একটা অশনিসংকেত এবং স্বাধীন সাংবাদিকতায় হুমকি।”