Published : 25 Apr 2024, 11:17 PM
মৌলভীবাজারে প্রচণ্ড গরমে চা গাছে আসছে না নতুন কুঁড়ি; কোথাও কোথাও তীব্র তাপমাত্রায় পুড়ে যাচ্ছে পাতা।
কোথাও চায়ের পাতায় ভাঁজ ধরে ‘বাঞ্জি দশা’য় পড়েছে; আবার কোথাও ধরেছে ‘লাল রোগ’। এতে চা উৎপাদন শুরুর মৌসুমেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কারণ, এখন দু-হাত ভরে চা পাতা তুলে আনার সময়; সেখানে শ্রমিকরা বাগান নির্ধারিত পাতাই (প্রতিদিন কমপক্ষে ২৪ কেজি) জমা করতে পারছেন না। ফলে এটা তাদের ‘হাজিরা’ বা সাপ্তাহিক বেতনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
দাবদাহের এই প্রভাব লেগেছে জেলার ৯২টি চা বাগানে। এ অবস্থা থেকে চা বাগানকে রক্ষা করতে শ্রমিক, বাগান মালিক এবং চা বিজ্ঞানীরা প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন চা বাগানে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রচণ্ড রোদে শ্রমিকরা পাতা তুলছেন। অনেকেই ঘামে ভিজে গেছেন। তবে যেসব সেকশনে সেড টি বা ছায়া বৃক্ষ কম; সেসব সেকশনে গাছের পাতায় ধরেছে ভাঁজ। যাকে চায়ের ‘বাঞ্জি দশা’ বলা হয়।
কোথাও দেখা যায়, রেড স্পাইডারের আক্রমণে গাছে ধরেছে ‘লাল রোগ’। আবার কোথাও গাছের পাতা মরে ঝরে যাচ্ছে।
গত ডিসেম্বরে প্রুনিং করা কয়েকটি সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, গাছে এখন ‘সুট’ (নতুন কুঁড়ি) আসেনি।
চা শ্রমিক জয়ন্তী তাঁতী তার অভিজ্ঞতায় বলছিলেন, “বৃষ্টি না হলে এ গাছে ‘সুট’ আসবে না।”
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুরভুরিয়া চা বাগানের একটি সেকশনে গিয়ে দেখা যায়, চা গাছে ‘বাঞ্জি দশা’ যাতে না ধরে সেজন্য ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
ওই বাগানের শ্রমিক বাসন্তী বাউরী বলেন, “যে সময় নতুন পাতায় হাত ভরে যাওয়ার কথা এই সময়ে নতুন সুটের (কুঁড়ি) জন্য ‘বাঞ্জি দশা’য় আক্রান্ত পাতা তুলে ফেলতে হচ্ছে। অন্যদিকে পাতা কম থাকায় প্রতিদিনের ২৪ কেজি পাতাও উঠাতে পারছি না।”
ষাটোর্ধ্ব চা শ্রমিক অলকা বালা জানান, প্রচণ্ড রোদে শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে এখন পাতা পান ১০ থেকে ১৫ কেজি। আর পাতা চয়নের পাশাপাশি গাছ রক্ষায় সার, পানি দেওয়াসহ তাদের করতে হচ্ছে প্রতিরক্ষামূলক কাজও।
তিনি জানান, ২৪ কেজির নিরিখে তাদের প্রতিদিনের বেতন হয়। অনেকেই ২৪ কেজির উপরে পাতা তুলেন। উপরে উঠালে অতিরিক্ত টাকা পান। মূল হাজিরার সঙ্গে এটা সংযুক্ত করে তারা কোনো রকমে সংসার চালান। তবে এখন ২০ কেজির উপরে কেউ পাতা উঠাতে পারেন না।
বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট অঞ্চলের ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম মো. শিবলী বলেন, “চায়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উত্তম। তবে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি পর্যন্ত চা গাছ তাপ সহ্য করতে পারে। এর উপরে গেলেই খরায় পড়বে চা। তবে চা বাগানে সেড টির কারণে ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত সহনীয়।”
শ্রীমঙ্গল জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা জানান, বর্তমানে মৌলভীবাজারের তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ৩৫ ডিগ্রির উপরে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে এ শিল্প। এ থেকে বাঁচার প্রধান পথ বৃষ্টি। বিকল্প হিসেবে নতুন গাছকে বাঁচাতে পানি দিতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় চায়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে সেচের পাশাপাশি প্রতি চার গাছের মধ্যে মাটি গর্ত করে পচা গোবরের সঙ্গে কিছু টিএসপি মিশিয়ে আবার মাটিতে মিলিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন।
তিনি জানান, প্রতিদিনই চা গবেষণা কেন্দ্রের সদস্যরা বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে তা বাস্তবায়িত করে সফলতাও পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. রফিকুল হক বলেন, “বাংলাদেশ যেহেতু একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ; সেহেতু খরা মৌসুমের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে।
সহসা চায়ের জন্য পরিমিত বৃষ্টি না পেলে দেখা দিতে পারে উৎপাদন ঘাটতি। তবে এটি মোকাবেলায় ছায়া বৃক্ষের ব্যবস্থাপনাও ঠিক রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।